মাঠের ক্রিকেটে জৌলুস, পেশাদারিত্ব থাকছে তো?
বিপিএলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এক পারফর্মার। মিরপুর একাডেমি মাঠে নেটে ব্যাট করার সময় সজোরে মেরে একটি বল ফেলে দেন একাডেমির আঙিনার বাইরে। তা দেখেই পাশেই থাকা কোচের চিৎকার – ‘এভাবে মারিস না, হিসাবের বল’। জিনিসটা প্রথমে মজা মনে হলেও পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল এবারের বিপিএলের বাস্তবতার ব্যতিক্রমী কিছু চিত্র।
আগের সব ফ্রেঞ্চাইজি বাদ দিয়ে নতুন আদলে করা হচ্ছে এবারের বিপিএল। খাতায় কলমে এবার বিপিএলে নেই কোন ফ্রেঞ্চাইজি। সবগুলো দলই নিজেরাই পরিচালনা করছে বিসিবি। কিন্তু একটি ছাড়া সব দলেই নেওয়া হয়েছে টিম স্পন্সর। মূলত তারাই থাকছে দল পরিচালনায়। অনেকটা সেই ফ্রেঞ্চাইজিদের মতই।
কিন্তু স্পন্সর হয়ে যারা বিপিএলের মাধ্যমে ক্রিকেটে এসেছেন তাদের অনেকেরই নেই ক্রিকেটের দল পরিচালনার অভিজ্ঞতা। ক্রিকেটের মানসম্পন্ন সরঞ্জামের মূল নিয়ে নেই তাদের কোন ধারণা।‘হিসাবের বল’ ঘটনা তারই এক ফল। একটি দলের স্পন্সর প্রতিনিধি নাকি বল কেনার বাজেট দেখে চমকে গিয়েছিলেন। অনুশীলনে ব্যবহৃত বলের দামই যে প্রায় সাড়ে নয় হাজার টাকা করে, তা তাদের ধারণারও বাইরে ছিল। আপাতত অনুশীলন বল আনা হয়েছে তাই সীমিত সংখ্যক। কোচ-খেলোয়াড়দেরও তাই রীতিমতো হিসেব করে চলতে হচ্ছে।
বিপিএলে থ্রোয়ার হিসেবে কাজ করা এক সাপোর্ট স্টাফ কাজ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিজ থেকেই বলছিলেন তার অভিজ্ঞতা, ‘কারা যে আসছে ভাই দল চালাতে, বুঝতে পারছি না। ক্রিকেটের বিভিন্ন জিনিস কিনতে গিয়েই দাম দেখেই বলে এত দাম! তাদের কোন ধারণাই নেই। কি যে হবে বুঝতে পারছি না।’
আরেকজন জানান একাধিক জার্সিসেটের ফর্দ দেখেও কিছুটা ভড়কে যান আরেক স্পন্সর প্রতিনিধি। আরেকটু কমে কাজ সারা যায় কিনা এমন প্রস্তাবও নাকি তিনি দিয়েছিলেন।
দলগুলোর অনুশীলনেও কোথাও যেন একটা খামতি। ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগতভাবেই নিজেদের শানিতে নিতে শ্রম দিচ্ছেন। দল হিসেবে একাট্টা একটা ভাব এখনো দেখা যাচ্ছে না। এমনকি দলগুলোর নামও খোদ ক্রিকেটারদের কাছেও এখনো আত্মস্থ হয়ে উঠেনি। টুর্নামেন্টের আগে লড়াইয়ের ঝাঁজটা ঠিক টেরই পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রতি দলেই বিসিবির একজন করে পরিচালক যুক্ত আছেন বটে। তাদের কাজ মূলত দল তৈরি, গেম প্ল্যান বা খেলোয়াড় ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে। যেহেতু স্পন্সর নেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট বাজেট করে দল চালাবে তারাই।
মাঠের বাইরের আয়োজন নিয়ে অবশ্য বিসিবির তোড়জোড় চোখে পড়ার মত। সর্বশেষ তিন আসরে না হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবার ফেরানো হয়েছে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী আসছে বছর। এই নিয়ে সরকারের রয়েছে বড় উদ্যোগ। বিসিবিও সেই উপলক্ষে বিপিএলের আগে জুড়ে দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর নাম।
রোববার জমকালো আয়োজন থাকছে বিপিএলকে রাঙাতে। ভারতের সিনে তারকারা থাকছেন, থাকছেন বাংলাদেশের নামীদামী তারকারা। সাজানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ, আলোক সজ্জা, ফায়ারওয়ার্কস, লেজার শো কোন কিছুর কমতি রাখা হচ্ছে না।
কিন্তু আলোর নিচেই অন্ধকারের মতো এসব জৌলুসের নিচে মূল আয়োজন মাঠের ক্রিকেটে কমতি রয়ে যাচ্ছে কিনা তা বড় প্রশ্ন হয়েই দেখা দিচ্ছে।
বিপিএলে এবার অংশ নেওয়া সাত দলের মধ্যে স্পন্সর আছে ছয় দলের। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরাসরি দল পরিচালনায় যুক্ত আছে যমুনা ব্যাংক, জিভানী গ্রুপ, আইপিসি, আকতার গ্রুপ, মাইন্ড ট্রি ও ইনসেপ্টা।
Comments