বৃষ্টিই তবে একমাত্র আঁধার নয়
নটিংহ্যামে ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ তখন তুমুল বৃষ্টিতে শুরুই হতে পারছে না। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার চোখ সেই ম্যাচের দিকেই। খেলা হচ্ছে না দেখে ভীষণ হতাশ মাশরাফি। স্ত্রী-সন্তান আর ছোট ভাইকে নিয়ে বাইরে খেতে বেরুবেন। কিন্তু কেন যেন স্বস্তি মিলছে না তার। ছটফটানির কারণ নটিংহ্যামের ম্যাচ যদি ভেস্তে যায় নিউজিল্যান্ড পেয়ে যাবে এক পয়েন্ট। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের ক্ষতি কি! ক্ষতিটা যে কি, খানিকপর ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝালেন তিনি।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডকে সেমিফাইনালে ধরেই রেখেছেন মাশরাফি। চার নম্বর জায়গা নিতে হলে তাই নিউজিল্যান্ডে ঠেলে সরাতে হয়। কিন্তু সহজ তিন ম্যাচ থেকে ছয় পয়েন্টের সঙ্গে বৃষ্টিতে ওরা আজ আরেক পয়েন্ট পেয়ে গেল। সেমির চার জায়গা তো তবে পাকা। যদিও এখনো সেমির অনেক পথ বাকি। অনেক কিছু উলটপালট হয়ে যেতে পারে এরমধ্যে।
কিন্তু এই পর্যন্ত যা খেলা হয়েছে তাতে বিশ্বকাপের সব হিসাব নিকাশ যেন এলোমেলো করে দিয়েছে বৃষ্টি। বৃষ্টি কারো কাছে পয়েন্ট পাওয়ার ম্যাচ, কারো কাছে পয়েন্ট হারানোর ম্যাচ, কারো কাছে হিসাব এলোমেলো করে দেওয়ার। ভারতের সঙ্গে খেললে নিউজিল্যান্ডও জিততেই পারত। কিন্তু সাদামাটা হিসেবে ভারতের হয়েই পাল্লা ভারি। অধিনায়কের হাবভাবে বোঝা গেল ক্রিকেটীয় হিসেবেই সেমির আগে ‘বিগ থ্রি’কে টলানো যাবে না। এটা ধরে নিয়েই পরিকল্পনা করতে হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ড প্রথম তিন ম্যাচ জিতলেও প্রতিপক্ষ ছিল তুলনামূলক সহজ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশ। অর্থাৎ কিউইদের সামনে এখন থেকে কঠিন প্রতিপক্ষ। বৃষ্টি সেখানেই তাদের সুবিধা করে দিল কিনা চিন্তায় বাংলাদেশ অধিনায়ক।
নিউজিল্যান্ডের ঠিক উল্টো পরিস্থিতি বাংলাদেশের। প্রথম তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষ ছিল কঠিন। তাতে এক ম্যাচ জেতা, আরেক ম্যাচে কিউইদের কাছেই লড়াই জমিয়েও তালগোল পাকিয়ে হার, অন্য ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে উড়ে যাওয়া। ঠিক চতুর্থ ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ সহজ। অথচ ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচটাই কেড়ে নিয়েছে বৃষ্টি।
খেলা হলেই জেতার নিশ্চয়তা ছিল না বটে, তবে নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য বিচার করে শ্রীলঙ্কা ম্যাচটাকে তাই বাংলাদেশ দেখছে পয়েন্ট খোয়ানোর ম্যাচ হিসেবে। সেই ধরে নেওয়া পয়েন্ট খুইয়ে ক্রিকেটারদের মনমরা ভাবটা যেন যাচ্ছে না। বড় টুর্নামেন্টের মাঝে দুদিন ছুটি পেয়ে সবাই ঘুরছেন ফিরছেন, কিন্তু কোথায় যেন বিধে আছে অস্বস্তির কাটা।
‘ওই পয়েন্ট হারানোটাই সর্বনাশ করে দিল। তাও সমস্যা হতো না’, এই কথা বলার পর মাশরাফি ফিরে গেলেন নিউজিল্যান্ডে ম্যাচে। খামতিগুলো কোথায় ছিল? কেন উইলিয়ামসনকে মুশফিকুর রহিমের রান আউট করতে না পারা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। টুর্নামেন্টে প্রত্যাশা পূরণ না হলে কথা হয়ত আরও হবে। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়কের কথায় মনে হলো, সেদিন উইকেট পড়তেও ভুল করেছিলেন তারা। ‘ওটা কোনভাবেই সাড়ে তিনশো বা তিনশো রানেরও উইকেট ছিল না।’
দল সূত্রে জানা যায়, টিম ম্যানেজমেন্টের সম্মিলিত সিদ্ধান্তেই বড় রান পাওয়ার দিকে ছুটে ব্যাট চালায় বাংলাদেশ। যাতে ঠিক সায় ছিল না অধিনায়কের। মোহাম্মদ মিঠুন যেমন দলের চাহিদা মেটাতে গিয়েই নিজেকে কোরবানি দিয়ে আসেন। মারা যাচ্ছে না, এক-দুই নিয়ে আগানো যেত। কিন্তু দলের ঠিক করা চাহিদা তাতে মিটত না। এমন তালগোল পাকিয়েই ৪ বল আগে আড়াইশোর নিচে আটকে যায় দৌড়। তবু লড়াই হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ওই ম্যাচ যদি বাংলাদেশ ২৭০-৮০ রানের জন্য খেলত তাহলে ফলাফল ভিন্ন হতে পারত বলে আফসোস ঝরছে।
বিলেতের অনেক মাঠ ঘুরে এই প্রথম সামারসেটের টন্টনে এসেছে বাংলাদেশ। এর আগে বাংলাদেশের আর কোন দলও এখানে খেলেনি। মেগাসিটি লন্ডন তো বটেই। ব্রিস্টল, কার্ডিফের তুলনায় একেবারেই মফস্বল এই টনটন। মাশরাফির আবার এমন গ্রাম গ্রাম ভাব থাকা এলাকাই পছন্দ। কিন্তু পয়েন্ট না পেলে, খোলামেলা সুন্দর জায়গাও লাগে কেমন বিষাক্ত। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আক্ষেপ, আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচের অস্বস্তি দিয়ে টন্টনের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যেও তাই ছটফট করছে বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটা এখন বাঁচা-মরার। টন্টনের ছোট মাঠ, ক্যারিবিয়ানদের বিগ হিটার আর মাঠের আকৃতির কারণে দলে স্পিন শক্তির কার্যকারিতা ভাবাচ্ছে খুব। তবে ছোট মাঠে একটা সুবিধাও দেখছেন মাশরাফি, আন্দ্রে রাসেলদের ছক্কা পেটাতে তো মাঠ ছোট হওয়া লাগে না। যেকোনো মাঠেই তারা অনায়াসে ছক্কা পেটান। মাঠ ছোট হলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও ছক্কা পাওয়ার আশা থাকছে বেশি। শ্রীলঙ্কার মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজও তো বাংলাদেশের তাক করা একটা টার্গেট। এই টার্গেট কোনভাবেই মিস হতে দিতে চায় না বাংলাদেশ।
Comments