ধোনিও কাঁদতে জানেন!
মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার? না-কি আরও কম? জীবনে কতবার বাইশ গজে এমন তীব্র গতির দৌড়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। কিন্তু এবার আর পারলেন না মহেন্দ্র সিং ধোনি। পারলেন না ভারতকে ফাইনালে তুলতে। রাজা ধোনির শেষটাও হলো না রাজার মতো। মাঠ ছেড়ে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কঠিন পরিস্থিতিতেও বরাবরই নির্বিকার ধোনিও সামলাতে পারলেন না আবেগের স্রোত। মানুষ দেখল, ধোনিও কাঁদতে জানেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচটা নিশ্চিতভাবেই ধোনির শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। কিন্তু শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচও কি-না তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকল। ঘটা করে বিদায় না নিলেও এই ম্যাচটা ধোনির শেষ ম্যাচ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ফাইনালে যেতে ১১ বলে লাগত ২৫ রান। লোকি ফার্গুসেনের লেগ স্টাম্পের উপর কোমর সমান উচ্চতায় লাফানো বল কোনো রকমে স্কয়ার লেগে ঠেলেই দৌড় ধোনির। এক রানকে ক্যারিয়ারে কতবারই দুই রান বানিয়েছেন। এই মাপজোকের কারণে এই জায়গায় তিনি দুনিয়া সেরা। কিন্তু আসল জায়গায় মাপজোকটা হয়ে গেল গড়বড়। না-কি অতিমানবীয় থ্রোতে ঠিকঠাক গতিও ভড়কে দিলেন স্কয়ার লেগে থাকা মার্টিন গাপটিল?
দুভাবেই ভাবা যেতে পারে। গাপটিলের ক্ষীপ্র থ্রো যখন স্টাম্প ভাঙছে, ধোনির ব্যাট তখন লাইন ছুঁইছুঁই অবস্থা। কিন্তু লাইন তো পেরোতে পারল না, ভারতও স্পর্শ করতে পারল না কাপ। এমনকি ফাইনালও অনেক কাছে গিয়ে থাকল যোজন যোজন দূরত্বে।
পুরো টুর্নামেন্টেই ধোনির ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিন রানআউট না হলে হয়তো শেষটা করেই ফেলতেন। এই বয়সে এসেও তো কদিন আগে আইপিএলে আরও কঠিন সমীকরণ মিলিয়েছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ফিনিশার তার শেষ ফিনিশিং টাচটাই আর দিতে পারলেন না। তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে উঠা প্রশ্নের জবাবও পারলেন না দিতে।
সপ্তম উইকেটে ১১৬ রানের জুটিতে ৫৯ বলে ৭৭ রান রবীন্দ্র জাদেজার। ধোনি তখন করেন ৪৫ বলে ৩২ রান। পরে তার ইনিংস থেমেছে ৭২ বলে ৫০ রানে। আরেকটু মারতে পারতেন কি-না সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্ন উঠেছিল বিরাট কোহলির কাছে। কোহলি বোঝালেন এই সময় এক পাশ ধরে রাখা কতটা দরকার ছিল।
ধোনি মিটিয়েছেন দলের চাহিদা। যদিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার এই চাহিদা মেটানো নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠেছিল। মারতে চাইছেন না ধোনি, না-কি মারতে পারছেন না। এই নিয়ে থাকল তর্ক। তবে এই বিশ্বকাপ যে ধোনির মতো হয়নি তা নিয়ে বোধহয় তর্ক নেই। ৯ ম্যাচের ৮ ইনিংস ব্যাট করে ২৭৩ রান করেছেন। গড় ৪৫.৫০। স্ট্রাইক রেট ৮৭.৭৮। সাধারণ মানের কেউ হলে এই পরিসংখ্যানে বেশ তুষ্টি থাকত। কিন্তু ধোনি তো সাধারণ মানের নন। বিশ্বকাপে তার সাধারণ মানে নেমে যাওয়াই তাই বড় খবর।
Comments