ছাত্রলীগের কমিটি জটিলতা চলছেই

BCL
ছবি: সংগৃহীত

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে জটিলতা কাটছে না। ঘোষণার পরেই এই কমিটিকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগেরই একাংশের হামলার শিকার হন পদবঞ্চিতরা। এরপর থেকেই পদ পাওয়াদের বিরুদ্ধে ওঠতে থাকে একের পর এক অভিযোগ। অবিলম্বে এই কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগী ও নির্ভেজালদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

গত ১৫ মে কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিতে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মধ্যরাতে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ১৭ জ‌নের মধ্যে ১৫ জনের নাম সাংবাদিকদের কাছে তু‌লে ধরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ২৪ ঘণ্টা সময় নেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

এর পরদিন গতকাল ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিত ৯৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা। এসময় তারা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা মতে বিতর্কিত সবাইকে সংগঠন থেকে বিতাড়নের দাবি জানান।

এদিকে, ১৩ মে’র হামলা ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে এবং অভিযুক্ত ১৭ জনকে নির্দোষ প্রমাণে দেওয়া ২৪ ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আজ (১৭ মে) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে তদন্ত কমিটির সদস্য ও নতুন কমিটির সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, “গতকাল রাতে তদন্ত শেষ করে আমরা সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ১৭ জ‌নকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাদের সঙ্গে বসতে পারিনি। আজ দলনেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের প্রোগ্রাম শেষে আমরা তাদের সঙ্গে বসবো এবং এ বিষয়টি সেখানেই ফয়সালা করবো।

কোথায় বসবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উনারা দুইজন যেখানে আমাকে সময় দেবেন, আমি ওখানে চলে যাবো। আমাদের দপ্তর সেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। যেহেতু আমাদের দপ্তর সম্পাদককে নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে, ওই ১৭ জনের নামের তালিকায় দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীবের নামও রয়েছে। এ কারণে দপ্তর সেলে জমা দিতে পারছি না। আমরা আপাতত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেই ওখানে জমা দেবো।”

কীভাবে তদন্ত করলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “হামলায় আহতদের ছাড়াও মধুর ক্যান্টিনের কর্মকর্তা, ঢাবির সাংবাদিক সমিতির উপস্থিত কয়েকজন, টেলিভিশন চ্যানেলের কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ নেওয়ার মাধ্যমে তদন্ত করেছি।”

এদিকে, পদবঞ্চিত ও ছাত্রলীগের বিগত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবুর অভিযোগ, “যেভাবে তদন্ত করার কথা, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলার কথা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হয়নি। কমিটি বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছে। তারা সবাইকে ডেকে কথা বলতে পারতো। আমার সঙ্গে তারা কোনো কথা বলেনি।”

যেভাবে তদন্ত হচ্ছে, সেই তদন্তের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই কমিটির ওপর যে আস্থা রাখতে পারছি না, সেটি আমরা প্রথম থেকেই বলেছি।”

তবে, সবকিছুর পরও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতিই আস্থা রাখছেন জানিয়ে বলেন, “প্রয়োজনে নির্দেশ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েই নালিশ জানাবো।”

যদিও সাইফ উদ্দিন বাবুর অভিযোগের বিষয়ে আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন, “হামলার সময় মধুর ক্যান্টিনে অনেকেই ছিলেন। যারা বেশি আহত তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শ্রাবণী দিশা অসুস্থ হয়ে বাসায় থাকায় তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। ও আমাকে এ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়েছে। ওখানে থাকা দুই-তিনজন ছাড়া আমরা প্রায় সবার সঙ্গেই কথা বলেছি।”

এ সব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, “বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ১৭ জ‌নের মধ্যে সাতজন আমাদের কাছে প্রমাণ দিয়েছে যে তারা নির্দোষ এবং তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভুয়া।”

“গতকাল পদবঞ্চিতরা নতুন কমিটির বিতর্কিত ৯৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। আমরা সবার অভিযোগই খতিয়ে দেখবো। এজন্য নির্দোষ প্রমাণে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আগামীকাল পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

গোলাম রাব্বানীর দাবি, “প্রতিবারই ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠনেরই একটি মহল পদ পাওয়াদের চরিত্র হননের চেষ্টায় লিপ্ত হন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঢালাওভাবে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তা সত্যি নয়।”

তবে, যারা বিবাহিত, বয়স লুকিয়েছে, যাদের কর্মকাণ্ড সংগঠনের ভাবমূর্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বহিষ্কারের মাধ্যমে পদশূন্য ঘোষণা ক‌রা হবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও, তিনি অভিযোগ করে বলেছেন যে, অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারী দুই পক্ষের কেউই তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়ে ঠিকমতো সহায়তা করছে না। 

অপরদিকে, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ফোনে কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পদবঞ্চিতদের করা তালিকায় ‘বিতর্কিত’ ও ‘অযোগ্যরা’ হলেন:

সহসভাপতি তানজিল ভূইয়া তানভীর, রেজাউল করিম, আরেফিন সিদ্দিক, আতিকুর রহমান খান, বরকত হোসেন হাওলাদার, আবু সালমান প্রধান, শাহরিয়ার কবির, ফুয়াদ রহমান খান, সাদিক খান, তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী, এস এম তৌফিকুল হাসান, তৌহিদুর রহমান, মাহমুদুল হাসান, সৃজন ভূঁইয়া, তৌহিদুর রহমান, কামাল খান, আবু সাঈদ শাহজালাল, খালিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম, রুহুল আমিন, সোহানী হাসান, মাহমুদুল হাসান, এস এম হাসান আতিক, সুরঞ্জন ঘোষ, জিয়ান আল রশিদ, সোহেল রানা, মুনমুন নাহার, তরিকুল ইসলাম ও রাকিব উদ্দীন।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী ও মো. শাকিল ভূইয়া, মোরশেদুল হাসান। সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম, উপ-প্রচার সম্পাদক সিজাদ আরেফিন শাওন, উপ-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আব্দুল্লাহ বিন মুন্সি, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সৌরভ নাথ, সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক আফরিন লাবণী, উপ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ফুয়াদ হাসান, উপ-পাঠাগার সম্পাদক রুশী চৌধুরী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাজ উদ্দিন, গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক মনিরুজ্জামান ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপসম্পাদক সালেকুর রহমান, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ডা. শাহজালাল, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক সালাউদ্দিন জসীম ও সুশোভন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক আসিফ ইকবাল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক উপসম্পাদক মো. তুষার, ও রাকিবুল ইসলাম।

উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক শাহরিয়ার মাহমুদ, মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক হিরণ ভূইয়া, কৃষিশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এস এম মাকসুদুর রহমান, কর্মসংস্থানবিষয়ক উপসম্পাদক অভিমন্যু বিশ্বাস, সহসম্পাদক জাফর আহমেদ, তানভীর আব্দুল্লাহ, সামিহা সরকার, ফারজানা ইসলাম, তামান্না তাসনিম, মেহেদী হাসান, আঞ্জুমান আরা, আসিফ রায়হান ও শফিকুল ইসলাম শেখ আরজু।

সদস্য ফয়সাল করিম দাউদ খান, কর্মসংস্থানবিষয়ক উপসম্পাদক আল ইমরান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক ওয়াহিদুজ্জামান, সহসম্পাদক সোহেল রানা, মানবসম্পদবিষয়ক উপসম্পাদক বেলাল, প্রশিক্ষণবিষয়ক উপসম্পাদক মেশকাত হোসেন, সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন, সহসভাপতি তানজীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান, উপ-প্রচার সম্পাদক আরিফ শেখ, ক্রীড়াবিষয়ক উপসম্পাদক বায়েজিদ কোতোয়াল, উপ-অর্থ সম্পাদক মহসিন খন্দকার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রাকিনুল হক চৌধুরী, সহসম্পাদক রনি চৌধুরী, সহসভাপতি এম সাজ্জাদ হোসেন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক এস এম মাহবুবুর রহমান, সহসম্পাদক ওমর ফারুখ, সহসভাপতি আলিমুল হক, অর্থ সম্পাদক মো. রাকিব হোসেন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবাবিষয়ক উপসম্পাদক শফিউল ইসলাম, সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, সহসম্পাদক রেজাউল করিম, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক উপসম্পাদক ফেরদৌস শাহরিয়ার, উপ-প্রচার সম্পাদক নিলায়ন বাপ্পী, উপ-দপ্তর সম্পাদক মোমিন শাহরিয়ার, নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক উপসম্পাদক মাজহারুল কবির এবং গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক উপসম্পাদক নাজমুল হুদা।

আরও পড়ুন: 

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি: বিতর্কের শেষ নেই

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

8h ago