জেতার তাড়নারই তো ছিল ঘাটতি

বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটায় যথেষ্ট বারুদের অভাব কি ছিল বাংলাদেশের? না হলে শরীরী ভাষা হবে কেন এমন! মোস্তাফিজুর রহমান পাঁচ উইকেট পেয়ে গেছেন বটে, কিন্তু ছিলেন বেজায় খরুচে। এক মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া বাকিরাও একই। সাদামাটা বোলিংয়ের সঙ্গে দুর্বল ফিল্ডিং। অবিশ্বাস্য সাকিব আল হাসান ছাড়া ব্যাট হাতে অন্য কারোরই যেন করার নেই কিছু। বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচটাতেই যেন বাংলাদেশকে দেখাল সবচেয়ে বিবর্ণ।

লর্ডসে আগে ব্যাট করা পাকিস্তানকে ৩১৫ রান দিয়ে দেওয়াতে ছিল বোলারদের বদান্যতা। তবু এই উইকেটে ৩১৬ রান তোলা খুবই সম্ভব ছিল। যথেষ্ট তাড়নার অভাবে হয়নি কিছুই। ২২১ রানে আটকে বাংলাদেশ হেরেছে ৯৪ রানের বড় ব্যবধানে। সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ থাকতে পারল না পাঁচেও। দেশে ফেরার আগে পেল না সান্ত্বনাও। এক শাহিন আফ্রিদিই ধসিয়ে দেন বাংলাদেশকে। ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

৩১৬ রান তাড়ায় আপত্তিকর শুরু করেন তামিম ইকবাল। পুরো বিশ্বকাপে ধুঁকতে থাকা এই ওপেনার ছিলেন জড়সড়। তার গুটিয়ে যাওয়ার মানসিকতায় ঝাঁজ পান পাক বোলাররা। সৌম্য সরকার নিজেকে করতে পারতেন আলাদা। একবার জীবন পেয়ে চার বাউন্ডারি মেরে ফুরফুরে কিছুর আভাস দিতেই নিভেছেন বাজে শটে।

আর তামিম। তিনি আজও ২১ বল নষ্ট করে ৮ রান করে বল স্টাম্পে টেনে বোল্ড হয়েছেন। ঠিক আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও প্রায় একইরকম আউট হয়েছিলেন তামিম।

তিনে নেমে প্রতিদিন যিনি বাঁচান, সেই সাকিব এদিনও ত্রাণকর্তা। উইকেটে এসেই রান বের করা যে কত সহজ দেখাচ্ছিলেন তামিমকে। পরে দেখিয়েছেন বাকিদের। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা দশ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ঢুকে গেছেন এদিন। টুর্নামেন্টে ৮ ইনিংসের সাতবারই পঞ্চাশ ছাড়িয়ে নিজের রান নিয়ে গেছেন ছয়শো ছাড়িয়ে।

কিন্তু সাকিব একা আর কত। মুশফিকুর রহিম তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি। ১৯ বলে ১৬ করে ওয়াহাব রিয়াজের বলে স্টাম্প খুইয়েছেন। সঙ্গ দিচ্ছিলেন লিটন দাস। চতুর্থ উইকেটে তাদের ৫৮ রানের জুটিই একমাত্র পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি। কিন্তু ভারত ম্যাচের মতো এদিনও লিটন আউট হয়েছে একেবারে ভুল সময়ে। ৩২ রান করে তার আউটের পর আগের ম্যাচের মতোই তাল কেটেছে বাংলাদেশের।

স্লোয়ারে লিটনকে কাবু করার পর শাহিন আফ্রিদি সাকিবকে ফেরান বাড়তি বাউন্স দিয়ে। মাহমুদউল্লাহ, সাইফুদ্দিনকেও দাঁড়াতে দেননি তিনি। শেষে ফেরান মোস্তাফিজকে। দ্য ফিজের মতো তিনিও পাঁচ উইকেট (মূলত ৬) নিয়ে লর্ডসের ওয়ানডে অনার্স বোর্ডে নাম উঠিয়েছেন শাহিন। কিন্তু দুই পাঁচ উইকেটের তফাৎ কতটুকু তা দেখেছে লর্ডস।

উপরের দিকের ব্যটসম্যানদের দায়িত্বহীনতায় মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, সাইফুদ্দিনরা অবিশ্বাস্য কিছু করতে পারেননি। তেমন কিছু করতে হলে যে মানসিক শক্তি দরকার, তাও হয়ত মজুদ ছিল না তাদের। এদিন বাংলাদেশ কোনো বিভাগেই জেতার মতো ইন্টেন্ট দেখাতে পারেনি। টুর্নামেন্টের হিসাব-নিকাশ চুকে যাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকতার জন্য মনস্তাত্ত্বিকভাবেও যেন ছিল নেতিয়ে পড়ার আমেজ।

টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে দ্রুত ফখর জামানকে ফেরানো গেল বটে। তবে বাকি ঘন্টা দেড়েকই আভাস পাওয়া যায় কী হতে যাচ্ছে। যে ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে, সে ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে শরীরী ভাষাতেই আঁচ পাওয়া যায়। বোলিং যদি হয় সাদামাটা, ফিল্ডিং তাতিয়ে দেয় বোলারদেরও। পাকিস্তানের বিপক্ষে এদিন সবচেয়ে দৃষ্টিকটু লেগেছে ফিল্ডিং। দুর্বল ছিল শরীরী ভাষা।

বাবর আজমের মতো ব্যাটসম্যানকে পর পর দুবার জীবন দিয়েছেন ফিল্ডাররা। মাঝের ওভারে সাইফুদ্দিনদের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়েছে বাউন্ডারি। এক রান, দুই রান ঠেকিয়ে দেওয়ার তেজ দেখা যায়নি ফিল্ডিংয়ে।

১৫৭ রানের জুটি গড়তে বাবর আর ইমাদ সময় নেননি বেশি। দুবার জীবন পাওয়া বাবর ৯৮ বলে ৯৬ করে থামার পর ভাঙে সে জুটি। ইমাম তবু থামতেন না। বলে-রানে তাল মিলিয়ে সেঞ্চুরি করার পর মোস্তাফিজের নিরীহ বলে হিট উইকেট হয়েছেন তিনি। এরপর তালগোল পাকিয়ে খানিকক্ষণ পথ হারায় পাকিস্তান। কিন্তু ইমাদ ওয়াসিম ২৬ বলে ৪৩ করে দলের রান ছাড়িয়ে দেন তিনশো।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ৩১৫/৯  (ফখর ১৩, ইমাম , বাবর  ৯৬,  হাফিজ ২৭, হারিস ৬, ইমাদ ৪৩, সরফরাজ ৩*, ওয়াহাব ২ , শাদাব ১ , আমির ৮ , শাহীন ০* ;  মিরাজ  ১/৩০, সাইফুদ্দিন ৩/৭৭, মোস্তাফিজ ৫.৭৫, মাশরাফি ০/৪৬, সাকিব ০/৫৭, মোসাদ্দেক ০/২৭)

বাংলাদেশ: ৪৪.১ ওভারে ২২১   (তামিম ৮, সৌম্য ২২, সাকিব ৬৪ , মুশফিক ১৬, লিটন ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৯, মোসাদ্দেক  ১৬, সাইফুদ্দিন ০, মিরাজ ৭*, মাশরাফি ১৫, মোস্তাফিজ ; হাফিজ ০/৩২, আমির ১/৩১, শাহিন ৬/৩৫ , ওয়াহাব ১/৩১, ইমাদ ০/২৬, শাদাব ২/৫৯ )

টস: পাকিস্তান

ফল: পাকিস্তান ৯৪ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: শাহিন আফ্রিদি।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

4h ago