আতিয়া মহলে অভিযান: পিবিআই’র অভিযোগপত্রে ৩ জঙ্গি
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহলে আলোচিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ঘটনায় তিন নব্য জেএমবি সদস্যকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
২০১৭ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এ জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে জঙ্গি আস্তানার বাইরে গ্রেনেড হামলায় র্যাবের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন।
এ ঘটনার প্রায় ৩০ মাস পর, শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই এর পরিদর্শক দেওয়ান আবুল হোসেন।
এতে জহুরুল হক (২৫), তার স্ত্রী আর্জিনা বেগম (১৯) ও মোহাম্মদ হাসান (২৬) নামের তিন জঙ্গিকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), যা বর্তমানে নব্য জেএমবি হিসেবে পরিচিত, এর সামরিক শাখার আত্মঘাতী সদস্য।
জহুরুল ও তার স্ত্রী আর্জিনাকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে এবং হাসানকে কুমিল্লার চান্দিনা থেকে ২০১৭ সালে পৃথক জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় আটক করা হয় এবং পরবর্তীতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাদেরকে আতিয়া মহলের মামলার আটক দেখানো হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা দেওয়ান আবুল হোসেন জানান, “এ মামলায় মূলত আটজন আসামির নাম রয়েছে অভিযোগপত্রে। তবে এর মধ্যে পাঁচজনই পৃথক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদেরকে মামলা হতে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।”
নিহত পাঁচ জঙ্গির মধ্যে চারজন আতিয়া মহলে অভিযানের সময় মারা যায় এবং আরেকজন মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হয় বলে জানান তিনি।
আতিয়া মহলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান সমাপ্তের পরপরই মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাট এলাকায় দুটি পৃথক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।
নাসিরপুরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে সপরিবারে নিহত জঙ্গি লোকমান হোসেন ওরফে মোশাররফ হোসেন ওরফে সোহেলই নব্য জেএমবির এই আত্মঘাতী দলটির নেতা ছিলেন বলেন জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তিনি জানান, আতিয়া মহলে অভিযানে নিহত চার জঙ্গির মধ্যে মাত্র দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন জহুরুল হক এর বোন মনজিয়ারা বেগম ওরফে মর্জিনা বেগম এবং তামিম আহমেদ ফরাজী।
বাকি দুইজনের পরিচয় এখনো সনাক্ত করা যায়নি বলেও জানান তিনি।
পিবিআই পরিদর্শক আবুল হোসেন আরও বলেন, এই জঙ্গি গ্রুপটির বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। আতিয়া মহল থেকে ৬০ ধরনের বিস্ফোরক সামগ্রীর আলামত পাওয়া গেছে। তারা ইতোমধ্যে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বানিয়েছিল এবং আরও উন্নতমানের বিস্ফোরক বানানোর সামগ্রী তাদের কাছে ছিল।
তিনি বলেন, জঙ্গি অভিযান চলাকালীন তারা যতটা সম্ভব আলামত নষ্ট করে দিয়েছে ফলে তাদের পরিকল্পনা কী ছিল জানা যায়নি। এছাড়াও মূল পরিকল্পনাকারী সোহেলের মৃত্যুর কারণে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
২০১৭ সালের ২৪ মার্চ ভোররাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহল নামের এক বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা রয়েছে জানতে পেরে বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ।
পরে ২৫ মার্চ থেকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান “অপারেশন টোয়াইলাইট” শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেদিন সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের অদূরে গ্রেনেড হামলা চালায় আরেকটি জঙ্গি দল।
এ হামলায় ঘটনাস্থলে দুই পুলিশসদস্যসহ ছয়জন নিহত হন এবং হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পরবর্তীতে মারা যান র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ।
আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও বাইরে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে এবং প্রাথমিক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে পুলিশ।
পরবর্তীতে সে বছরের ৯ মে, পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় পিবিআই এর হাতে এবং ১৩ মে থেকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই।
গত ২২ জুলাই পিবিআই গ্রেনেড হামলা মামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে যাতে উল্লেখ করা হয় যে গ্রেনেড হামলার সাথে জড়িত তিন জঙ্গিই মৌলভীবাজারে পৃথক জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছে।
Comments