মাত্র ১০০ টাকায় ইতালিতে বাড়ি!

ইউরোপের যেকোনো দেশ সবার স্বপ্নের জায়গা। যদি এমন কোনো দেশে নিজের একটা বাড়ি থাকে তাহলে কেমন হয়?

অবান্তর কথা মনে হতেই পারে। কেননা, এমন কোনো দেশে বাড়ি কিনতে লাগার কথা কাড়ি কাড়ি টাকা। কিন্তু, ব্যতিক্রম ইতালি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আপনি চাইলে মাত্র এক ইউরো বা প্রায় একশ টাকায় সেদেশে বাড়ির মালিক হতে পারেন।

মূলত জীবিকার সন্ধানে ইতালির বাসিন্দারা গ্রামাঞ্চল ছেড়ে শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন। সেসব বাসিন্দাদের পরিত্যক্ত বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে বসবাসের উপযোগী করা এবং সেসব অঞ্চলে বসবাসের ধারা অব্যাহত রাখতেই ইতালির সরকার এমন একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

বাড়িগুলো নিতে গেলে আপনাকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যার মধ্যে সেখানে বসবাস করার শর্ত ছাড়াও থাকছে বাড়িগুলো সংস্কার করার শর্ত।

যদি ইতালিতে কেউ থাকেন যিনি আপনাকে এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। না হলে শহরগুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র নিতে হবে।

আপনার আবেদন শহর কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ মনে হলে শুরু হবে মূল প্রক্রিয়া।

আপনাকে অবশ্যই নিরাপত্তা জামানত দিতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে যা দুই থেকে পাঁচ হাজার ইউরো পর্যন্ত। এর সঙ্গে তিন বছরের মধ্যে সম্পত্তি পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিতে হবে। এরপর সংস্কার এবং বাড়ি কেনার দলিল হয়ে গেলে ফেরত পাবেন আপনার নিরাপত্তা জামানতের টাকা।

কোন জায়গাতে আপনার বাড়ি খুঁজে নিতে পারেন তার একটা সম্ভাব্য তালিকা তুলে ধরা হলো।

গাঞ্জি ইতালির সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে একটি। ছবি: সংগৃহীত

গাঞ্জি

সিসিলিতে অবস্থিত গাঞ্জি ইতালির সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর মধ্যে একটি। শামুকের মতো সেই অঞ্চলে ২০১১ সালে প্রথম এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রি করা শুরু হয় এবং এই উদ্যোগ এখন পর্যন্ত এখানেই সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে।

এখানে এখনও প্রায় ১৫টি বাড়ি রয়েছে যেগুলো বিক্রি করা হবে।

‘পাগলিয়ারোল’ নামে পরিচিত পুরাতন এই বাড়িগুলো দ্বিতল। ১৮০০ শতকে কৃষক পরিবারের জন্য এগুলো বানানো হয়েছিলো। এর নিচতলায় রাখা হতো গৃহপালিত পশু এবং দোতালায় থাকতো কৃষকের পরিবার।

বলা হয়, ইউরোপের দুটি জায়গায় পবিত্র আত্মা উপস্থিত হয়েছিলেন। তার মধ্যে এই এলাকা একটি।

ওল্লোলাইয়ের নির্মল ও ধোঁয়াহীন বাতাস এবং অপরূপ প্রকৃতি আপনার মনকে ফুরফুরে রাখবে সব সময়। ছবি: সংগৃহীত

ওল্লোলাই

ওল্লোলাই সার্ডিনিয়ার বার্বাগিয়ারের বুনো পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানকার ঘরগুলো ধূসর গ্রানাইট পাথরে তৈরি।

এখানকার নির্মল ও ধোঁয়াহীন বাতাস এবং অপরূপ প্রকৃতি আপনার মনকে ফুরফুরে রাখবে সব সময়। শরতে এখানে ‘কোর্টেস অ্যাপেরটাস’ বা ‘উন্মুক্ত উঠান’ নামের একটি উৎসব হয়। যা সবার জন্য উন্মুক্ত।

এই শহরের মেয়র এফিসিও আরবাউ জানিয়েছেন, শহরটিতে এখন পর্যন্ত ১০টি বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। যার মধ্যে এক ডাচ দম্পতি একটি বাড়িকে বিলাসবহুল বাড়িতে রূপান্তর করেছেন।

বিভোনার মাটি বেশ উর্বর। ছবি: সংগৃহীত

বিভোনা

সিসিলিয়ান শহর বিভোনা। এখানে বসবাসকারীদের জন্য আয়করে ছাড়সহ আরও বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

এখানকার মাটি বেশ উর্বর। এখানে ‘বিস-বোনা’ বা ‘দ্বিগুণ ভাল/সুন্দর’ নামে উৎসব হয়। কমলার বাগান, পিচ গাছ, আরবীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী উঠান, এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো নতুন বাসিন্দাদের আকর্ষণ করতে যথেষ্ট।

টাউন কাউন্সিলর অ্যাঞ্জেলা ক্যানিজারো জানিয়েছেন, এখন সেখানে দশটি বাড়ি খালি রয়েছে। সামনে আরও বাড়ি বিক্রি করা হবে।

কাম্মারাটার স্থানীয়রা খুবই অতিথিপরায়ণ। ছবি: সংগৃহীত

কাম্মারাটা

কাম্মারাটা অনেক ভালো সুযোগ দিচ্ছে বাড়ি কেনার জন্য। এখানকার বাড়িগুলো পাবেন বিনামূল্যে। সেই সঙ্গে নবজাতকের জন্য এক হাজার ইউরো বোনাসের ঘোষণাও দেয়া আছে।

এখানকার স্থানীয়রা খুবই অতিথিপরায়ণ। এই শহরটি নাগরিকদের দীর্ঘায়ুর জন্য পরিচিত।

এখন পর্যন্ত সেখানে খালি রয়েছে প্রায় ডজন খানেক বাড়ি। বিক্রি হয়েছে মাত্র দুটি।

জঙ্গোলি শহরটি গুহা এবং আঁকাবাঁকা রাস্তার এক গোলকধাঁধা। ছবি: সংগৃহীত

জঙ্গোলি

নেপলস এবং আমালফি উপকূলের কাছে অবস্থিত জঙ্গোলি। পাহাড়ের চূড়ায় এই শহরটি গুহা এবং আঁকাবাঁকা রাস্তার এক গোলকধাঁধা।

সম্প্রতি, এই এলাকায় নতুন ফুটপাত, এলইডি লাইট, ওয়াই-ফাই সংযোগসহ নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত এখানে ৩০টি বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। চলতি মাস থেকেই আরও বাড়ি বিক্রির জন্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এখানকার মেয়র পাওলো কারুসো।

বর্গোমেজ্জাভাল্লের মোট বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র ৩২০ জন। ছবি: সংগৃহীত

বর্গোমেজ্জাভাল্লে

বর্গোমেজ্জাভাল্লে ইতালি-সুইজারল্যান্ড সীমান্তে অবস্থিত। এখানে বাড়ি কিনতে পারবেন এক ইউরোতে। সঙ্গে আরও পাবেন প্রতি নবজাতকের জন্য এক হাজার ইউরো এবং কোনো ব্যবসা শুরু করতে চাইলে দুই হাজার ইউরো।

এখানে মোট বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র ৩২০ জন।

এখন পর্যন্ত এখানে পাঁচটি বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। সেগুলো কিনেছেন ইতালীয় এবং একদল সন্ন্যাসী।

চাহিদার তুঙ্গে সাম্বুকার বাড়িগুলো। ছবি: সংগৃহীত

সাম্বুকা

ইতালি সরকার ঘোষিত এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রির ঘোষণায় সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন এলাকা হচ্ছে সাম্বুকা। এর এতোই চাহিদা যে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে এখানকার ১৬টি বাড়ি নিলামে বিক্রি করা করবে। একদম শুরুতে কেবলমাত্র একটি বাড়ি এক ইউরোতে বিক্রি করা হয়েছিলো।

নুলভি সার্ডিনিয়ার সেরা সৈকতগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত। ছবি: সংগৃহীত

নুলভি

নুলভি সার্ডিনিয়ার সেরা সৈকতগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত। এখানে একটি পবিত্র পাথরের কুয়ো আছে। যেখানে প্রাচীন উপজাতিরা পানির দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে বলিদান করতেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর লুইজি কাক্কুরডু জানিয়েছেন, সেখানে এখন নয়টি বাড়ি রয়েছে বিক্রির জন্য। সেগুলো শীঘ্রই বিক্রি হয়ে যাবে। তবে পুরাতন বাসিন্দারা তাদের বাড়ি ছেড়ে দিলে আবার এই প্রক্রিয়ায় বিক্রি করা শুরু হবে।

ক্যান্টিয়ানোতে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া খামারবাড়িগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

ক্যান্টিয়ানো

ক্যান্টিয়ানোতে প্রাচীন রোমানদের সামরিক স্থাপনা ছিলো।

এই অঞ্চলে এক ইউরোতে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া খামারগুলো এরই মধ্যে শেষ। তবে পুরাতন কয়েকটি ঐতিহাসিক ভবন এখনও পাওয়া যাবে।

স্বল্প-উন্নত অঞ্চল ফ্যাব্রিচ ডি ভার্জমোলিতে বিনিয়োগের ৬০ ভাগ পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

ফ্যাব্রিচ ডি ভার্জমোলি

এই শহরটি ইউনেস্কো-তালিকাভুক্ত সুরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানে বিচ্ছিন্ন, ভুতুড়ে এবং ধ্বংস-প্রায় কিছু বাড়ি বিক্রি করা হবে।

মেয়র মিশেল জিয়ান্নিনি জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে শুরু করে এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি খামারবাড়ি বিক্রি করা হয়েছে। তবে চীন, রাশিয়া এমনকী ব্রাজিলের লোকেরাও এখানে বাড়ি কিনতে আবেদন করেছেন।

স্বল্প-উন্নত অঞ্চল হওয়ায় এখানে বিনিয়োগকারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পুনর্নির্মাণ খরচের ৬০ ভাগ পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন।

মুসোমেলিতে সবচেয়ে বেশি খালি বাড়ি রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

মুসোমেলি

সিসিলিয়ান শহর মুসোমেলিতে এক ইউরোতে বাড়ি বিক্রি করা হয়েছে ১২৫টি। আরও ৫০টি এখনও অবিক্রীত আছে।

কাউন্সিলর তোতি নিগ্রেলি বলেছেন, “আমরা পুরনো মালিকদের তাদের সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য চাপ দিচ্ছি, যাতে আমরা সেগুলো নতুনদের হাতে তুলে দিতে পারি।”

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

17h ago