অনেক অসঙ্গতি নিয়ে শুরু বিপিএল

উদ্বোধনী কনসার্টের বর্জ্য অপসারণ করে খেলার জন্য মাঠ তৈরি করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কোন দলের ক্রিকেটাররা খেলার আগের দিন পর্যন্ত খোঁজ করছেন অধিনায়কের নাম, কোন দলের আবার পরিচালক বদলে যাচ্ছে আগের দিন। কোন দলকে আবার খেলার দিনই করতে হচ্ছে জার্সি উন্মোচন! অধিনায়কদের ফটোসেশনে মিলছে না অধিনায়কদেরই। বদলে যাচ্ছে নিয়ম। এরকম অনেক অসঙ্গতি নিয়ে আজ শুরু হচ্ছে বিপিএলের সপ্তম আসর।

গেল অক্টোবরে আগের সব ফ্রেঞ্চাইজি বাতিল করে হুট করেই জানানো হয় এবার বিপিএল হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে। সামনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, তাই এই বিপিএলের নাম হবে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। কিন্তু দেশের মহান স্থপতির নাম জুড়ে দেওয়া হলেও টুর্নামেন্টের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তাঁর সম্মান কতটুকু থাকছে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে।

এমনিতে প্রতি বিপিএলেই অব্যবস্থাপনা নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু ফ্রেঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টটি প্রতি আসরেই আরেকটু করে গুছিয়ে আসছিল। সব ফ্রেঞ্চাইজি বাতিল করে এবার সেই ধারাবাহিকতায় পড়ে ছেদ। নতুন সব দল, নতুন করে সব সাজাতে গিয়ে যেন ভজকট পাকানোর জোগাড়।

সমন্বয়হীনতা

ফ্রেঞ্চাইজি বাতিল করে খাতায় কলমে সব দলই বিসিবি রেখেছে নিজেদের পরিচালনায়। কিন্তু একটি বাদে ছয় দলেরই মিলেছে টিম স্পন্সর। এই টিম স্পন্সর মানে নেহায়েত স্পন্সরই নয়, স্পন্সর হয়ে আসা প্রতিষ্ঠানেরই থাকছে দল পরিচালনার ভার। অর্থাৎ ফ্রেঞ্চাইজি না থাকলেও থাকছে ফ্রেঞ্চাইজিরই ধরন। কিন্তু যেহেতু আবার প্রতি দলে একজন করে বিসিবি পরিচালক যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে তাতে তৈরি হয়েছে সমন্বয়হীনতার।

তার বড় উদাহরণ রংপুর রেঞ্জার্স। এই দলের শুরুতে স্পন্সর ছিল না। টিম ডিরেক্টর হিসেবে শুরু থেকেই দল সাজিয়েছেন আকরাম খান। পরে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিউক্যাল স্পন্সর হিসেবে যুক্ত হয়। আকরাম তখনো দলের অনুশীলন থেকে শুরু করে সবখানেই সচল। কিন্তু খেলার আগের দিন ঘটে চমক। বিসিবির আরেক পরিচালক এনায়েত হোসেন সিরাজ ছিলেন রাজশাহী রয়্যালসের দায়িত্বে। যিনি আবার ইনসেপ্টারও সত্ত্বাধিকারীর একজন। তিনি পরিচালক হয়ে চলে আসেন রংপুরে। সরানো হয় আকরামকে। কিন্তু আকরাম জানান তিনি এর কিছুই জানেন না, দল সাজিয়েছেন তিনি তাই এভাবে সরতেও তিনি রাজি নন। একই দলে তাই আছেন তিনিও।  এই দলের সঙ্গে দুজন পরিচালকই কি আছেন, দুজনেই কি দল পরিচালক, তা এখনো স্পষ্ট করতে পারেনি বিসিবি।

ক্রিকেটের নতুন জগতে তারা  

টিম স্পন্সর হয়ে আসা বেশিরভাগ দলেরই নেই ক্রিকেট দল পরিচালনার অভিজ্ঞতা। ক্রিকেট সরঞ্জামের মূল্য নিয়েও ধারনা নেই তাদের। তার প্রতিফলন দেখা গেছে অনুশীলন। একটি দলের অনুশীলন বল কেনা হয়েছে সীমিত, মন খোলে অনুশীলন করতে গিয়ে ক্রিকেটাররা তাই পড়ছেন ফ্যাসাদে। 

আরেক দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলন জার্সি বুঝে পেয়েছেন খেলার আগের দিন। বেশিরভাগ দলেরই মূল জার্সি উন্মোচন হয়েছে এক-দুইদিন আগে। খুলনা টাইগার্স আবার এক কাটি সরেস। টুর্নামেন্টের প্রথম দিনের খেলা চলার সময় তারা রেখেছে তাদের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠান!

মূল মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ক্ষত

৮ তারিখ মূল মাঠে ছিল উদ্বোধনী কনসার্ট। বানানো হয় বিশাল মঞ্চ। মাঠের ভেতরেও ছিল দর্শকদের বসার ব্যবস্থা। ছিল ভ্রাম্যমাণ টয়লেট, ফুডকোর্ট। অনুষ্ঠান শেষে এসব জঞ্জাল সরাতে লেগেছে আরও দুদিন। বিপুল মানুষের ফেলা দেওয়া বর্জ্য, অস্থায়ী নানান স্থাপনার সরিয়ে নেওয়ার দাগ এখনো রয়ে গেছে। মাঠকর্মীদের চেষ্টায় খেলার আগের রাতে তৈরি হয় মাঠ। তবে কেমন একটা বাদামী চেহারা নিয়ে শেরে বাংলা স্টেডিয়াম অপেক্ষায় আছে ব্যাট-বলের লড়াইয়ের।

হুট করেই কি মনে পড়ল ফটোসেশনের কথা!

অধিনায়কদের নিয়ে একটা ফটোসেশন করা দরকার। খেলার আগের দিন হুট করেই কি তা মনে পড়ল আয়োজকদের? পুরো আয়োজনের হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখে তো তা-ই মনে হতে পারে।  দুপুরে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয় অধিনায়কদের ফটোসেশন হবে বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৫টায়। শীতের বিকেলের ৫টা মানে আসলে সন্ধ্যা। অবশ্য এর ঘণ্টা খানেক আগেই জানা গেছে চূড়ান্ত না হওয়া দুই দলের অধিনায়কের নাম।

নির্ধারিত সময়ে সেখানে গিয়ে দেখা গেল কোন কিছুরই ঠিক নেই। উপস্থিত নেই সব অধিনায়ক, তৈরি নেই ব্যাকড্রপ। এক অধিনায়ক আরেকজনকে প্রক্সি রেখে চলে গেছেন, আরেক অধিয়াককে পাওয়াই যায়নি। শেষ পর্যন্ত আধঘণ্টা দেরিতে এক প্রক্সি আর পাঁচ মূল অধিনায়কদের নিয়ে হয় ফটোসেশন। কিন্তু এই ফটোসেশনে ট্রফি কোথায় খোঁজ করছিলেন এক অধিনায়কই। সামনে ট্রফি রাখতে হয় সে চিন্তা যেন মাথাতেই নেই আয়োজকদের।

বাধ্যতামূলক লেগ স্পিনার, ১৪০ কিমি গতির পেসার- এসব তবে কথার কথা

অক্টোবরে যখন নতুন আদলের বিপিএলের ঘোষণা আসে, তখন প্রভাবশালী পরিচালক মাহবুব আনাম জোর গলাতেই বলেছিলেন, এবার কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক রাখবেন তারা। বিপিএলে প্রতি দলকেই একজন করে লেগ স্পিনার খেলাতেই হবে, এমনকি তাদের চার ওভার করে বোলিংও দিতেই হবে। বিদেশি ১৪০ কিলোমিটার গতির পেসারও রাখাই লাগবে। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন জানা গেল প্লেয়িং কন্ডিশনে এসব কিছু নেই। এক দলের পরিচালকই জানালেন টিম কম্বিনেশন অনুযায়ীই একাদশ সাজাবেন তারা। তবে লেগ স্পিনার রাখতে চেষ্টা থাকবে তাদের।

মাঠের খেলাই সব আড়াল নাকি আরও নতুন বিতর্ক? 

মাঠের বাইরের এতসব অব্যবস্থাপনা, অসঙ্গতি দূর হতে পারে যদি খেলা হয় জম্পেশ, মানসম্মত। দেশি ক্রিকেটাররা যদি নিজেদের তুলে ধরতে পারেন তাহলে আড়াল পড়তে পারে অনেক কিছু। কিন্তু উইকেট, আম্পায়ারিং আর প্রোডাকশনের মান যদি আগের আসরগুলো থেকে আলাদা না হয় এখানেও জন্ম হতে পারে নতুন সব ঘটনা।

আজকের খেলা

দুপুর দেড়টায় দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেট থান্ডারের প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স খেলবে রংপুর রেঞ্জারের বিপক্ষে। খেলা দেখা যাবে গাজী টিভি, মাছরাঙা টিভি ও র‍্যাভিটহোলের ইউটিউবে।

 

 

 

 

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Multinational executives urge govt to ensure licensing, tax consistency

Yunus asked the executives to maintain transparency in businesses

48m ago