পোশাক শ্রমিকেরা কেবল মেশিন চালানোর কর্মী নয়, তারা এদেশের নাগরিকও

মাওয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরিটি প্রায় কানায় কানায় পূর্ণ মানুষে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই পুনরায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন পোশাক শ্রমিকেরা। ৫ এপ্রিল ২০২০। ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে কার্যত চলমান লকডাউন অবস্থার মধ্যে শ্রমিকদের অসহায়ত্ব অন্য সময়ের চাইতে প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। গত শনিবার, চাকরি হারানোর ভয় ও বকেয়া বেতন পাবার আশায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভীতি উপেক্ষা করেই দলে দলে কাজে যোগ দিতে শহরাঞ্চলে পাড়ি জমান পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনার বিভ্রান্তির মধ্যে 'লকডাউন' চলাকালীন দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে, পিকআপে ও রিকশায় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছে তারা দেখলেন, দরজা বন্ধ। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য লকডাউন ঘোষণার পরপরই যে উদ্বেগ থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা তাদের ঘনবসতিপূর্ণ, ঘিঞ্জি বসতি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই উদ্বেগের মধ্যেই তারা ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ঝুঁকির মধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তারা ফিরে এসেছেন কারণ তাদের বলা হয়েছিল, কারখানা খুলবে ও বেতন দেওয়া হবে।

সবখানেই সেই একই অনিশ্চয়তা এবং হতাশার পুনরাবৃত্তির গল্প। সবচেয়ে বেদনাদায়ক হলো,  কিছু কারখানা মালিকের লোভ, শিল্প নেতাদের বিভাজন এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অদক্ষতার কারণে দেশের এই কঠিন সময়ে শ্রমিক ও জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে আপস করা হয়েছে। কারখানা বন্ধের বিষয়ে সরকার বা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে কোনো কেন্দ্রীয় নির্দেশনা বা গাইডলাইন না থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল বলেন, ‘১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাধারণ ছুটি বাড়িয়েছে, এই তথ্য কারখানার মালিকরা যদি শ্রমিকদের জানাতেন তাহলে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।’ তবে, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খোলা রাখা যাবে এমন নির্দেশনার পর ডিআইএফই এ ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। সরকারের দেওয়া কেন্দ্রীয় ‘লকডাউন’ সিদ্ধান্ত প্রয়োগ না করে কারখানা বন্ধের ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এটাকে ‘লকডাউন’ না বলে ‘ছুটি’ বলা হচ্ছে। ফলে, এর গুরুত্ব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য একটি বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে বটে কিন্তু স্পষ্টতই এই সুবিধা চেইন অব কমান্ডের সবচেয়ে নিচে থাকা শ্রমিকদের কাছে কবে পৌঁছাবে তা স্পষ্ট নয়। 

সংকটের সময়ের এমন দিকনির্দেশনার অভাব ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা এরই মধ্যে কিছুটা হলেও দৃশ্যমান। শ্রমিকরা শুধু গার্মেন্টস খাতের মেশিন চালানোর কর্মী নয়, তারা এদেশের নাগরিকও। অন্য নাগরিকের মতো তাদেরও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে। একইভাবে মারাত্মক করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধ করতে অন্য সবার সঙ্গে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারকে এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করার ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।

Comments

The Daily Star  | English

Commission working to find out those involved in ‘Aynaghar’

Everything to be clear once commission submits report, says CA’s press wing

43m ago