এটা কি তবে সাকিবেরই বিশ্বকাপ?

Shakib Al Hasan
ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ বলে ৪১ করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন বলে আফসোস। আর নয়টা রান করলেই তো দারুণ একটা পরিসংখ্যান হয়ে যেত। ওই একটা ইনিংস ছাড়া বিশ্বকাপে এবার ব্যাট হাতে নিলেই যে সাকিব আল হাসান পঞ্চাশের নিচে থামছেন না! আফগানিস্তানের বিপক্ষেও করলেন তাই। কিন্তু এদিন ব্যাটিং নয়, যে মুন্সিয়ানাটা দেখানোর বাকি ছিল, সেই বোলিং দিয়ে মাত করেছেন বেশি। এক ম্যাচেই স্পর্শ করেছেন চার চারটি মাইলফলক। এমন ম্যাচে বাংলাদেশের হেসেখেলে না জেতা ছাড়া উপায় কি!        

সাউদাম্পটনের রোজ বোল মাঠের উইকেট তার বোলিংয়ের জন্য যেন অর্ডার করে বানানো। উইকেটকে সাপোর্ট করতে মাঠও প্রশস্ত। অর্থাৎ মঞ্চটা পুরোপুরি তৈরি ছিল সাকিবের জন্য। সেখানে ২৬২ রানের পুঁজি নিয়ে বাঁহাতি স্পিন দিয়ে আফগানদের নাচিয়ে ছাড়েন সাকিব।  ২৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ওদের গুঁটিয়ে দেন ২০০ রানেই। বাংলাদেশ জিত ৬২ রানের। সব্যসাচী সাকিবের ঝলকে টিকে থাকে সেমিফাইনালের আশাও।

এই এক ম্যাচেই এত্তগুলো মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ছুঁয়েছেন এক হাজার রান। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। বিশ্বের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বকাপে ৩০ উইকেট ও হাজার রানের মাইলফলক গড়ে বসিয়েছেন নিজের একার নতুন রাজত্ব। এখানেই শেষ নয়। যুবরাজ সিংয়ের পর ইতিহাসের মাত্র দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে এক ম্যাচে ফিফটি ও পাঁচ উইকেট নেওয়ার বিরল তালিকাতেও নাম উঠেছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। ও ভালো কথা, এবার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায়ও ফের ডেভিড ওয়ার্নারকে হটিয়ে এক নম্বরে উঠে গেছেন তিনি। মোহাম্মদ আমিরকে (৫/৩০) ছাপিয়ে সেরা বোলিং ফিগারও এই পর্যন্ত তারই।

অর্জনে ভরা এমন ঝলমলে দিনে এগারতম ওভারে বল হাতে নিয়েই রহমত শাহকে ফেরান সাকিব। তার আগের ১০ ওভারে বেশ ভালো অবস্থানে চলে গিয়েছিল আফগানরা। দুই ওপেনার করে ফেলেছিলেন জুতসই শুরু। ওই স্পেলে দুই ওভার করার পর থেমেছেন।

মাঝে হাসমতউল্লাহ শহিদিকে মোসাদ্দেক হোসেন আউট করার পর চাপেই ছিল আফগানরা। ২৯তম ওভারে ফিরে সেই চাপ দ্বিগুণ করে দেন সাকিব। আফগান কাপ্তান গুলবদিন নাইবকে লিটন দাসের দারুণ ক্যাচে ফেরানোর এক বল পরই মোহাম্মদ নবিকে আর্মারে বোল্ড করে ম্যাচের লাগাম পুরোটাই নিয়ে আসেন।

খানিকপর আসগার আফগানও সাকিবের শিকার । ওই স্পেলের পর সাকিবের ফিগার দাঁড়ায় ৭-১-১০-৪! শেষ স্পেলে ফিরে নিয়েছেন বাকি এক উইকেট।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাটিং পাওয়াও যেন হয়েছে শাপেবর। এমন মাঠে আড়াইশোর মতো রান ঝুলিতে থাকলেই স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। বাংলাদেশ করল তারচেয়ে বেশি। ২৬২ রান। তাতে তিনে নামা সাকিবে অবদান ৫১। ব্যাট করার জন্য কঠিন পরিস্থিতিতে নেমে সাবলীল ছিলেন সারাক্ষণই। নিজের ক্লাস বুঝিয়ে এগিয়ে গেছেন বড় কিছুর দিকে। তবে ব্যাটিংয়ে এদিন সবচেয়ে বড় অবদান মুশফিকুর রহিমের। রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমানের ঘূর্ণি সামলাতে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে পটু ছিলেন তিনিই।

৮৭ বলে ৮৩ করে আউট হয়েছেন। মাত্র ৪ বাউন্ডারি আর একটা ছক্কা। আগের দিন কোচ স্টিভ রোডস জানিয়েছিলেন চার-ছক্কা নয়, প্রচুর এক-দুই রানের দিকে মন দেবে বাংলাদেশ। মুশফিকের ব্যাটিং যেন রোডসের কথারই প্রতিফলন। চাপের মধ্যে ব্যাট করেছেন। বাউন্ডারির জন্য হা-হুতাশ না বাড়িয়ে কেবল প্রান্ত বদল করে হয়রান করে গেছেন আফগানদের। পরে মোসাদ্দেক হোসেন ওই ভিত্তি পেয়েই করেন ২৪ বলে ৩৫। উইকেটের চরিত্রে ধারণা থাকলে, এখানে ২৬২ রান যে বেশ বড়ো ইনিংস বিরতিতেই টের পেয়ে যাওয়ার কথা।

সেটা কতটা বড়, পেসারদের আলগা বোলিংয়ে অস্বস্তির শুরুর পরও বুঝিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তার প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ৪ রান নিতে পেরেছিল আফগানিস্তান। মাপা বোলিংয়ে জায়গা দেননি। সহজাত টার্ন পাচ্ছিলেন, প্রিয় আর্ম বলও হচ্ছিল জুতসই। এমন বিপজ্জনক সাকিবের সামনে আফগানদের প্রতিরোধের সাধ্য ছিল না। তারা পাত্তাও পায়নি। খেলা শেষের অনেক আগেই তাই মিটে গেছে জয় পরাজয়ের সব হিসাব-নিকাশ।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

4h ago