গ্রামবাসীর ওপর ৩০ শিয়ালের সংঘবদ্ধ হামলায় আহত ২৪
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ি গ্রামে একদল শিয়ালের আক্রমণে অন্তত ২৪ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। গ্রামবাসী পরে প্রতিরোধ গড়ে তুলে একটি শিয়ালকে মেরেছে। আতংকিত গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন।
গত বুধবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই প্রায় ৩০টি শিয়াল দল বেঁধে গ্রামবাসীর ওপর হামলা করে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে হামলা চালিয়েছে শিয়াল।
শিয়ালের ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। শিয়ালে কামড়ানো সবাই বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে জলাতঙ্কের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক শফিক আমিন কাজল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “গত বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ জনকে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।”
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে টানা একঘণ্টা গ্রামবাসী ও শিয়ালের দলের সংঘর্ষ চলে। গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে পরে লোকালয় থেকে পালিয়ে যায় শিয়ালগুলো।
শিয়াল আতংকে লাঠি নিয়ে গ্রামবাসীদের পাহারা দিতে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার বিকালেও। শিশু-কিশোররা স্কুলে না গিয়ে বড়দের সঙ্গে লাঠি নিয়ে গ্রামে ঘুরছে।
সেখানে তুশরাত ও আবদুল্লাহ নামে দুই ভাইবোনকে দেখা যায় যারা কাঁধে ব্যাগ ও হাতে লাঠি নিয়ে প্রাইভেট টিউটরের বাড়িতে যাচ্ছে। তুশরাত তৃতীয় শ্রেণিতে ও আবদুল্লাহ নার্সারিতে পড়ে। তাদের দুইজনের হাতেই ছিল বাঁশের কঞ্চি।
শিয়ালের কামড়ে আহত বেতগাড়ি গ্রামের ওমিসা বেগম (৩৫) জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়িতে কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে বাড়িতে একটি শিয়াল ঢুকে তাকে কামড়ানো শুরু করে। তার হাতে ও পায়ে কামড় দিয়ে পালিয়ে গেছে শিয়ালটি। পুরো শরীরে ব্যথা অনুভূত হওয়ায় তিনি কোনো কাজ করতে পারছেন না এখন।
শিয়ালের কামড় খেয়েছেন ওই গ্রামের ময়না বেগম (৩৫) নামের আরেক নারী। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়িতে রান্না করছিলেন। হঠাৎ করেন তার ঘরে শিয়াল ঢুকে পড়ে তাকে কামড়ে গুরুতর আহত করে। তার দুই হাতে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায় শিয়ালটি। হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।
গ্রামের বাসিন্দা মো. মজনু মিয়া বাবু (৩৭) জানান, গ্রামের অনেকেই জঙ্গল কেটে বাড়ি তৈরি করছেন। একারণে শিয়ালগুলো ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। গ্রামের বাসিন্দারা খুব আতংকে রয়েছেন। ছেলেমেয়েরা ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে না। শিয়ালগুলো বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে গ্রামে আক্রমণ করেছে। আট-দশটি গরু, ছাগলকেও কামড় দিয়েছে শিয়ালগুলো। বুধবার রাতে একটি শিয়ালকে ধরে মেরে ফেলা হয়েছে।
গ্রামবাসীরা বলেছে, শিয়াল আতঙ্কে ভুগছে সবাই। শিয়ালের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্যে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফুয়ারা খাতুন জানান, গতকাল থেকে একদল শিয়াল কিছু গ্রামবাসীকে কামড়েছে। আমি হাসপাতালে খবর নিয়েছি। সম্ভবত বাসস্থান এবং খাদ্য সংকটের কারণে তারা মানুষদের আক্রমণ করছে। আমরা শিয়ালগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
Comments