দেশের ক্রিকেটের ভিত নাড়িয়ে দেওয়া হার
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান রাখঢাক না করেই বৃষ্টির বদান্যতায় বাঁচতে চেয়েছিলেন। সেই বৃষ্টি কথা রেখে বাংলাদেশকে তো বাঁচিয়েই দিয়েছিল। কিন্তু যে দল আগেই ডুবে মরে আছে, তাদের আর জোর করে বাঁচাতে পারে কে! সারাদিনই বৃষ্টি ঢাল হয়ে জিইয়ে রেখেছিল বাংলাদেশের আশা। কিন্তু তার ফাঁকফোকরে যে ১০৪ বল খেলা হলো, তাতেই টিকতে পারলেন না সাকিবরা।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টেস্টের নবীন দল আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। আগের দিনের ৬ উইকেটে ১৩৬ রানের সঙ্গে আর মাত্র ৩৭ রান যোগ করে পড়েছে বাকি ৪ উইকেট।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামে সারা দিনই ছিল মেঘের ঘনঘটা, ছিল বৃষ্টির দাপট। সকালে তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যায় প্রথম সেশন। দুপুরে বৃষ্টি থামার পর ৬৩ ওভার খেলা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৩ বল খেলা হতেই ফের নামে বৃষ্টি। ক্ষণেই বাড়তে থাকে বৃষ্টির মাত্রা। আর খেলা হবে কিনা তা নিয়েই দেখা দেয় সংশয়।
বেলা ৩টায় বৃষ্টি থামলে মাঠ পরিচর্যা করে ৪টা ২০ মিনিটে শুরু হয় খেলা। আম্পায়াররা ৭০ মিনিট খেলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৮.৩ ওভার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ আসে সাকিব-সৌম্যদের সামনে।
পুরো টেস্টের কথা চিন্তা করলে, এই টেস্ট বাঁচানোর বেশ সহজ একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এমন সুযোগেও পারেননি সাকিবরা। আফগানদের সামনে নিজেদের দৈন্যদশা দেখিয়ে তারা টেকেননি এক ঘণ্টাও।
শুরুটা অধিনায়ক সাকিবকে দিয়েই। নিজে অধিনায়ক, দায়িত্ব তারই বেশি। কিন্তু কীভাবে চরম দায়িত্বহীন ব্যাট করতে হয় তার উদাহরণই যেন দেখালেন তিনি। বৃষ্টির পর নেমে একদম প্রথম বলেই খেললেন ব্যাখ্যাতীত এক শট। চায়নাম্যান জহির খানের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে যেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরত যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। রানের কোনো চাপ নেই, কেবল টিকে থাকতে হবে। কিন্তু সাকিব হাঁটলেন ভিন্ন রাস্তায়।
এরপর বাকি সময়টুকু টেল এন্ডারদের নিয়ে লড়েছেন সৌম্য সরকার। তার আগে ব্যাটিংয়ে পটু মেহেদী হাসান মিরাজ নিজে আউট হওয়ার সঙ্গে খুইয়ে গেছেন রিভিউ। রশিদ খানের লেগ স্পিনে লাইন মিস করে পরিষ্কার এলবিডব্লিও হয়েছিলেন। তবু হাতে থাকা একমাত্র রিভিউ নষ্ট করেন।
খানিকপর সেই রিভিউ যে কত দামি বুঝেছেন তাইজুল ইসলাম। রশিদের বলে এবার পরিষ্কার ইনসাইড এজ হলেও আম্পায়ার পল উইলসন তাকে দিয়ে দেন আউট। কিন্তু রিভিউ না থাকায় আক্ষেপে পুড়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। শেষ উইকেট নিয়ে সৌম্য বাকি পথ পাড়ি দিতে পারেন কিনা তা নিয়ে ছিল উত্তেজনা। পারেননি সৌম্য। ২০ বল আগে রশিদের বলে তার ব্যাট থেকে ক্যাচ বেরিয়ে যায় শর্ট লেগে।
স্তব্ধ হয়ে খানিক্ষন ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিলেন সৌম্য। অন্যদিকে বুনো উল্লাসে তখন জহুর আহমেদ মাতোয়ারা করে ফেলেছে আফগানরা। সৌম্যর মতো স্তব্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারের জন্যই কেবল নয়, হারের ধরনেও নিজেদের দৈন্যদশা জানান দিল বাংলাদেশ।
ক্রিকেট বিশ্ব দেখল বৃষ্টির অনেক সহায়তা পেয়েও মাত্র এক ঘণ্টা ব্যাট করেও ম্যাচ বাঁচাতে জানে না বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান প্রথম ইনিংস: ৩৪২
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২০৫
আফগানিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ২৬০
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৬১.৪ ওভারে ১৭৩ (লিটন ৯, সাদমান ৪১, মোসাদ্দেক ১২, মুশফিক ২৩, মুমিনুল ৩, সাকিব ৪৪, মাহমুদউল্লাহ ৭, সৌম্য ১৫, মিরাজ ১২, তাইজুল ০, নাঈম ১*; ইয়ামিন ০/১৪, নবি ১/৩৯, রশিদ ৬/৪৯, জহির ৩/৫৯, কাইস ০/৬ )।
Comments