অপরাধ কী শিক্ষক-গবেষকদেরই?
প্রায় সব বিষয়ের মতো, ভেজাল বা দূষণের ক্ষেত্রেও এগিয়ে আসতে হয়েছে আদালতকে। বাংলাদেশের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সরকারি সংস্থা বিএসটিআই গত ২৫ জুন আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে জানায়, তাদের অনুমোদিত ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষায় জনস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। একই দিন (২৫ জুন ২০১৯) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োকেমিক্যাল রিসার্স সেন্টারের করা এই গবেষণার ফলাফলে দুধে এন্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্টসহ জনস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর আরও কিছু উপাদান পাওয়া যায়।
সাধারণ জনমানুষের মনে প্রশ্ন আসে, সরকারের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেখানে ক্ষতিকর কিছু পেল না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষকেরা এন্টিবায়োটিকের মতো ক্ষতিকর উপাদান পেলেন কীভাবে? ঘটনা বা রহস্য কী? এই প্রশ্ন এখন আদালতেরও। দুধসহ আরও কয়েকটি খাদ্যপণ্যে দূষণের প্রসঙ্গ এসেছে। এই আলোচনা দুধের মধ্যে সীমিত রাখছি।
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে ফার্মেসি অনুষদের একদল শিক্ষক যে গবেষণা করেছেন, তার ফল এখন পর্যন্ত কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। কোম্পানিগুলো বক্তব্য, অধ্যাপক ফারুক দেশীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে, বিদেশি কোম্পানির পক্ষে কাজ করছেন। উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন, অধ্যাপক ফারুক যেন তার গবেষণার তথ্য প্রত্যাহার করে নেন। মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দিন বলেছেন, “তাকে (অধ্যাপক ফারুক) সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত সচিব বলছেন, “গবেষণার ফল ঠিক নেই। গবেষণা প্রতিবেদন অধ্যাপক ফারুক এভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। আগে জার্নালে প্রকাশ করতে হবে গবেষণা প্রতিবেদন।”
গবেষণার ফল ঠিক নেই, নিশ্চিত হলেন কীভাবে? আপনারা কি কোনো পরীক্ষা বা গবেষণা করেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী ওয়াসিউদ্দিন একাত্তর টেলিভিশনকে বলেছেন, “আমরা গবেষণা করবো। তাকে (অধ্যাপক ফারুককে) জিজ্ঞেস করেন তিনি এভাবে প্রকাশ করতে পারেন কী-না?”
লক্ষণীয় বিষয়, অধ্যাপক ফারুকের নেতৃত্বাধীন শিক্ষকরা গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। আর সরকারের অতিরিক্ত সচিব কোনো গবেষণা না করে ‘করবেন’ এই চুক্তিতে অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
২. বিএসটিআই তাদের পরীক্ষায় দুধে ক্ষতিকর উপাদান পেল না কেন?
প্রথমত, বিএসটিআইয়ের এন্টিবায়োটিক সনাক্তের সক্ষমতা নেই। বিএসটিআই ৯টি প্যারামিটার বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফারুকসহ তার দল পরীক্ষা করেছে ১৯টি প্যারামিটার বিবেচনায় নিয়ে। উন্নত বিশ্বে প্রায় ৩০টি প্যারামিটার বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
দ্বিতীয়ত, খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদান বিষয়ক যে আলোচনা এতদিন ধরে চলছে, বিএসটিআই কখনো বলেনি যে তাদের এন্টিবায়োটিক সনাক্তের সক্ষমতা নেই। তা গোপন করে দুধসহ খাদ্যপণ্যের অনুমোদন দিয়েছে, আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দ্য ডেইলি স্টার প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে, বিএসটিআইয়ের এন্টিবায়োটিক সনাক্তের সক্ষমতা নেই। তারপর বিষয়টি নজরে এসেছে। বিএসটিআই নিজে থেকে স্বীকার করেনি।
সক্ষমতাহীন ও বহু অনৈতিক অভিযোগে অভিযুক্ত বিএসটিআই মানদণ্ড অনুসরণ করে কোম্পানিগুলো দুধ বাজারে বিক্রি করছে।
৩. অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কেন আপনি জার্নালে প্রকাশ না করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করলেন গবেষণা প্রতিবেদন? বলা হচ্ছে, এটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়, আপনি এটা করতে পারেন না।
অধ্যাপক ফারুক বলছিলেন, “আমি ভালো করেই জানি কোন গবেষণা পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশ করতে হয়, কোনটা নয়। ৪৩ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণা করছি। এ বিষয়ে আমাকে শেখানোর কিছু নেই। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ক কোনো গবেষণার ফলাফল জনগণকে তাৎক্ষণিকভাবে না জানালে আরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সতর্ক করা সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যেই পড়ে।”
এই প্রতিবেদনের ফলে দেশীয় কোম্পানি, খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ফারুক বলছিলেন, “কারোরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিলো না। আমরা সব সময় দেশীয় কোম্পানির পক্ষে। তারা বহু অর্থ বিনিয়োগ করেছে। আর অল্প কিছু অর্থ ব্যয় করে খুব সহজে দুধ দূষণমুক্ত করতে পারে। সেটা করলে জনআস্থা বাড়তো, ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা ছিলো না।’
সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব বলছেন আপনারা এটা করতে পারেন না?
“আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, শিক্ষকতা করছি। জনগণের অর্থে পড়াশোনা করেছি। গবেষণা করে জনগণকে সতর্ক করতে পারবো না? উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ‘নির্দেশ’ অনুযায়ী গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে? পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশের পর বিজ্ঞানীদের নিয়ে আলোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গেলে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতো। জনস্বাস্থ্যের জন্যে এতটা ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্যে দেড় বছর অপেক্ষা করা প্রয়োজন ছিলো? বিবেক ও দায়বদ্ধতা বিবেচনায় নিয়েই আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। আর এ ধরনের প্রতিবেদন আমরা এই প্রথম প্রকাশ করছি না, বহু বছর ধরে করছি।”
এর আগে কী বিষয়ে গবেষণা করেছেন?
অধ্যাপক ফারুক বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য ও দেশের স্বার্থে-দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সারাজীবনই গবেষণা করেছি, প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। আমাদের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা নিজেরা এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। একটু অনুসন্ধান করলেই জানতে পারবেন, আমরা দেশ-দেশের মানুষ- দেশের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে না বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গবেষণা করি।”
৪. অধ্যাপক ফারুক নিজের কথা বললেন না, কিছু ইঙ্গিত দিলেন। তার প্রেক্ষিতে গত কয়েকদিন অনুসন্ধান করে যা তথ্য পাওয়া গেল, তা মোটামুটি এমন-
ক. অধ্যাপক ফারুক ও তার দল ২০১২ সালে গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন যে, খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মানব দেহের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। যার প্রেক্ষিতে ফরমালিন বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি হয় এবং সরকার ফরমালিন আমদানি ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইন করে।
খ. ২০০২ সালের গবেষণায় দুটি এনার্জি ড্রিংকে অ্যালকোহলের সন্ধান পেয়েছিলেন। সেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর এনার্জি ড্রিংক দুটি নিষিদ্ধ করে শিল্প মন্ত্রণালয়।
গ. ১৯৮৪ সালে আয়ুর্বেদীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর ‘মৃতসঞ্জীবনী সুরা’ ও মৃতসঞ্জীবনী সুধা’র মধ্যে অ্যালকোহলের উপস্থিতি পান অধ্যাপক ফারুক তার গবেষণায়। সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর পণ্য দুটি নিষিদ্ধ করে সরকার।
ঘ. ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো কীভাবে সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি লঙ্ঘন করে অনৈতিক ও দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করছে, তা তুলে ধরা হয়েছিলো গবেষণা প্রতিবেদনে।
১৯৮২ সালে ওষুধ নীতি প্রণয়নকালে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওষুধগুলো সনাক্ত করে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন অধ্যাপক ফারুক। যা ছিলো শতভাগ দেশীয় কোম্পানির পক্ষে। গণমাধ্যমে যা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিলো।
উল্লেখ্য যে, তখন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রলোভন ও তীব্র বিরোধিতা মোকাবিলা করে গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন অধ্যাপক ফারুক। তার প্রেক্ষিতে যে যুগান্তকারী ওষুধ নীতি এবং দেশীয় ওষুধ কোম্পানির বিকাশ তা কমবেশি সবারই জানা। সেই অধ্যাপক ফারুকসহ ফার্মেসি অনুষদের গবেষক শিক্ষকদের এখন বলা হচ্ছে, তারা বিদেশী কোম্পানির স্বার্থ দেখছেন!
অনুসন্ধানে জানা যায়, এমন অভিযোগের নেপথ্যে স্বার্থকেন্দ্রীক বিষয় কাজ করছে। অধ্যাপক ফারুক এমন শিক্ষকদের গবেষণা দলে নিয়েছেন, যারা কোনো কোম্পানির কনসালটেন্সির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।
৫. ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগের চেয়ারম্যানরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন, “এই গবেষণাকে ঢাবির বলা যাবে না। এটি ফার্মেসি বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ব্যক্তিগত গবেষণা। এর দায় ফার্মেসি অনুষদ নেবে না। ব্যক্তিগত গবেষণার সঙ্গে অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
উল্লেখ্য যে, অধ্যাপক ফারুক এ মাসের ১ তারিখ থেকে অবসরে গেছেন। তিনি প্রথম গবেষণার ফল প্রকাশ করেছেন ২৫ জুন। অর্থাৎ গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ফার্মেসি অনুষদের অধ্যাপক হিসেবে, অবসরের পরে নয়।
এই গবেষণা ও চার চেয়ারম্যানের দায় না নেওয়া বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে কথা হচ্ছিলো ফার্মেসি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. এস এম আবদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, “আমি ফ্যাকাল্টির ডীন, অথচ এমন একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগে আমার সঙ্গে আলোচনা বা আমাকে জানানোও হয়নি। এমনকি বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গেও আলোচনা করেননি। এ ধরণের বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর আগে ডীন ও শিক্ষকদের সঙ্গে অবশ্যই আলোচনা করা দরকার ছিলো।”
গবেষণা বিষয়ে আপনার অবস্থান বা বক্তব্য কী?
“আামাদের বিভাগে সব সময়ই অনেকগুলো গবেষণা হয়। কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এক একটি দল করে গবেষণা করেন। বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের সব সময় হয়ত জানাও থাকে না কারা কোন বিষয়ে গবেষণা করছেন। অন্যরা অবহিত হন প্রতিবেদন প্রকাশের পর। সুতরাং যিনি বা যারা গবেষণা করছেন, তার দায় চেয়ারম্যান বা অন্য শিক্ষকদের নেওয়ার ব্যাপার নেই। অধ্যাপক ফারুক ও তার দল যেভাবে গবেষণা করেছেন, আমি যথোপযুক্ত মনে করি। আর কোনো গবেষণা প্রতিবেদন পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশ হবে, কোনটা গণমাধ্যমকে জানাতে হবে, তার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটা অনেকটা যারা গবেষণা করছেন, তাদের বিবেচনাবোধের উপর নির্ভর করে। এই গবেষণাটি পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশের চেয়ে মানুষকে জানানো বেশি জরুরি ছিলো।”
জানা যায়, ফার্মেসি অনুষদের চেয়ারম্যানের অনুমোদনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত অর্থে এই গবেষণা কর্ম সম্পন্ন হয়েছে। অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ বাছারের কাছে টেলিফোনে জানতে চেয়েছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষকরা তো বহু বছর ধরে গবেষণা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। হঠাৎ করে এই গবেষণা নিয়ে আপনারা ‘দায়’ না নেওয়ার অবস্থান নিলেন কেনো?
ড. সীতেশ বলেন, “গবেষণার ফলাফল নয়, যেভাবে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। যখন গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তখন আমরা কথা বলিনি। সংসদে আলোচনা করে যখন বলেছে, ফার্মেসি অনুষদ মিথ্যা গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তখন আমরা বলেছি এটা ফার্মেসি অনুষদের গবেষণা নয়।”
ফার্মেসী অনুষদের অনুমোদন নিয়েই তো গবেষণা করা হয়েছে। দায় নিচ্ছেন না কেনো, গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল সঠিক মনে করছেন না?
“গবেষণা প্রতিবেদন তো বিতর্কিত হয়ে গেছে। সরকার বিব্রত হয় ও বিতর্কিত প্রতিবেদনের দায় আমরা নিতে পারি না।”
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে সরকারের ‘বিব্রত’ হওয়া নিয়ে এত চিন্তা করছেন কেনো? এক্ষেত্রে একটি অভিযোগ অনেকে করছেন যে, আপনারা যারা বিভিন্ন কোম্পানির কনসালটেন্ট তারা এই গবেষণা প্রতিবেদনের বিরোধিতা করছেন। এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা আছে?
“আমি স্কয়ার হাসপাতালে কনসালটেন্সি করি, সেখানে গবেষণাও করি। হাসপাতালের সঙ্গে তো দুধ বা অন্য খাদ্যপণ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।”
আপনি শিক্ষক, অধ্যাপক ফারুকও শিক্ষক। তাহলে শিক্ষকের পাশে থাকছেন না কেনো?
“তিনি তো আমাদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছেন। তবে এই গবেষণা ছাড়া, তার ভবিষ্যতের সব পজিটিভ কাজের সঙ্গে থাকবো।”
এটাকে পজিটিভ কাজ মনে করছেন না?
“এটাও পজেটিভ...এটা নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। তার ভবিষ্যতের পজিটিভ কাজে পাশে থাকবো...।”
৬. অধ্যাপক ফারুক বিতর্কের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা করে দুধে আরও বেশি পরিমাণে এন্টিবায়োটিক পেয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত নির্ভরযোগ্য কোনো গবেষণাগারে পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরকার বা কোম্পানিগুলো এ কথায় সারা দেয়নি। আদালত চারটি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ফুড সেফটি ইনস্টিটিউট (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ), বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), আইসিডিডিআরবি ও সাভারের প্রাণিসম্পদ ইনস্টিটিউট থেকে নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএসটিআই আর বিসিএসআইআর যা সায়েন্স ল্যাবরেটরি হিসেবে পরিচিত, তাদের মান প্রায় একই রকম। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের যে অবস্থান এবং তার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ গবেষণাগারে পরীক্ষা কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি। পরীক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নমুনা সংগ্রহ।
কোম্পানিগুলো যদি নমুনা সরবরাহ করে, বাজারের নমুনার সঙ্গে তার মিল নাও থাকতে পারে। বিএসটিআই নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান নয়। তারা নমুনা সংগ্রহ করে দিলে(যদি বাজার থেকে কিনেও দেয়) তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ নমুনা সংগ্রহ নিয়ে বিএসটিআইয়ের বিরুদ্ধে বহুবিধ অভিযোগ আছে। আইসিডিডিআরবি’র মত প্রতিষ্ঠান যদি নিজেরা বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে, যা পূর্বে কোম্পানি বা বিএসটিআই জানবে না যে কোথা থেকে সংগ্রহ করবে, তাহলে সঠিক ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
৭. দুধে সিসা-ডিটারজেন্ট না এন্টিবায়োটিক, ঠিক কী উপাদান আছে, তার চেয়ে বড় বিষয় জনস্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর উপাদান আছে কী-না। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আদালতে সর্বশেষ যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, তাতেও ক্ষতিকর উপাদান থাকার কথা বলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ ও পাবনা অঞ্চলে প্রতিদিন উৎপাদিত দুধের পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ লিটার। খামারিদের থেকে ৩০-৪০% দুধ কেনা কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। বিপদে পড়েছেন খামারিরা।
সরকার ও কোম্পানিগুলো অভিযুক্ত করছে শিক্ষক-গবেষকদের।
দুধ এন্টিবায়োটিক, সিসামুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছেন না সরকার বা কোম্পানিগুলো।
আদালত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চাইছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো করছে টালবাহানা।
অবশ্যই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবে তা জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে নয়।
s.mortoza@gmail.com
Comments