বিপর্যস্ত সময় ঠেলে সরিয়ে দুর্বার জয়

৩৫ বলে ৩৯ করে সৌম্য সরকারের স্টাম্প গেল খলিল আহমেদের বলে। শেষ ৩ ওভারে বাংলাদেশের জিততে দরকার ৩৫ রান। মন্থর হয়ে আসা উইকেটে বেশ কঠিন সমীকরণই তখন। সৌম্যের সঙ্গে জুটিতে ৬০ রান তুলে মুশফিকুর রহিমের ব্যাট তখনো ভরসার নাম। এমন চ্যালেঞ্জিং সময়ে ক্রিজে এলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এই ভারতের বিপক্ষেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষটা করতে না পারার ক্ষত তাদের দগদগে। আবার শেষটা করার দায় ঘাড়ে পড়ল তাদেরই উপর। নাহ, এবার আর ভুল নয়। তুলির আঁচড়ে শেষটা দারুণভাবেই রাঙালেন মুশফিক। ছক্কা মেরে খেলা শেষ করলেন মাহমুদউল্লাহ। দেশের ক্রিকেটে দমবন্ধ সময়, দিল্লির বায়ুতে হাঁসফাঁস। সব তাড়িয়ে বাংলাদেশ পেল দারুণ স্বস্তির এক জয়।

অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে রোববারের ভরপুর গ্যালারিতে স্বাগতিক ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শক্তিশালী এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নয়বারের দেখাই এটাই বাংলাদেশের প্রথম কোন জয়। এই জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও অনেক ব্যাকফুটে থেকে শুরু করে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

অথচ একটা ম্যাচ আবারও হাতছাড়াও হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। থিতু ব্যাটসম্যান সৌম্য ফিরে গেলেন। বল ব্যাটে আসছে না। এমন অবস্থায় যুজভেন্দ্র চেহেলের শেষ ওভারে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফেলেছিলেন মুশফিকও। তখন তার রান ৩৬ বলে ৩৮। সহজ সে ক্যাচ হাতে রাখতে না পেরে উলটো বাউন্ডারি দিয়ে দেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্টও বোধহয় সেটাই। সেই মুশফিকই বাকিটা করেছেন দুর্বার গতিতে। অপরাজিত থেকেছেন ৪৩ বলে ৬০ রান করে।

‘ক্যাপ্টেন কুল’ মাহমুদউল্লাহ অবদান রেখেছেন ফিনিংস টাচের। তার ১ চার আর ১ ছক্কায় ৭ বলে ১৫ রানের ইনিংসটা গুরুত্বের বিচারে অপরিসীম।

বোলারদের সম্মিলিত প্রয়াসে ইনিংসের মাঝপথেই ম্যাচের চালকের আসনে আসে বাংলাদেশ। বল হাতে শফিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, আফিফ হোসেন, আমিনুল ইসলাব বিপ্লবরা সবাই রেখেছেন অবদান। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ভড়কে রান রেখেছেন নিজেদের নাগালে।

ব্যাটিংয়ে তরুণ নাঈম শেখের আস্থা জাগানো শুরুর পর সৌম্য সরকারের ইনিংস দলকে রেখেছে পথে। শেষটায় সেই ভিতেই নায়ক মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ।  

১৪৯ রানের লক্ষ্যে দারুণ  কাভার ড্রাইভ আর অন ড্রাইভে শুরু করেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু প্রথম ওভারেই দীপক চাহারের অনেক বাইরের বলে স্কয়ার কাটে ডুবেছেন।

শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা পাওয়ার প্লেতে জুতসইভাবে সামলে নেন অভিষিক্ত নাঈম শেখ আর সৌম্য সরকার। উইকেটে ভাষা বুঝতে দুজনেই ছিলেন সতর্ক। পেসার চাহারকে ছক্কায় আগ্রাসণ দেখান তরুণ নাঈম। অফ স্পিনার সুন্দরকে রিভার্স সুইপে ছক্কা মেরে ভরসা যোগান সৌম্য।

দুজনের ব্যাটে পঞ্চাশ পেরোয় বাংলাদেশ। এরপরই বিপদ। লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেল বল করতে এসেই সমস্যায় ফেললেন ব্যাটসম্যানদের। নাঈম শেখ তাকে পড়তে না পেরে ক্যাচ তুলে দেন লং অনে।

উইকেটে বল হুট করেই গতির তারতম্যে ব্যাটসম্যানের বিপাকে ফেলছিল। কোয়ালিটি স্পিনারদের এসব উইকেট থেকে সুবিধা আদায় করা সহজ। যুজভেন্দ্র চেহেল তা-ই দেখালেন। তবে এই সময়টায় পুরো পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে ব্যাট করেছেন মুশফিকুর রহিম আর সৌম্য। দুজনের জুটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল। বাজে ফর্ম থেকে বেরিয়ে সৌম্যকে দেখাচ্ছিল আত্মবিশ্বাসী।

সুন্দরকে রিভার্স সুইপে ছক্কার পর ক্রুনাল পান্ডিয়াকে এগিয়ে এসে ছক্কা মেরেছেন। তবে কঠিন পরিস্থিতি আবার ডট বলও গুনতে হয়েছে বেশ। ৪৮ বলে জুটিতে আসে ৫০। তখন ওভারপ্রতি প্রায় ১০ করে নেওয়ার লক্ষ্য বাংলাদেশের।

সৌম্য থামলেও মুশফিক শেষ অবধি থেকে পূরণ করেন ওই লক্ষ্য। এমন একটা সময়ে বাংলাদেশ জয় পেল, যখন কিনা সাকিব আল হাসানের নিষিদ্ধের ধাক্কায় দেশের ক্রিকেট টালমাটাল।

দিনভর দিল্লির বায়ু দূষণ নিয়ে উদ্বেগ ছিল চরমে। সন্ধ্যা নামতেই অবশ্যই দূষণের মাত্র কমে গেল। কিছুটা ধোঁয়া, কিছুটা কুয়াশায় ভরা পরিস্থিতিতে টস জিতে আগে বল করাই সুবিধা জনক মনে করলেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেট থেকে শুরুতে সুবিধা নেওয়ার চিন্তা থেকেই নিয়েছিলেন। তা কাজেও লেগেছে বেশ।

প্রথম ওভারেই রোহিত শর্মাকে ভেতরে ঢোকানো বলে এলবিডব্লিওতে কাবু করেন শফিউল ইসলাম। তিন বছর পর দলে ফেরা আল-আমিন হোসেন জায়গাই দিলেন না ব্যাটসম্যানদের। স্লোয়ার করেছেন, জায়গায় বল রেখে প্রথম দুই ওভার দিলেন মাত্র ৬ রান।

চাপে পড়া ভারত লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের বলে গড়বড় করে ফেলল। লোকেশ রাহুল থতমত খেয়ে ক্যাচ উঠালেন কাভারে। শ্রেয়াস আইয়ারও ছিলেন নড়বড়ে। দু’বার তুলেও দিয়েছিলেন। জায়গা মতো ফিল্ডার না থাকায় বেঁচে যান। তৃতীয়বার আর রক্ষা হয়নি। বিপ্লবকে উড়াতে গিয়ে লং অনে জমা পড়েন নাঈম শেখের হাতে।

শেখর ধাওয়ান টিকে ছিলেন। দ্রুত রান তুলতে না পারলেও শেষের ঝড়ের আভাস ছিল। কিন্তু ঋশভ পান্তের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝিতেই সেই আভাস বাংলাদেশের ক্ষতির কারণ হয়নি। পুরো ম্যাচে দারুণ লাইন-লেন্থে মেপে বল করা বাংলাদেশ প্রথম অতিরিক্ত দেয় ইনিংসের ১৫তম ওভারে।

আট বোলার ব্যবহার করে মাহমুদউল্লাহ ব্যাটসম্যানদের ব্যস্ত রেখেছেন। ৬ষ্ঠ বোলার হিসেবে বল হাতে পেয়ে আফিফ হোসেন হাঁসফাস করিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। নিজের বলে শিভম দুভেকে দারুণ ক্যাচে ফিরিয়েছেন।

প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ থেকে ভারত শেষ ১০ ওভারে  নিয়েছে আরও ৭৯ রান। যার মধ্যে শেষ ওভার থেকেই এসেছে ১৬ রান। পুরো ইনিংসে ভারতকে ভুগিয়েছে বলের গতি বুঝতে না পারায়। হকচকিয়ে বারবার তারা কাবু হয়েছেন। শেষ দিকে ওয়াশিংটন সুন্দরের ছোট একটা ঝড় না হলে ভারত থামতে পারত আরও আগে। তবু দেড়শোর কাছে গিয়েও বাংলাদেশকে আটকাতে পারেনি ভারত।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ২০ ওভারে  ১৪৮/৬  (রোহিত ৯, শেখর ৪১, রাহুল ১৫, আইয়ার ২২, পান্ত ২৭, দুভে ১, ক্রুনাল ১৫*, সুন্দর ১৪* ; শফিউল ২/৩০,  আল-আমিন ০/২৭, মোস্তাফিজ ০/১৫, আমিনুল ২/২২, সৌম্য ০/১৬, আফিফ ১/১১, মোসাদ্দেক ০/৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১০)

বাংলাদেশ: ১৯.৩ ওভারে ১৫৪/৩  (লিটন ৭, নাঈম ২৬, সৌম্য ৩৯, মুশফিক ৬০* , মাহমুদউল্লাহ ১৫ ; চাহার ১/২৪ , সুন্দর ০/২৫, খলিল  ১/৩৭, চেহেল ১/২৪, ক্রুনাল ০/৩২, দুভে ০/৯ )

ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে

Comments

The Daily Star  | English

Chinmoy followers clash with cops in Ctg; lawyer killed

Bangladesh Sammilita Sanatani Jagaran Jote denies involvement

1h ago