গোঁজামিলে ভরা দল নির্বাচন

Minhajul Abedin nannu

বাংলাদেশ দলে কখন কে ঢুকছে, কে বেরিয়ে যাচ্ছে। কেন বেরিয়ে যাচ্ছে, কেন ঢুকেছিল। কোন কিছুরই হদিশ করা মুশকিল। খোদ নির্বাচকদের সেই হদিশ আছে কিনা প্রশ্ন তোলা যায়। অন্তত তাদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এতটাই সাংঘর্ষিক যে তা শোনার পরও আরও বিভ্রান্তির অতলে তলিয়ে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হতে পারে। 

সেই গেল বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যায় প্রতিটি সিরিজেই বাংলাদেশের টেস্ট দলে নানা কারণে চার-পাঁচটি করে অদল বদল হচ্ছেই। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক পরিবর্তনের ধারায় চলছে দল। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের জন্য দেওয়া হয়েছে ১৬ জনের দল। এখানে ফিরেছেন চারজন, নতুন এসেছেন দুজন। একজন ব্যক্তিগত কারণে নেই, বাদ পড়েছেন আরও তিনজন। 

মজার ব্যাপার হলো দেশের বাইরে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ছিল ১৪ জনের দল, সেখানে দেশে খেলা তবু ১৬ জনের দল। সেই দল আবার টেস্টের আগেরদিন হয়ে যাবে ১৩ জনের। তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হবে বিসিএলের ফাইনাল খেলতে। কেবল তিনদিন জাতীয় দলের ক্যাম্পে রাখার জন্য বাড়তি তিনজন নেওয়া কেন তবে? কারণ নাকি কোচ দেখতে চান। কোন তিনজন ছাঁটাই হবেন তাহলে? দল নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বিসিএলের দুই ফাইনালিস্ট চূড়ান্ত হয়নি। তাহলে ঠিক কাদের ছেড়ে দেওয়া হবে? প্রক্রিয়াটা এখানে কি? কিছুই পরিস্কার নয়। 

স্কোয়াডে রাখা হয়েছে পাঁচজন পেসার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একাবারে ঘাসে ভরা উইকেটে দেশের মাঠে খেলবে বাংলাদেশ, এমন বাস্তবতা তো নেই। তাহলে এতজন পেসার রাখার কারণ কি? প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন বললেন, দলের সঙ্গে থেকে তারা শিখবেন। 

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দলে মোস্তাফিজুর রহমানকে বাদ দিয়ে বলা হয়েছিল, টেস্টের জন্য তিনি যথেষ্ট প্রস্তুত না। তাহলে মাত্র এক টেস্ট পর কোন আলাদিনের চেরাগের স্পর্শে একেবারে তৈরি হয়ে গেলেন মোস্তাফিজ? বাদ পড়ার পর বিসিএলে এক ইনিংসে ৪ আর আরেক ইনিংসে ২ উইকেট নিয়েছেন। এরকম পারফরম্যান্স তো ঘরোয়া ক্রিকেটে হরহামেশাই হয়। বড় কথা যিনি প্রস্তুতই না, তিনি এক ম্যাচে ১০ উইকেটে পেলেও হুট করেই কীভাবে সব ঘাটতি পূরণ করে তৈরি হয়ে যান?

আবার ঠিক উলটো ঘটনা রুবেল হোসেনের বেলায়। মোস্তাফিজকে বাদ দিয়ে রুবেলকে নেওয়ার যুক্তিতে বলা হয়েছিল রুবেল বেশ অভিজ্ঞ, প্রথম শ্রেনীতে ভাল করছেন, টেস্টে কেমন করেন দেখতে চান। এতগুলো বছরে রুবেল টেস্টে কেমন করেন দেখেননি নির্বাচকরা?  কমপক্ষে ৩ হাজার বল করেছেন এমন বোলারদের মধ্যে টেস্টে সবচেয়ে বাজে বোলিং গড় রুবেলের। তাকে নেওয়াটা ছিল তাই প্রশ্নবিদ্ধ। নিয়েছেন যখন, মনে করা যেতে পারে নিশ্চয়ই এরমধ্যে নতুন কোন এক্স-ফ্যাক্টর যোগ হয়েছে রুবেলের বোলিংয়ে। কিন্তু না। রাওয়ালপিন্ডিতে ১১৩ রানে ৩ উইকেট নেওয়া রুবেল দেশে ফিরেই বাদ। এবার প্রধান নির্বাচক স্পষ্ট বললেন, টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে সাদা বলের জন্য বিবেচনা করতে বলেছে। 

তাহলে রুবেলকে নেওয়া কেন আর বাদ দেওয়াই বা কেন? টেস্ট ম্যাচ তাহলে নির্বাচক আর টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে কেবল পরীক্ষা নীরিক্ষার জায়গা! 

ভারতের বিপক্ষে সিরিজে টেস্টে ফেরানো হয়েছিল আল-আমিন হোসেনকে। খুব আহামরি কিছু করতে পারেননি। রাখা হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডির স্কোয়াডেও, খেলানো হয়নি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে তার বাদ পড়ার কারণ নাকি ‘চোট’। কিন্তু আল-আমিনের চোট আসলে কি এবং সেটা কতটা গুরুতর তা রহস্যই থাকল। দল ঘোষণার আগের দিনও যে আল-আমিনকে নেটে পুরো রিদমেই বল করতে দেখা গেছে। 

দলে ফেরানো  হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও নতুন এসেছেন হাসান মাহমুদ। আবু জায়েদ রাহি আর ইবাদত হোসেন জুতসই বল করছেন। মোস্তাফিজ ফিরেছেন। দেশের মাঠে পেসার ছাড়াই খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশ। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের একাদশ তবে যথেষ্ট কৌতুহল উদ্দিপক।

বেশ অনেকদিন থেকেই টেস্টে বিবর্ণ মাহমুদউল্লাহ। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে হ্যাটট্রিক বলে উইকেট ছুঁড়ে দৃষ্টিকটু আত্মাহুতি দিয়েছেন। তার বাদ পড়ার প্রেক্ষাপট তৈরিই ছিল, গুঞ্জনও রটেছিল আগেভাগে। দল ঘোষণার সময় তবু তার বেলায় ‘বাদ’ শব্দটির বদলে ব্যবহার করা হলো ‘বিশ্রাম’। অথচ এই বিশ্রামের সময় তিনি খেলতে পারবেন বিসিএলের ম্যাচ! বিস্ময়কর বিশ্রামই বটে! এখানেও ঠিক সততা দেখাতে পারেননি নির্বাচকরা। মাহমুদউল্লাহকে তারা বাদ দিয়েছেন। বাদ দেওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কড়া যুক্তি আছে। কিন্তু সেই যুক্তি নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারছেন না। 

আপনি যদি কোন সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত ভুল হোক কিংবা ঠিক তার পেছনে যুক্তি দিতে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়ার কথা না। কিন্তু সিদ্ধান্ত যদি হয় অন্যের এবং আপনি হন কেবল জানিয়ে দেওয়ার মাধ্যম।  তাহলে অস্পষ্ট অনেক কথাবার্তা বেরুতেই পারে। দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও নির্বাচকদের ব্যাখ্যা ফের প্রশ্ন তুলছে, সিদ্ধান্তগুলো কি আসলেই তাদের?

সর্বশেষ পাঁচ সিরিজে বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডের যত অদল-বদল

প্রতিপক্ষ- নিউজিল্যান্ড (ফেব্রুয়ারি-মার্চ, ২০১৯)

দলে ফেরেন- তামিম ইকবাল (চোট কাটিয়ে), আবু জায়েদ চৌধুরী, তাসকিন আহমেদ (চোটে পরে বাদ)

নতুন মুখ- ইবাদত হোসেন

বাদ- ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান (চোট), সৌম্য সরকার (পরে আবার যুক্ত হন)

প্রতিপক্ষ- আফগানিস্তান (সেপ্টেম্বর, ২০১৯)

দলে ফেরেন- সাকিব আল হাসান (চোট কাটিয়ে), তাসকিন আহমেদ (চোট কাটিয়ে), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

বাদ- মোস্তাফিজুর রহমান (বিশ্রাম শব্দ ব্যবহৃত), সৈয়দ খালেদ আহমেদ, তামিম ইকবাল (ব্যক্তিগত কারণে নেই)

প্রতিপক্ষ –ভারত (নভেম্বর, ২০২০)

দলে ফেরেন- ইমরুল কায়েস, মোস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেন।

নতুন মুখ- সাইফ হাসান।

বাদ- সাকিব আল হাসান (নিষিদ্ধ), সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ

প্রতিপক্ষ- পাকিস্তান (ফেব্রুয়ারি, ২০১৯)

দলে ফেরেন- রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্ত।

বাদ- মোস্তাফিজুর রহমান, ইমরুল কায়েস, সাদমান ইসলাম (চোট), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (চোট), মেহেদী হাসান মিরাজ (কিছুটা চোট সমস্যা), মুশফিকুর রহিম (নিজেকে সরিয়ে নেন এই সফর থেকে)।

প্রতিপক্ষ- জিম্বাবুয়ে (ফেব্রুয়ারি, ২০২০)

দলে ফেরেন-  মুশফিকুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ।

নতুন মুখ- হাসান মাহমুদ, ইয়াসির আলি চৌধুরী

বাদ- মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বিশ্রাম শব্দ ব্যবহৃত), রুবেল হোসেন, আল-আমিন হোসেন (প্রশ্নবিদ্ধ চোট), সৌম্য সরকার (বিয়ের কারণে নেই)

  

 

Comments

The Daily Star  | English

Multinational executives urge govt to ensure licensing, tax consistency

Yunus asked the executives to maintain transparency in businesses

51m ago