শান্তির মশাল হাতে কার্ডিফের সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে এক বাঙালি

Chinmoy Kumar Ghosh
ছবি: একুশ তাপাদার

কার্ডিফে নেমে প্রথম দিনই সেখানকার সমুদ্র পাড়ে যাওয়া হয়েছিল। ‘কার্ডিফ বে’ নামের বিমোহিত করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে বিশ্ব শান্তি আর সম্প্রীতির মশাল নিয়ে যে সেখানেই আমাদের দেশের এক গুণী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন, সেদিন খেয়ালই হয়নি! জানার পর ফেরার দিন খুব সকালেই সেখানে যাওয়া হলো আবার। শান্ত-স্নিগ্ধ কার্ডিফের আরও নিবিড় স্নিগ্ধতায় ভরা সকাল মনের উদারতা বাড়িয়ে দিল বিশ্বসংসারের ঐকতানের আওয়াজে।

‘গোটা দুনিয়ায় কোনো বিভক্তি নেই, কোনো কাঁটাতার নেই। অশান্তি, যুদ্ধ আর হিংসা নেই, এমন একটা চাওয়ার ছবি দেখলে মন উদ্বেলিত না হয়ে উপায় কী। কার্ডিফ শহরটাই আসলে যে কারও মনকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে। কোলাহল নেই। মানুষের শোরগোল থেকে বৃক্ষ সারির পাতার শব্দ আর পাখির কিচির-মিচিরও যেন চড়া। বিদ্বেষের রেশ নেই, ভালোবাসার আমেজই দুহাত দুই দিগন্তে বিস্তৃত করে দিয়ে আছে।

এমন একটা শহরে শান্তির ভাস্কর্য থাকা তো খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু সেই ভাস্কর্য যদি হয় বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া কারও, তাহলে কিছুটা বিস্মিত হতেই হয়। হাতে মশাল, পরনে ধুতি-পাঞ্জাবিতে কার্ডিফের সমুদ্র পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা চিন্ময় কুমার ঘোষের জন্ম চট্টগ্রামের বোয়ালখালিতে। ১৯৬৪ সালে তিনি নিউইয়র্ক পাড়ি দিয়ে যোগধর্ম চর্চা শুরু করেন। দৌড়, সাঁতার, ভারোত্তোলনেও মন দেন তিনি। হিন্দু ধর্মের সংস্কারক হিসেবেও পরিচিতি আছে তার।

শরীর চর্চা, ধ্যান আর খেলাধুলাকে প্রাধান্য দিয়ে পৃথিবীতে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে এই ভদ্রলোকই তৈরি করেন বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির পরিব্রাজক দল। সময়ের পরিক্রমায় তার অনুসারীরা ছড়িয়ে পড়েন বিশ্বের ৬০টি দেশে। প্রতি বছর শান্তির মশাল ঘুরে বেড়ায় হাত থেকে হাতে, হৃদয় থেকে হৃদয়ে, সারা দুনিয়ায়।

তেমন করেই ১৯৯৭ সালে ‘ওয়ার্ল্ড পিস এন্ড হারমনি রান’ এসেছিল কার্ডিফে। তখনকার কার্ডিফ শহরের মেয়র ম্যাক্স ফিলিপস ঘোষণা দেন কার্ডিফ হবে শান্তির রাজধানী। ২০১২ সালে সেই শান্তির রাজধানীতে তৈরি হয় বিশ্ব শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোক্তা শ্রী চিন্ময় ঘোষের ভাস্কর্য। বসানো হয় কার্ডিফের সমুদ্র বন্দরে। যেখানটায় সারা দুনিয়ার সঙ্গে কার্ডিফের একটা অদ্ভুত মেলবন্ধনের সম্পর্ক। সমুদ্র পাড়ে এক পাশে নরওজিয়ান চার্চ, আরেকপাশে সেন্ডেড ভবন (সরকারি ভবন)। তারমাঝেই আছেন শান্তির বার্তাবাহক চিন্ময় ঘোষ।  

‘কার্ডিফ বে হচ্ছে ব্রিটেনের অন্যতম বহু-সাংস্কৃতিক বন্দর। প্রতি বছর এখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানান রকমের মানুষ আসেন। তাদের সংস্কৃতি আর ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে আসেন। তাদের আশা আর স্বপ্ন নিয়ে সঙ্গে আসেন। কার্ডিফ সবাইকেই বুকে ধারণ করে।’– এমনটাই খোদাই করে লেখা আছে ভাস্কর্যের নামফলকের গায়ে।

সন্ত্রাসবাদ আর যুদ্ধে জর্জরিত আজকের পৃথিবী। হিংসা আর কলুষতায় বিষাক্ত গোটা দুনিয়ার প্রেক্ষাপট। বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নির্বাসিত, নিপীড়িত। ধর্মে ধর্মে, গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে বিভক্ত তৈরি করে অশান্তির বাতাসই এখন ভারী।

অথচ চিন্ময় ঘোষ বলে গেছেন, ‘এমন এক দিন আসবে যখন পুরো পৃথিবী ভরে যাবে শান্তিতে। এই মৌলিক বদল কে আনবে জানেন- আনবেন আপনি। আপনার ভাই, আপনার বোন আনবে সেই বদল। বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে যাবে শান্তি।’

কার্ডিফ সমুদ্রের শীতল হাওয়া, মিষ্টি রোদ গায়ে চাপিয়ে এমন বাণী বড় ভরসা দেয়। পরিপাটি, ছিমছাম আর উদার আমেজের কার্ডিফ শহরটাও সেই আশা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই স্বর্গ থেকে বেরিয়ে সংকটময় বাকি পৃথিবীর চৌকাঠে পা রাখার কথা মাথায় নিলেই মনে হয় বড্ড বেশি আশাবাদী মানুষ ছিলেন এই চিন্ময়। তাকে বুকে ধরে রাখা কার্ডিফের মানুষও বড় আশাবাদী।

Comments

The Daily Star  | English
Yunus condemns lawyer’s murder in Chattogram

Keep calm, refrain from violence

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday condemned the murder of a lawyer in the port city of Chattogram.

6h ago