নতুন অধিনায়কের হাত ধরে নতুন শুরুর অপেক্ষা
নতুন অধিনায়ক মুমিনুল হক সংবাদ সম্মেলনে কিছুটা যেন স্নায়ুচাপে। কোন প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না। মাঝেমাঝে তালও ছুটল। হুট করে পাওয়া অধিনায়কত্বের অপ্রস্তুত ভাবটা আড়াল করতে পারলেন না যেন। সামলে নিয়ে অবশ্য জোর গলাতেই জানালেন দল হিসেবে নেই প্রস্তুতির ঘাটতি। বরং টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রত্যাশা ছাপিয়ে এক ম্যাচ জেতার বিশ্বাস সঙ্গে আছে। আবার সুযোগ হাতছাড়া করার খচখচানিও যে আছে। সব হিসেব নিকেশ মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর টেস্ট দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু করতে যাওয়া বাংলাদেশ বাস্তবতার জমিনে দাঁড়িয়ে থাকবে সুযোগের অপেক্ষায়।
ইন্দোরের হোল্কার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। যাতে বাংলাদেশের প্রত্যাশা খুব সামান্য, মুমিনুলের কথায় কার্যত প্রত্যাশা নেই। আর এই না থাকাকেই পূঁজি করে বড় কিছু করার মিশন তাদের।
সাকিব আল হাসানের নিষিদ্ধ হওয়ার পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে ভারতে খেলতে এসেছিল বাংলাদেশ। যেখানে পারিবারিক কারণে দলের সঙ্গী হননি তামিম ইকবালও। প্রথম সারির দুই পারফর্মারকে ছাড়া ভারতে এসে অবশ্য শুরুটা হয় দুর্বার। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ভারতকে হারিয়ে দেয় মাহমুদউল্লাহর দল। পরে সুযোগ তৈরি করেও জেতা হয়নি সিরিজ।
তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে গেলেও টেস্টে হিসেব হতো ভিন্ন। ঘরের মাঠে রেকর্ড ১১টি সিরিজ জেতা ভারত আছে সময়ের সেরা ফর্মে। তাদের মাঠে এসে কাবু হয়ে ফেরত গেছে দুনিয়ার তাবৎ দল। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বরাবরের মতোই শক্তিধর। পেসাররা আছেন ইতিহাসের সেরা অবস্থায়, কোয়ালিটি স্পিনারেরও ছড়াছড়ি বিরাট কোহলির স্কোয়াডে।
বাংলাদেশের কি আছে? অধিনায়ক মুমিনুল বলছেন তাদের আছে দেখিয়ে দেওয়ার তাড়না, ‘যদি ইতিবাচক কোনো কিছুর কথা বলেন, আমার কাছে একটাই আছে, সেটা হলো সুযোগ। আমার কাছে পুরোটাই সুযোগ। যখন আপনি বিশ্বের সেরা দলের বিপক্ষে খেলবেন, যারা তিনটা বিভাগে খুবই ভালো তাদের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে পারলে সেটা আপনার জন্য খুব ভালো ব্যাপার হবে।’
মুমিনুল নিজেদের অনেকখানিই পিছিয়ে রাখছেন। জোর গলায় লড়াইয়ের আভাসও নেই। কিন্তু ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির কণ্ঠে কেবলই সমীহ। ক'দিন আগে ভারতে এসে নাজেহাল হয়ে ফেরত গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কন্ডিশনের কারণে ভারতের মাঠে বাংলাদেশ ভালো খেলবে বলে ধারণা কোহলির।
সেই ভালো যে ম্যাচ জেতা নয়, তা এমনকি বলেও বসলেন মুমিনুল। তাদের প্রত্যাশার মাত্রা যে অনেকখানিই কম। বুঝিয়েছেন স্পষ্ট ভাষাতেই।
উইকেট
হোল্কার স্টেডিয়ামে এর আগে একটাই টেস্ট হয়েছিল। ২০১৬ সালে সে টেস্টে নিউজিউন্ডের বিপক্ষে রাজত্ব করেছিলেন ভারতের ব্যাটসম্যান আর স্পিনাররা। অফ স্পিনার রবীচন্দ্র অশ্বীন নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। তবে এবার প্রতিপক্ষ যেহেতু বাংলাদেশ, উইকেট স্পিনারদের অতটা স্বর্গ হওয়ার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশের শক্তি আর দুর্বলতা মেপে উইকেট রাখা হচ্ছে স্পোর্টিং। যেখানে আসলে পেসারদের জন্য থাকবে অনেক কিছু।
হোল্কারের উইকেট বানানো হয়েছে লাল মাটি দিয়ে। যাতে মিলবে বাড়তি বাউন্স। ম্যাচের আগের দিন বিকেলেও উইকেটে দেখা গেল ঘাসের ছোঁয়া। উইকেট দেখে ভারত অধিনায়ক কোহলি তিন পেসার খেলানোর আভাস দিয়েই রেখেছেন।
একাদশ
তামিম ইকবাল এই সিরিজেও না থাকায় উদ্বোধনী জুটিতে অভিজ্ঞতার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। সাদমান ইসলামের সঙ্গে সে ঘাটতি কিছুটা পূরণ করতে পারেন ইমরুল কায়েস। সম্ভাবনা আছে তরুণ সাইফ হাসানেরও।
তিন, চার, পাঁচ, ছয়ে জায়গা চূড়ান্ত। অধিনায়ক মুমিনুলের পর একে একে নামার কথা কেবল ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও উইকেটরক্ষক লিটন দাসের।
ঘরের মাঠে পেসার ছাড়া খেলতে নামা বাংলাদেশকে এখানে পেসার খেলাতেই হবে। তবে ভারতের মতো তিনজন পেসারের বিলাসিতার বাস্তবতাও নেই। পাঁচ ব্যাটসম্যান ও একজন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের সঙ্গে থাকতে পারেন পাঁচজন বিশেষজ্ঞ বোলার। যার মধ্যে তিন স্পিনারের সঙ্গে দুই পেসার খেলানোর চিন্তাই প্রবল। তিন স্পিনারের প্রথমজন অবশ্যই তাইজুল ইসলাম। তার সঙ্গে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দল যদি বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানোর চিন্তায় না যায় তাহলে দেখা যেতে পারে আরেক অফ স্পিনার নাঈম হাসানকেও।
Comments