লিপিদের ওপর রাব্বানীদের হামলা, প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি

BCL
১৮ মে ২০১৯, হামলার পর দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ অংশের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগের বিতর্কিত কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর জটিলতা নিরসনে ও মধুর ক্যান্টিনে হামলাকারীদের বিচার চাইতে গিয়ে আবারও সংগঠনটির একাংশের হামলার শিকার হয়েছেন পদবঞ্চিতরা। গতকাল গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনের উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী নিজেই তার অনুসারীদের নিয়ে এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন আজ (১৯ মে) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে টিএসসিতে আলোচনায় বসেছিলেন বিক্ষুব্ধ অংশের ১০-১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল। আলোচনার এক পর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক বিএম লিপি আক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, তোমার তো তিন-চারটি বিয়ে হয়েছে। তুমি বেয়াদব এবং ছাত্রলীগের ভেতরে একটা ভাইরাস।”

“গোলাম রাব্বানীর এমন মন্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে লিপি আক্তারের সঙ্গে তার তর্ক বেধে যায়। এর এক পর্যায়ে গোলাম রাব্বানী নিজেই লিপি আক্তারের গায়ে হাত তোলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে রাব্বানীর অনুসারীরাও লিপিসহ তার সঙ্গীদের ওপর হামলে পরেন এবং মারধর করেন”, অভিযোগ জয়নালের

পদবঞ্চিতদের দাবি, এ সময় লিপি আক্তারসহ মারধরের শিকার হয়েছেন নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ, সাবেক কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আজমীর শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ আরও কয়েকজন।

গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে হামলায় অংশ নেওয়া অনুসারীরা কারা? জানতে চাইলে ডাকসুর বর্তমান সদস্য ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মো. তানভীর হাসান সৈকত বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল সংসদের জিএস হাসিবুল হাসান শান্ত, স্যার এ এফ রহমান হল সংসদের জিএস আবদুর রহিম সরকার, নবগঠিত কমিটির নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক জুয়েল মোল্লা ও ঢাবির বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি মোরসালিন অনুসহ গোলাম রাব্বানীর অনুসারী আরও অনেকেই ছিলেন।”

হামলার প্রতিবাদে গতরাত ৩টার দিকে ঢাবির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে পদবঞ্চিতরা অবস্থান নিলে তাদের বুঝিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তবে পদবঞ্চিতরা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ না করে ওই হামলার বিচারের দাবি করে তাদের চলে যেতে বলেন। এ সময় গোলাম রাব্বানী পদবঞ্চিতদের উদ্দেশে বলেন, “আমি সরি। তোমরা চলে যাও। আমি কাল নেত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসব।”

উল্লেখ্য, গত ১৫ মে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছিলেন লিপি আক্তার।

BCL
১৯ মে ২০১৯, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। ছবি: স্টার

আজ সকালে ঢাবিতে গিয়ে দেখা গেল, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এ সময় মো. তানভীর হাসান সৈকত অভিযোগ করে বলেন, “ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পর মধুর ক্যান্টিনে অভিযুক্ত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে যে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিলো তার প্রেক্ষিতে আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে গিয়েছিলাম। গতকাল সেখানেও আমরা হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হই। এর প্রতিবাদে আজকে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।”

তাদের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- মধুর ক্যান্টিন ও টিএসটির হামলার তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার এবং ছাত্রলীগের কমিটিতে যে বিতর্কিত লোকজন রয়েছে তাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া এবং কমিটি পুনর্গঠন করা।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা একমাত্র আপার (প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা) আশ্বাসেই এখান থেকে উঠবো। আপা যদি আমাদের ডাকেন তাহলে আমরা এখান থেকে যাবো, তা না হলে আমরা এখান থেকে যাবো না।”

এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডের কাছে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কিন্তু, তারা আমাদের কথা রাখেননি। এমনকি, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যে দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া, তারা তা দিতে পারেননি।”

এসব বিষয়ে জানার জন্য লিপি আক্তার ও গোলাম রাব্বানীর ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। তাছাড়া, রেজওয়ানুল হক শোভনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন:

ছাত্রলীগের কমিটি জটিলতা চলছেই

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি: বিতর্কের শেষ নেই 

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

9h ago