অর্থের বিনিময়ে চাকরি, প্রতারণার নতুন ফাঁদ

mlm company

গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে শিববাড়ির দিকে যেতে মাত্র তিন-চার মিনিট হাঁটলেই নবনির্মিত ভবন আমান্তা টাওয়ার। দূর থেকে দেখলে প্রথমেই চোখে পড়বে রাজউক-এর আঞ্চলিক অফিসের সাইনবোর্ড। এই ভবনের চারতলায় ‘গাজীপুর সিটি এজেন্সী’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান চাকরি দিচ্ছে শত শত গ্রামীণ তরুণ-তরুণীদের। বাইরে কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও প্রতিদিনই এখানে আনাগোনা বহু চাকরিপ্রার্থীর। আর এদের সবাই আসেন এই প্রতিষ্ঠানের কোনো না কোনো কর্মীর সুপারিশে।

নাম-ঠিকানা লিখিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে বসাচ্ছেন একটি ওয়েটিং রুমে। সারি সারি চেয়ার সাজানো রুমের ভেতরে। চাকরিপ্রার্থীরা ভয়াতুর চোখে অপেক্ষা করছেন, কখন সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক আসে। ভেতরে থাকা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাদের আশ্বস্ত করছেন— থাকা-খাওয়া ফ্রি এই চাকরিটা পেয়ে গেলে জীবন নিয়ে আর কোনো চিন্তা থাকবে না। সাক্ষাৎকারে উতরে গেলেই, চাকরি নামের সোনার হরিণ চলে আসবে হাতের মুঠোয়।  এই হরিণকে পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত যা লাগবে, তা হলো, ফেরতযোগ্য জামানত হিসেবে মাত্র ৫০,০০০ টাকা।

প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মরত একজন কর্মী জানান, জামানত ফি দিয়ে চাকরিতে যোগদান করার পর তাদেরকে প্রতি মাসে দুজন নতুন কর্মী জয়েন করানোর জন্য টার্গেট ঠিক করে দেওয়া হয়। আর তাই, তার সহযোগিতায়, প্রতিষ্ঠানের একজন জ্যেষ্ঠ মার্কেটিং কর্মকর্তার প্রস্তাব অনুযায়ী মাসিক ১৭,৬০০ টাকা বেতন ও ফ্রি থাকা-খাওয়ার সুবিধা-সম্বলিত এই চাকরি পেতে একজন ‘সদ্য ডিভোর্সপ্রাপ্ত এসএসসি পাশ চাকরি প্রার্থীর’ ছদ্মবেশে সেখানে গেলে দেখা যায়, আগত প্রার্থীদের বেশিরভাগই এসেছেন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের নিশ্চয়ই অল্পদিনে বড়লোক বানিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ডেস্টিনি গ্রুপের গ্রাহকদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার ১১৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ-এর গল্পটি মনে আছে? ২০১৩ সালের দিকে ডেস্টিনি গ্রুপ ‘পিরামিড স্কিম’-এর মাধ্যমে অর্ধ-কোটি গ্রাহকদের কষ্টার্জিত টাকা লুফে নিয়ে গণপ্রতারণার ফাঁদ ফেলে। পিরামিড স্কিমের বৈশিষ্ট্যই হলো- নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে দৃশ্যমান কিংবা অলীক পণ্য ক্রয় করে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিই ব্যবসায়ের একজন পরিবেশক হতে পারেন। একজন পরিবেশক পরবর্তীতে অন্যদেরকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পান। এই প্রক্রিয়ায় পিরামিডের উপরিভাগে থাকা ব্যক্তিগণ নিচুস্তরের গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে থাকেন।

সরকার ২০১৩ সালে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ প্রকাশের মাধ্যমে এমএলএম ব্যবসায়ীদের এই প্রতারণামূলক ‘পিরামিড স্কিম’ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেন। কারণ, ডেস্টিনি গ্রুপ ছাড়াও এই পদ্ধতিতে ইউনিপেটুইউ, আইটিসিএলসহ অনেক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান লাখো গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে গণপ্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে। আইন প্রণয়নের পরপর এমএলএম ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমে আসলেও পরবর্তীতে এসব এমএলএম ব্যবসায়ীরা নতুন উপায়ে লোক ঠকানোর পাঁয়তারা করে। এই প্রতারণা চক্রের নতুন শিকার গ্রামের গরীব নিরক্ষর অল্পশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা। বর্তমানে, ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা ফেরতযোগ্য জামানতের বিনিময়ে মার্কেটিং চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এরা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জামানত ফেরত চাইলেই হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হচ্ছে এসব তরুণ-তরুণীকে।

বিশ মিনিটের ও বেশি সময় অপেক্ষার পর প্রতিষ্ঠানের একজন লোক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (চার কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের অনুলিপি ইত্যাদি) সঙ্গে আছে কী না জানতে চান। ইতিবাচক সাড়া দিতেই আবেদনপত্রের মূল্য হিসেবে দাবি করেন ৫৫০ টাকা। কাগজপত্র ও টাকা নিয়ে যাওয়ার মিনিট খানেক পর ওয়েটিং রুমে সেই জ্যেষ্ঠ কর্মীর প্রবেশ। কুশলাদি জিজ্ঞেস করেই প্রশ্ন করেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি কি দিবস?”

সঠিক উত্তর পেতেই জানতে চান পূর্বকথোপকথন অনুযায়ী ৫০,০০০ টাকা সঙ্গে আছে কী না। তবে “অর্ধেক জোগাড় করতে পেরেছি” বলতেই তাকে কিছুটা বিরক্ত দেখায়। খানিক পরেই জানালেন, তিনি আরেকটি সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেছেন। সাক্ষাৎকারে পাশ করলেই জামানত ফি দিয়ে চাকরি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, “আপাতত যা আছেন তা দিয়ে আগে চাকরি নিশ্চিত করেন। আমি স্যারকে বলবো বাকিটা আপনি পরে দিয়ে দিবেন।”

চূড়ান্ত সাক্ষাৎকার কক্ষে প্রবেশের পর প্রতিষ্ঠানের আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মী ব্যক্তিগত ও কর্ম বৃত্তান্ত জানার পর একইভাবে কিছু সাধারণজ্ঞানবিষয়ক প্রশ্ন করেন। প্রকৃতপক্ষেই তারা যোগ্য প্রার্থীকে খুঁজছেন কী না বোঝার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই বেশিরভাগ প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলেও তিনি জানান, “আপনি তো অনেক আগেই পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছেন। আমি জানি আপনি আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন না। আমি তারপরও আপনাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। আপনি আধাঘণ্টার মধ্যে ৫০,০০০ টাকা পেমেন্ট করুন। তা না হলে আমরা অন্য কাউকে নিয়ে নিবো।”

পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আবাসিক কোয়ার্টার দেখতে যাওয়ার কথা বলতেই তাদের কিছুটা বিরক্ত দেখালো। তবে প্রথমে ইতস্তত করলেও মিনিট পনের পর তারা রাজি হলেন। প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মীর সঙ্গে প্রায় বিশ মিনিট হাঁটার পর সেখানে গেলে দেখা যায়, একটি আবাসিক ভবনের চার তলার দুই রুমের ফ্ল্যাটে থাকেন আটজন নারী। তারা কী কাজ করেন জানতে চাইলেই একজন উত্তর দেন, ‘ম্যানেজমেন্ট জব’। তবে ম্যানেজমেন্ট জব বলতে আসলে তারা কী করেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। তাছাড়া অফিস সময়ে তারা সবাই বাসায় কী করছিলেন সেটিও অস্পষ্ট ছিলো।

পরবর্তীতে কৌশলে এই ফাঁদ থেকে বিদায় নিলেও যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নজরে আসে, তা হলো এই প্রতিষ্ঠানে কোনো সাইনবোর্ড নেই, এরা কাউকেই আবেদন ফর্ম দেখতে, পূরণ করতে কিংবা স্বাক্ষর করতে দেন না। এমনকী, প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মীই আইডিকার্ড পরিহিত ছিলেন না। যদিও এরা সবাইকে গাজীপুর সিটি এজেন্সীর লোক বলে নিজের পরিচয় দেন, ভেতরে থাকা একজন কর্মীর সরবরাহকৃত কিছু কাগজপত্র থেকে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘লাইফওয়ে বাংলাদেশ (প্রাইভেট) লিমিটেড।

যদিও এদের প্রকৃত শাখাসংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি, তবে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী গাজীপুর, উত্তরা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫৩টির বেশি শাখার মাধ্যমে এরা এদের ব্যবসায় পরিচালনা করছে। ভুক্তভোগীদের তথ্য অনুযায়ী, এরা আমব্রেলা আউটসোর্সিং, সিটি এজেন্সী, নোভা কোম্পানি, আইএমজি ইলেক্ট্রনিকসহ বিভিন্ন নামে এদের ব্যবসা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, প্রতিটি শাখায়ই প্রায় ৩০০ জন চাকরিপ্রার্থীর থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছেন। সে হিসাবে, প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই প্রার্থীদের কাছে থেকে ৪২ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর-এর তথ্য অনুযায়ী লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড এমএলএম ব্যবসায়ী হিসেবে নিবন্ধিত হয় ২০১০ সালে এবং এর স্মারকলিপি অনুযায়ী জানা যায়, এটি মূলত নিবন্ধিত হয় এমএলএম/ সরাসরি পণ্য বিক্রয়/ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে। কিন্তু পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে এমএলএম অধ্যাদেশ জারির পর নতুন করে এমএলএম লাইসেন্স চাইলে তা বাতিল করা হয়।

অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উত্তরা আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম ফকির এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর প্রাধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রাহাতুল ইসলাম জানান লাইফওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড কিংবা গাজীপুর সিটি এজেন্সী নামের কোনো প্রতিষ্ঠানকে তারা ট্রেড লাইসেন্স দেননি।

mlm company

রফিকুল ইসলাম নামের একজন ভুক্তভোগী জানান, যদিও ৪০,০০০ টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের ইলেক্ট্রনিক, ফেব্রিক্স এবং সিরামিক পণ্য বিক্রির শর্তে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যোগদান করার পর কর্তৃপক্ষ তাকে প্রায় ৩০০ কর্মীর সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে বলে। রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য নয়জন ভুক্তভোগী জানান, দিনব্যাপী এসব ট্রেনিং-এ মূলত শেখানো হয় কীভাবে অল্প সময়ে ধনী হওয়া যায়। রফিকুল জানান, “প্রথমদিকে তারা আমাদেরকে নজরদারিতে রাখে। আর, কবে কাজ দিবে জিজ্ঞেস করলেই ট্রেইনাররা বলতো আস্তে আস্তেই কাজ বুঝে যাবেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এমন অনেক কর্মী ছিলেন যারা আসলে ছয়মাসেরও বেশি সময় এই ট্রেনিং নিচ্ছিলেন। তারা আমাদেরকে প্রথম মাসে দুজন নতুন কর্মী নিয়ে যাওয়ার টার্গেট দেন। এছাড়াও, প্রতিদিন পরিচিত সাতজন মানুষকে ফোন দিয়ে বলতে হতো, ‘কেমন আছেন, আমি ঢাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি এবং খুব ভালো আছি। আপনাদের কিছু লাগলে আমাকে ফোন দিতে ভুলবেন না।’ তখনই আসলে আমি বুঝলাম আমাকে যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিও বাধ্য হয়েই আমাকে প্রলোভন দেখিয়েছে।”

রফিকুলের মতে, প্রতিষ্ঠানে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার জামানতের বিনিময়ে কেউ নতুন কর্মী এনে দিলে তার কমিশন তিন থেকে চার হাজার টাকা। এভাবে যে যতো লোক জোগাড় করবে, তার কমিশন ততোই বাড়তে থাকবে। যারা বেশি লোক আনতে পারতো সপ্তাহান্তে তাদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পার্কে নিয়ে যাওয়া হতো। তাতে করে অন্যরাও উৎসাহিত হতো।

মাত্র ১৪ দিন থাকার পর রফিকুল চলে আসার সিদ্ধান্ত জানালে কর্তৃপক্ষ তাকে ফেরতযোগ্য জামানতের পরিবর্তে একটি ১৭ ইঞ্চি এলইডি টিভি, একটি রাইস কুকার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার কোনো দায় নেই সূচক একটি অঙ্গীকারনামায় সই করিয়ে বিদায় করেন।

রফিকুলের ভাগ্য কিছুটা ভালো হলেও আটজন ভুক্তভোগী জানান, তারা খালি হাতে ফিরেছেন। পাঁচজন জানান, তাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা অন্য কাউকে জানালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নামে পুলিশি মামলার ভয় দেখান, একজনকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করায় তিন কোটি টাকার মানহানি মামলার কথা বলে শাসানো হয় এবং একজনকে চারলাখ টাকা চুরির অপবাদ দেওয়া হয়।

এইচ চাকমা নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, জয়েন করার পর যদি কেউ নতুন কর্মী নিতে না পারেন, তাহলে তাদের বের করে দেওয়া হয়। কিংবা যারা প্রলোভন দেখিয়ে অন্যকে ফোন করতে অস্বীকৃতি জানাতেন, তাদের খাবার না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। “এই জন্যই আমি চলে আসি। এখানে যারা আসেন, তারা সবাই গরীব। অনেকেই ধার-দেনা করে, গরু-ছাগল কিংবা সোনার গয়না বিক্রি করে এখানে আসেন।”

চারজন ভুক্তভোগী জানান- তাদেরকে নিয়ে আসা হয়েছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের কথা বলে। আর তাই, প্রতিবাদ করলেই সেনাবাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের কথা বলে দমিয়ে রাখা হতো। এরকম একজন ভুক্তভোগী এম বিল্লাহ জানান, “টাকা ছাড়াই বাড়ি চলে আসার পর যে ব্যক্তি আমাকে সেখানে নিয়ে যান, রেগে গিয়ে আমি তার ফোনে কিছু বার্তা পাঠাই। কিন্তু পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ সেটি দেখে ফেললে, আমাকে ফোন করে চার লাখ টাকা চুরির অপবাদ দেয়, এবং আমার বিরুদ্ধে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেবে বলে ভয় দেখায়। যেহেতু আমার সব কাগজপত্র তাদের রেকর্ডে ছিলো, আমার বাবা এতে অনেক ভয় পান এবং আমাকে টাকার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মানা করেন।”

সেনাবাহিনীর কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করলেও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের এসব প্রতারণামূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার কোনো সুযোগ নেই। “বরং, যারা সেনাবাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করে তাদের ধরে দেওয়ার জন্য আমরা পুরষ্কার ঘোষণা করি।”

তবে এতো কিছুর পর একটি বিষয় আসলে অস্পষ্ট থেকে যায়, লাইসেন্সবিহীন একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে স্থানীয় সরকার এবং আইনপ্রণয়নকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি সারাদেশের অসংখ্য চাকরি প্রার্থীকে বোকা বানাচ্ছেন?

গাজীপুরের ডেপুটি কমিশনার দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, তিনি এ প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অবগত আছেন। “গত বছর আমরা একটি মোবাইল কোর্টও পাঠিয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাবের সাহায্যে অভিযান চালাতে আমরা যেকোনো সময় প্রস্তুত।”

অন্যদিকে, র‍্যাব-১১ এর এএসপি জসীমুদ্দীন জানান, এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন বহিষ্কৃত সেনা সদস্যের দ্বারা পরিচালিত। তিনি বলেন, “আমরা জানি তারা আবার বিভিন্ন নামে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেছে। কিন্তু, অনেক সময় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের অভাবে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি না।”

গত বছর এপ্রিল মাসে র‍্যাব-১১ এর একটি দল উত্তরা এলাকা থেকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ১৮ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানায় সোপর্দ করে একটি প্রতারণা মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তকারীর কর্মকর্তা গাজী আলমগীর জানান, মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে, এবং আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।

একইভাবে র‍্যাব-১ এর এএসপি সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন একটি দলও একই এলাকা থেকে এই প্রতারকচক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করে উত্তরা থানায় সোপর্দ করে একটি মামলা করেন। মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তবে, এসব প্রতারকচক্র নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে এএসপি সালাহউদ্দিন জানান, “এসব মামলার শাস্তির পরিমাণ খুবই কম। তাছাড়া অভিযুক্তরা খুব সহজেই জামিনে বের হয়ে আবার নতুনভাবে লোক ঠকাতে পারেন। তাই জনগণকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বসহকারে প্রতিবেদন ছাপালে মানুষ আরও বেশি সচেতন হবে।”

নীলিমা জাহান, রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaws allowed back on Dhaka roads for one month

SC chamber judge issues status quo on HC order

3h ago