শিক্ষার্থীদের পাশে ডাকসু ও ছাত্র অধিকার পরিষদ
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ৯ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি নুরুল হক নুরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম- করোনাকালে বাকি শিক্ষার্থীরা কেমন আছেন, কী করছেন?
নুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ভালোই আছেন। তবে তাদের কেউ কেউ একটু আর্থিক টানাপড়েনে পড়ে গেছেন। অনেকে আছেন যারা টিউশনি ও খণ্ডকালীন কাজ করে চলতেন, পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করতেন, তাদের জন্য খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে সাধ্যমত আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
করোনা সংকটে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কী করছে ডাকসু? জানতে চাইলে নুর বলেন, ‘প্রথমদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ডাকসুর উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান বিতরণ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলেও আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি যে, কারও করোনা উপসর্গ দেখা দিলে যেন আমিসহ ডাকসু প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় আমরা তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’
‘আমাদের সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন অনুষ্ঠানের জন্য ডাকসু ফান্ড থেকে দুই লাখ টাকা উঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া, ডাকসু প্রতিনিধিদের ব্যক্তি উদ্যোগে একটি জরুরি তহবিল গঠন করেছি। সেখান থেকে আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীকে অর্থ সহায়তা দিয়েছি। বেশিরভাগকেই দুই হাজার টাকা করে, তবে প্রয়োজন বুঝে কাউকে তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। অনুদান সংগ্রহের জন্য আমরা অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কাছ থেকেও সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি’, বলেন নুর।
ডাকসু ভিপি বলেন, ‘প্রথমেই আমরা বেশি সংকটে পড়া ১০০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছি। পরে শারীরিক প্রতিবন্ধী ৫০ জন এবং পরের ধাপে আরও ১০০ জন শিক্ষার্থীকে সাহায্য করেছি। কাউকে যেন একাধিকবার সহায়তা না দেওয়া হয় এবং বেশি সংকটে থাকা কেউ যেন বাদ না পড়েন সে বিষয়টিকে সমন্বয় করেই কাজ করছি আমরা।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ডাকসুকে সহায়তার পাশাপাশি নিজেদের মতো কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার শিক্ষার্থীকে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ছাত্র ও শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা। সেখানেই ছাত্রলীগের এক সদস্য প্রতিদিন খাবার রান্না করে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থানরতদের খাওয়াচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবে আইইডিসিআর থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার কাজ করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা’, যোগ করেন তিনি।
করোনা পরবর্তী সময়ে হলগুলোতে ‘গণরুম’ থাকবে না এবং অছাত্ররা অবস্থান করতে পারবেন না, সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার কি মনে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবে?
নুর বলেন, ‘না পারার তো কোনো কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কমিটি থেকে এই সিদ্ধান্ত এসেছে। এতকাল পরে হলেও কর্তৃপক্ষের এমন সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং একই সঙ্গে প্রত্যাশা করি তা বাস্তবায়নের। আমার মনে হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা বিবেচনা করে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও এক্ষেত্রে সহমত পোষণ করবে। গণরুম প্রথার বিলুপ্তি এবং অছাত্র উচ্ছেদে কারও দ্বিমতের কোনো যৌক্তিক কারণ দেখি না।’
Comments