কে এই কিংবদন্তি বীর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি?

Qassem-Soleimani-Final-1.jpg
জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। ছবি: সংগৃহীত

জেনারেল কাশেম সোলাইমানি শুধু ইরানের নয়, পুরো আরব বিশ্বের বীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ক্যারিশম্যাটিক কমান্ডার হিসেবে সারা পৃথিবীতে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তার বুদ্ধি-সাহস, নেতৃত্বের গুণাবলী ও যুদ্ধক্ষেত্রের বিচক্ষণতার গল্প ছিলো মানুষের মুখে মুখে।

পৃথিবীর ‘এক নম্বর’ জেনারেল হিসেবে বিবেচিত সোলাইমানির নাম ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও মোসাদের হিট লিস্টের ‘এক নম্বরে’। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে মার্কিন বাহিনী দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি।

কাশেম সোলাইমানি মূলত সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধে তার বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সেসময় তিনি ‘সারুল্লাহ’ গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। ওই যুদ্ধে তার অবদানের প্রশংসা করেছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

তেহরানের আঞ্চলিক শত্রু সৌদি আরব ও ইসরাইলের মাথাব্যথার কারণ ছিলেন কাশেম সোলাইমানি। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তার বীরত্বপূর্ণ অবদান সবার নজরে আসে। গত ২০ বছরে বহুবার যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও আরবের বিভিন্ন সংগঠন তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। তবে, প্রতিবারই তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বারবার পরাজয়ের মুখে পড়লে, তার সমর্থনে এবং ইরানের বাইরে অভিযানের দায়িত্ব নেয় কাশেম সোলাইমানির কুদস বাহিনী। দায়িত্ব নিয়েই তিনি সফলভাবে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন ও ইরাকের ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করেন।

কাশেম সোলাইমানি ইরানের পূর্ব সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানেও সফল ছিলেন তিনি। ওই এলাকার সন্ত্রাসীদের দমন করেন এবং সেখানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন।

১৯৯৮ সালে কাশেম সোলাইমানি কুদস বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। এসময় তিনি লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইরানের দীর্ঘদিনের বৈরি সম্পর্কের ইতি ঘটান এবং হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইরানের একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। একইসঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এবং ইরাকের শিয়া মিলিশিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। তিনি জেনারেল পদে উন্নীত হন ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং শিয়া নেতাদের সংস্পর্শে থাকার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি বেশি আলোচনায় ছিলেন। 

কাশেম সোলাইমানির নেতৃত্বে কুদস বাহিনী ইরানের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী এর সক্ষমতা বিস্তৃত করে গোয়েন্দা, সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলো।

Khameni-And-Suleimani-1.jpg
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ ইরানের কারমান প্রদেশের একটি দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। তিনি ১৩ বছর বয়স থেকেই নিজের পরিবারের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ভারোত্তোলনের প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং অবসরে খামেনির খুতবা শুনতে যেতেন।

ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের সময় তিনি ইরানি সেনাবাহিনীর নজরে আসেন। তখন ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান রাজ্যে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ছয় মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তার নেতৃত্বে ইরাকের সীমান্ত পেরিয়ে অভিযান পরিচালিত হয়। তখন থেকেই তিনি ইরানের জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচিত হন।

২০০৫ সালে ইরাকে পুনরায় সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-জাফারি ও নুরি আল-মালিকির নেতৃত্বে ইরাকের রাজনীতিতে কাশেম সোলাইমানির প্রভাব বাড়তে থাকে।

সেই সময়ে দেশটির শিয়া রাজনৈতিক দল এবং আধাসামরিক বাহিনী ‘বদর’ ইরাকের একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্র ও পরিবহন মন্ত্রণালয় এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে আসার পরে সেখানে তাদের প্রভাব গড়ে ওঠে। এই সংগঠনটিকে ইরাকে ‘ইরানের পুরনো’ সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

২০১১ সালে সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে রক্ষায় কাশেম সোলাইমানি তার নিয়ন্ত্রিত ইরাকি মিলিশিয়াদের সিরিয়া যাওয়ার নির্দেশ দেন।

ইরাকের সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব দ্য ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (এসআইএসএল) বিরুদ্ধে ইরান সমর্থিত হাশদ আল-শাবীর (পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সেস) যুদ্ধ চলাকালে কয়েকটি ইউনিটের নিয়ন্ত্রণ ছিলো কাশেম সোলাইমানির হাতে। তার নিয়ন্ত্রণে হাশদ আল-শাবীর ইরাকি সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছিলো এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে পরাজিত করেছিলো।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকান স্টাডিজের প্রধান মোহাম্মদ মারান্দি বলেছেন, “আইএসআইএলকে পরাজিত করতে কাশেম সোলাইমানি মূল ভূমিকা পালন করেন। আর এজন্য তিনি ইরানি জনগণ ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের কাছে ‘জাতীয় বীর’ খেতাব পেয়েছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, “কাশেম সোলাইমানি না থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলজুড়ে হয়তো কালো পতাকা উড়তে দেখতো বিশ্ব।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একবার জেনারেল কাশেম সোলাইমানিকে ‘ইরানি বিপ্লবের জীবন্ত কিংবদন্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

আরও পড়ুন:

ইরানের ‘চরম প্রতিশোধ’র ঘোষণা, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি

কাশেম সোলাইমানির স্থলে ইসমাইল ঘানিকে নিয়োগ দিলেন খামেনি

ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি মার্কিন হামলায় নিহত

Comments

The Daily Star  | English

Cargo ship with Pakistani goods reaches Ctg anchorage

On its second trip, it brings refined sugar, dolomites, fabrics, electronics, etc from Pakistan and UAE

2h ago