‘ঘুষের প্রশ্নটা কীভাবে এখানে আসে?’
করোনাভাইরাস নির্ণায়ক ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট র্যাপিড টেস্টিং কিট’ উদ্ভাবন করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। অভিযোগ আছে, কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার জন্য সেই কিট গ্রহণ করছে না ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
আজ সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ডিসকারেজ করছি না। উনারা একটা জিনিস আবিষ্কার করেছেন, একটা ইনোভেশন, সেই ইনোভেশন করলে সেটিকে ভেলিডেশন করতে হয়। অর্থাৎ সত্যি কী না উনি যেটা ক্লেইম করছেন, সেটার সেনসিটিভিটি কত, স্পেসিফিকেসিটি কত, এই জিনিসটা আমাদের ভেরিফাই করতে হবে। তো তার জন্য আমাদের নির্ধারিত একটা পাথওয়ে আছে, সেটা তাড়াতাড়ি ফলো করতে হবে। তো উনারা যখন বললেন যে, গত ২৫ তারিখ উনারা হ্যান্ডওভারের একটা অনুষ্ঠান করেছিলেন। সেখানে উনারা আমাদের বলেছিলেন যাওয়ার জন্য। আমরা বলেছিলাম, এই যে কিটটা, এটা তো অ্যাপ্রুভড কিট না, এটা হচ্ছে ট্রায়াল পর্যায়ের একটা কিট, এটা তো হ্যান্ডওভার হয় না। এটি যখন পুরোপুরিভাবে অ্যাপ্রুভড হবে, তখন আপনারা বড় করে অনুষ্ঠান করেন, জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান করেন, কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু এটা তো হয় না। সেজন্য আমরা সেখানে যাই নাই এবং তাদের আমরা নিষেধ করেছিলাম এটি না করার জন্য। কিন্তু তারপরেও উনারা সে অনুষ্ঠানটা করেন এবং অনুষ্ঠানের পরে যে প্রেস ব্রিফিং হয়, সেখানে ওষুধ প্রশাসন, এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে উনি অনেক ধরণের কটূক্তি করেছেন, বিদ্রূপাত্মক কথাবার্তা বলেছেন, যেটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে রেগুলেটরি পাথওয়ে আছে এটি উনারা পুরোপুরিভাবে ফলো করার জন্য বলেন যে, হ্যাঁ আমরা আইসিডিডিআর’বির মাধ্যমেই করব এবং উনারা যেটা বলেন- আইসিডিডিআর’বি, আইইডিসিআর এবং আইপিএইচ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করবেন। মানে ডেটাগুলো কালেকশন করবেন। কিছুক্ষণ পরে উনাদের মহিবুল্লাহ সাহেব, উনি বললেন যে, না আমরা আইসিডিডিআর’বিতে করব না, আমরা বিএসএমএমইউ নেব। আমি বললাম যে অসুবিধা নাই, আপনারা বিএসএমএমইউ, আইইডিসিআর এবং আইসিডিডিআর’বি এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে করতে পারেন। এইভাবে কথা বলার পরে, এক পর্যায়ে উনারা বললেন যে, আইসিডিডিআর’বি লকডাউন এবং ওইখানে করা যাবে না। কিন্তু পরে আমরা বলি যে, আইসিডিডিআর’বিতে লকডাউন পারশিয়ালি আছে বা উনাদের যে ল্যাবরেটরি সেটা ফাংশনাল এবং এখনও উনারা এই ধরণের রিসার্চ কার্যক্রম করতে পারবেন, কোনো সমস্যা নাই। এতদসত্ত্বেও উনারা যখন বললেন যে, না আমরা আইসিডিডিআর’বিতে এটা করতে চাচ্ছি না, আমরা করব না। তখন আমি বললাম যে, নয়টা এরকম কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন আছে। আমি লিস্টটা দিলাম, আপনার যেটা খুশি, আপনি সেটিই করেন, তার মাধ্যমেই করেন।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘আলোচনার এক পর্যায়ে তখন আমরা বললাম যে, এভিনেন্স নামে একটা সিআরও আছে, তার মাধ্যমে করা যেতে পারে। উনারাও বললেন যে, হ্যাঁ, করা যেতে পারে। এই পর্যায়ে বলার পরে তখন উনারা বললেন, তাহলে আমাদের একটা চিঠি দিয়ে দেন। আমরা তখন একটা চিঠি দিয়ে দিলাম। ওই চিঠিটা নিয়ে উনারা চলে গেলেন। তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। আমি তো চিন্তা করেছি যে, সবকিছু ফয়সালা হয়ে গেছে, এখন চমৎকারভাবে আমাদের কাজটা এগুবে। চারটার সময় সংবাদ সম্মেলন উনারা করেছেন এবং সে সংবাদ সম্মেলনে কী ধরণের কথাবার্তা বলা হয়েছে, কীভাবে আমরা অবস্ট্রাকট করছি, আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে বিষোদগার করা হয়েছে, তা আপনারা দেখেছেন।’
মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পাথওয়ে সম্পর্কে বলি- বিশ্বের সকল দেশের নতুন উদ্ভাবিত ড্রাগ, বায়োলজিস্ট-বায়োসিমিলার প্রোডাক্ট, ভ্যাকসিন, মেডিকেল ডিভাইস, ডায়াগনস্টিক সিআরও’র মাধ্যমে স্টাডি/ডায়াল পরিচালনা করে থাকে এবং এখানে আমরা সেফটি, এফিকেসি, ইউজফুলনেস, ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ডিভাইসের ক্ষেত্রে সেফটি ও সন্তোষজনক পারফরমেন্স এগুলো প্রমাণ করতে হয়। প্রোডাক্টের যে উদ্ভাবক, উনি হচ্ছেন স্পন্সর। সকলক্ষেত্রেই কিন্তু উনি হচ্ছেন স্পন্সর এবং ডায়াল কন্ডাক্ট করার জন্য একজন সিআরও অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন প্রয়োজন হয়। যারা কী না একটা প্রটোকল ডেভেলপ করেন, পিআই মানে প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর, কো-ইনভেস্টিগেটর এগুলো উনারা ঠিক করেন। উনারা আসলে কো-অর্ডিনেটরের ভূমিকা পালন করেন। এর পরে উনারা একটা প্রটোকল ডেভেলপ করেন। এর পরে এই প্রটোকলটা যাবে হচ্ছে আমাদের বিএমআরসিতে। বিএমআরসিতে এথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স করতে হয়। বিএমআরসিতে এথিক্যাল ক্লিয়ারেন্স করার পরে আসবে ওষুধ প্রশাসনে। এখানে আমাদের একটা অ্যাডভাইজারি কমিটি আছে ১২ সদস্য বিশিষ্ট এবং সেখানে আমাদের ওষুধ প্রশাসনের মাত্র দুই জন। বাকি সবাই আমাদের দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসক, সায়েন্টিস্ট। উনারা তখন এই প্রটোকলটা রিভিউ করেন। করে ওখান থেকে প্রটোকলটা পাশ হয়ে গেলে তখন এই স্পন্সর ও সিআরও মিলে স্টাডিটা কন্ডাক্ট করে। করার পরে সে রেজাল্টটা আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। সে রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে আসলে আমরা রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকি এবং আমরা দেব। এটিই কিন্তু আমাদের এখানে প্রচলিত পদ্ধতি।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে ধরেন আমাদের এখানে, মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন, কলেরা ভ্যাকসিন, তার পরে ফিলগ্রাসটিম এসকল আইসিডিডিআর’বি ও সিআরও লিমিটেড এভাবেই করেছে। এই পদ্ধতি ফলো করেই এবং আমরা সেগুলোর রেজিস্ট্রেশন কিন্তু বাংলাদেশ থেকেই আমরা দিয়েছি।’
‘এখন এই যে স্পন্সর, মানে এটি (রেজিস্ট্রেশন) করার জন্য কিছু আসলে খরচ হয়। যেমন প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর, ইনভেস্টিগেটর, ডেটা কালেক্টর, টোটাল পদ্ধতিতে কিছু খরচ হয়। এই খরচটা কিন্তু আসলে স্পন্সর সাধারণত বহন করে। এটিই নিয়ম। আমাদের এখানে, আমাদের ডিজিডিএ’তে আমরা কিন্তু ফি পর্যন্ত নেই না। ওই যে, প্রটোকল রিভিউতে যেটা করা হয়, প্রটোকল রিভিউর জন্য আমরা ফি পর্যন্ত নেই না। এখানে ফ্রি অব কস্ট’, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘কাজেই উনি (ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী) একটা পর্যায়ে খুবই অবজেকশনেবল একটা কথা বলেছেন, সেটি হচ্ছে- আমরা কি ঘুষ দেব। ঘুষের প্রশ্নটা কীভাবে এখানে আসে? এটি আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন। এরকম একটি অবজেকশনেবল কথা কীভাবে উনি বলতে পারলেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা র্যাপিড টেস্ট সুপারিশ করে না। তারপরও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা করছেন বলে তারা সহযোগিতা করেছেন। রিএজেন্ট আনার অনুমতি ১৮ মার্চ তারা চান, ২০ তারিখে অনুমতি দেওয়া হয়। অধিদপ্তর ২২ মার্চ অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গবেষণাগার দেখতে চায়। গবেষণাগার দেখে এসে কিছু সংশোধনের পরামর্শ দেয়। ৬ এপ্রিল তারা আবারও পরিদর্শনে যান এবং দেখেন সুপারিশ অনুসারে গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এনেছেন।’
কিট ভালো কি মন্দ, তা নিয়ে পরীক্ষার আগে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সম্মান করেন জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিজ্ঞানভিত্তিক ও সৌজন্যমূলক আচরণ করবেন।’
Comments