‘কুয়াশা কুয়াশা ভাব কিন্তু আবার গরম লাগে’

Bangladesh
দিল্লিতে অনুশীলনে বাংলাদেশ দল। ছবি: একুশ তাপাদার

দুপুর ১২টায় নেটে অনুশীলন সেরে ফিরছিলেন আফিফ হোসেন। আবহাওয়া কেমন লাগছে, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘দেখছেন না, কুয়াশা কুয়াশা ভাব কিন্তু আবার গরম লাগে।’ নভেম্বরের শুরুতে এমন সময় ঝলমলে রোদ থাকার কথা। কিন্তু দিনের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও সূর্যের দেখা নেই। শীত যে জেঁকে বসেছে মোটেও তেমন নয়। দিল্লির মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণ গোটা আকাশ ছাপিয়ে গেছে, ঢেকে ফেলেছে সূর্য। শুরুতে যে কেউ এসে এমন পরিবেশে ধাক্কা খাবেন। বাংলাদেশ দল অবশ্য দিন চারেক থেকে এমন পরিবেশের সঙ্গে প্রায় মানিয়েই নিয়েছে।

আশেপাশের রাজ্যে শীতের আগমনী সময়ে নাড়া পোড়ানো আর দিওয়ালী উৎসবে রাজধানী জুড়ে ফুটানো লক্ষাধিক পটকার কারণে দিল্লির বাতাসে পোড়া গন্ধ। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড থেকে বলা হয়েছে, দিল্লিতে কিছু কিছু এলাকায় শুক্রবার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক পাঁচশো ছাড়িয়েছে। চারশো ছাড়ালেই সেটাকে গুরুতর ধরা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বৃহস্পতিবার থেকেই দিল্লিতে জরুরী অবস্থা জারি হয়েছে। ৫ তারিখ পর্যন্ত সমস্ত স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ এখানে। দূষণে স্থানীয়দেরই অবস্থা যেখানে কাহিল, বাংলাদেশ দলের কী হাল?

ফিরোজ শাহ কোটলার গ্রাউন্ডে শনিবার (২ নভেম্বর) বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু হয় সকাল ১০টায়। সবার কাছেই একটা করে মাস্ক। কেউ পরছেন, কেউ রেখেছেন হাতে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা জানালেন শুরুতে ধাক্কা খেলেও আসলে ধীরে ধীরে সয়ে উঠছেন তারা। এখন আর সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে হচ্ছে না। নেটে ব্যাটিং শেষে ফেরার পথে মোসাদ্দেক হোসেন বলছিলেন, ‘চারদিন হয়ে গেছে ভাই, এখন একটু স্বাভাবিক লাগছে।’ 

আগের দিন বায়ু দূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে পরিষ্কার হতাশা জানানো কোচ রাসেল ডমিঙ্গো মাস্ক নাড়াতে নাড়াতে বললেন এদিন পরিস্থিতি কিছুটা ভালো, ‘আজকে অনেকটা ভালো। অবশ্যই কিছুটা অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণেও লাগতে (ভালো) পারে।’

রাসেল অভ্যস্ত হলেও স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আর ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির সেই অবস্থা নেই। সারাক্ষণ মাস্ক পরে অনুশীলন চালানো এই দুই কোচ দূষণ প্রশ্নে দিলেন অভিন্ন জবাব। হোটেলের বাইরে অনুশীলনের এই সময়টুকু অস্বস্তিতে ভরা তাদের।

daniel vettori
দিল্লির দূষণে অস্বস্তিতে বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। ছবি: একুশ তাপাদার

অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য বলে গেছেন, দূষণ নিয়ে ভেবে মাথাব্যথা বাড়াতে চাইছেন না তারা, ‘আমরা আলাপ করেছি কন্ডিশন নিয়ে। কিন্তু এটা তো আমাদের হাতে নেই। তাই এই প্রসঙ্গে বেশি মাথা ঘামাচ্ছি না।’

দিল্লিতে এমন বায়ু দূষণের কারণ

দিল্লিতে শীতের আগে আগে প্রতি বছরই হয় এমন বায়ু দূষণ। এই দূষণের সুনির্দিষ্ট দুটো কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক কুশন সরকার।

‘দিল্লিতে কিন্তু এটা নতুন নয়। বায়ু দূষণ দুটো কারণে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে দিওয়ালীতে যে পরিমাণ বাজি বা পটকা ফুটানো হয়েছে তার একটা প্রভাব আছে। অনেক সতর্ক করার পরও দিল্লি পুলিশ এটা থামাতে পারেনি। আরেকটা কারণ হচ্ছে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে নাড়া পোড়ানো। দিল্লির আশেপাশের রাজ্যে এই সময়টায় কৃষকরা নাড়া (অব্যবহৃত ফসল)  পুড়িয়ে ফেলেন। যেহেতু টাকার অভাবের কারণে এগুলো তাদের অন্যভাবে বিনষ্ট করার ব্যবস্থা থাকে না, তাই তারা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেন। তাদের সেই নাড়া পোড়ানোর ধোঁয়া এসে পড়ে দিল্লিতে। এই সময়টায় দিল্লিতে ম্যাচ দেওয়া উচিত নয়।’

ম্যাচে প্রভাব থাকবে কম

ধোঁয়ায় ঢাকা দিল্লি নাগরিকদের অস্বস্তিতে রাখলেও সূচি রাতে হওয়ায় বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে প্রভাব কম পড়ার আশা করা হচ্ছে। এখানকার পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বলছে সন্ধ্যার দিকে দূষণের মাত্রা কিছুটা কমে আসে। বাতাস কিছুটা স্বস্তিময় হয়। যেহেতু খেলা শুরু হবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় এবং ম্যাচটা টি-টোয়েন্টি সংস্করণের, সেকারণেই অনুশীলনের মতো খেলায় প্রভাব ততটা নাও পড়তে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Chinmoy followers clash with cops in Ctg; lawyer killed

Bangladesh Sammilita Sanatani Jagaran Jote denies involvement

1h ago