জাতীয় দলে যেকোনো পজিশনের জন্যেই তৈরি আছি: ইয়াসির
টানা দুই বছর মোট ২৯ ম্যাচে স্কোয়াডে থেকেও বিপিএলে ম্যাচ পাচ্ছিলেন না ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বি। সুযোগ আসে এই বছরের বিপিএলে। প্রথম দুই ম্যাচ বাইরে থাকার পর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত, পরে বাকি সব ম্যাচ খেলে নিজেকে নতুন করে আলোয় আনেন এই তরুণ। বিপিএলের পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও (ডিপিএল) চলছে ইয়াসিরের দাপট। ধারাবাহিকতা দেখাতে পেরেছেন, সেই সঙ্গে দ্রুত রান আনার সহজাত সামর্থ্যেরও জানান দিয়েছেন। ম্যাচে প্রভাব ফেলার মতো ব্যাটিং ধরণ হওয়ায় বিশ্বকাপ দলের জন্যও আলোচনায় আছেন তিনি।
দ্য ডেইলি স্টারেকে দেওয়া সাক্ষাতকারে ইয়াসির জানিয়েছেন তার পথচলা আর প্রত্যাশার কথা।
এবার বিপিএলে নিজেকে নতুন করে আলোয় নিয়ে এসেছিলেন, রান পাচ্ছেন ডিপিএলেও। সেরা সময়টাই কি যাচ্ছে?
ইয়াসির: বিপিএল, ডিপিএল, বিসিএল সব কিছুই ভালো খেলছি । হয়ত ভালো সময় যাচ্ছে কিন্তু বলব না সেরা সময় যাচ্ছে। আলহামদুল্লিলাহ, আমার হয়ত আরও ভালো কিছু দেওয়ার আছে আমার দেশকে। এখনি সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নাই। অনেক বাকি আছে, কেবলই শুরু আমার। চেষ্টা করব এই ছন্দ যেন আরও অনেকদিন আমি টেনে নিতে পারি।
বড় মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ এবার পেয়েই চিনিয়েছেন নিজেকে। তার আগে তো বিপিএলে অনেক ম্যাচ স্কোয়াডে থেকেও খেলতে পারেননি।
ইয়াসির: দুই বছর আমি দুই দলের স্কোয়াডে ছিলাম, কোন ম্যাচ পাইনি। ২০১৬ সালে চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে ছিলাম, ২০১৭ সালে ছিলাম খুলনা টাইটান্সের সঙ্গে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন ম্যাচ খেলা হয়নি। হয়ত টিম কম্বিনেশনের কারণেই ম্যাচ পাইনি।
হিসাব করছেন মোট কয়টা ম্যাচ বাইরে ছিলেন?
ইয়াসির: হিসাব করলে হয়ত হচ্ছে এদিকে ১৩টা (২০১৬, ওদিকে ১৪টা (২০১৭)। এবার প্রথম দুইটা ম্যাচ বসেছিলাম। সব মিলিয়ে ৩০টার মতো ম্যাচ (২৯ ম্যাচ) বসে থাকার পর ব্রেক পেয়েছি।
ঘরোয়া ক্রিকেটে আপনি চেনা মুখ, পারফর্মও করেন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় বিপিএলের আসরে পারফর্ম করলেই প্রচারটা হয় বেশি। সেদিক থেকে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ আরও আগে আসতে পারত বলে কি আফসোস হয়েছে কখনো?
ইয়াসির: এখন আর ওইসব নিয়ে চিন্তা করি না, বরং মনে হয় যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। হয়ত আরো খারাপও হতে পারত। হয়ত তখন সুযোগ পেলে আমি ভালো নাও খেলতে পারতাম, সেটার রেশ ধরে আর সুযোগ নাও ঘটতে পারত। এইজন্য ওইসব নিয়ে আর আক্ষেপ করি না। এখন যে জায়গায় আছি সেটাই ধরে রেখে আগাতে চাই।
একটা দুর্ঘটনাও (২০১৮ সালে মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন) আপনাকে থামিয়েছে। তখন খুব ফর্মে ছিলেন, ‘এ’ দলের দুইটা ট্যুর করতে পারেননি। নিজেকে হয়ত আরও আগেই প্রমাণ করতে পারতেন...
ইয়াসির: ওই সময় বাদ দিলে আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে আমি খুব ভালোভাবে ফিরে আসতে পেরেছি। একটা চোট থেকে উঠে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসা খুবই শক্ত আসলে। তবে আমি কিন্তু এভাবে দেখি, ওই সময় আহত না হলেও এমনিতেই ফর্ম হারিয়ে খারাপ খেলতে পারতাম। তাই শুধু এটাই বলব, আল্লাহ হয়ত ভালো কিছুই রেখেছিল এইজন্য এখন একটা জায়গায় আসতে পেরেছি।
বিশ্বকাপ দলের আলোচনাতেও আপনার নাম শোনা যাচ্ছে। দলে থাকবেন কিনা সেটা হয়ত পরের ব্যাপার। কিন্তু এই আলোচনায় থাকতে পারাটাও কি একটা অর্জন?
ইয়াসির: আসলে এই জিনিসটা নিয়ে একটু রোমাঞ্চ কাজ করে। আমাকে নিয়ে জাতীয় দলের জন্য ভাবা হচ্ছে। তবে ওইসব আমার হাতে নেই, আমার হাতে আছে ভালো খেলা, কঠোর পরিশ্রম করা, রান করে যাওয়া। ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে মাঠে একাগ্র থাকারই চেষ্টা করি।
সর্বোচ্চ লক্ষ্য যদি হয় জাতীয় দল, তবে সেখানে কোন ব্যাটিং পজিশনকে টার্গেট করে আগাতে চান?
ইয়াসির: চার-পাঁচ ব্যাটিং অর্ডারটা আমি সব সময় প্রেফার করি। আমি ছোটবেলা থেকে এই জায়গায় খেলে স্বচ্ছন্দ। প্রথম শ্রেণীতেও পাঁচে ব্যাট করি।
কিন্তু জাতীয় দলে ওই জায়গায় তো বড় বড় তারকারা খেলেন...
ইয়াসির: হ্যাঁ তা খেলেন। সেজন্য জাতীয় দলে আমাকে যেখানে দিবে, এমনকি সেটা যদি হয় ওপেনিং তাহলেও আমি তৈরি। এটা যদি হয় সাত-আট বা নয় তাহলেও আমার জন্য ঠিক আছে। কারণ আমাকেই আমার জায়গা তৈরি করে নিতে হবে (ব্যাটিং অর্ডার), কেউ আমাকে শুরুতে দিবে না, একটা জায়গায় শুরুটা করতে হয়। আমি আমার চেষ্টাটা করে যাব ওখানে যদি যেতে পারি যত সামর্থ্য আছে তা দিয়ে। বাকিটা আল্লাহর উপর।
বলছেন সব পজিশনেই প্রস্তুত। সেক্ষেত্রে ওয়ানডেতে খুব বেশি স্পেস তো পাবেন না। রানরেটের চাপ থাকবে। এসব জায়গায় ভালো স্ট্রাইকরেট দরকার হয়, এমন পরিস্থিতিতে কেমন পরিকল্পনা থাকে?
ইয়াসির: স্ট্রাইকরেট বেশি রাখার জন্য একটা জিনিসই মাথায় বেশি কাজ করে, ডট বল যেন না হয়। কিছু ডট তো হবেই। কিন্তু ঘন ঘন স্ট্রাইক যেন রোটেট করা যায়। স্টাইক রোটেট করলে হয় কি, ধরেন তিন ওভারে ১৮ বল থাকে। এরমধ্যে ১০ বল যদি আমি ১ খেলি। বাকি ৮ বলের মধ্যে অন্তত ২ বলে চার-ছয় এসেই যায়। তখন দেখা যায় ১৮ বলের মধ্যে ১৫-১৬ রান হয়ে যাচ্ছে। চাপটা এভাবে কম থাকে। ওভাবে হিসাব নিকাশ করে খেললে আমার মনে হয় জিনিসটা অনেক সহজ হয়ে যায়।
এমনিতে আপনার ব্যাটিংয়ের শক্তির জায়গা কোনটা?
ইয়াসির: আমি ভি-তে খেলতে পছন্দ করি। আমার প্রিয় জায়গা হচ্ছে সোজা। স্পিনে হচ্ছে মিড উইকেট। মুশফিক ভাই যেমন স্লগ সুইপ খেলে আমারও সেটা পছন্দ। স্লগ সুইপ আর সোজা খেলতে আমার খুব ভালো লাগে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাকে অনুসরণ করেন?
ইয়াসির: ডেমিয়েন মার্টিনকে ফলো করতাম। আর তামিম ইকবাল আমার প্রিয়, ছোটবেলা থেকেই। বাংলাদেশে তামিম ভাই, আর বিদেশে হচ্ছে মার্টিন।
তামিম তো বাঁহাতি। তার কোন ব্যাপারটা পছন্দ আপনার। মানসিকতা নাকি স্টাইল?
ইয়াসির: তামিম ভাই ছোটবেলা থেকেই কিন্তু আগ্রাসী ব্যাটিং করত। আমিও একই মানসিকতা নিয়ে খেলতাম। সব সময় মনে হতো মারব। এইসব জিনিসই কাজ করে পছন্দের ক্ষেত্রে। এমন না যে প্রিয় ব্যাটসম্যান বলে উনার সব স্টাইল অনুসরণ করব। ব্যাপারটা হচ্ছে ভালো লাগার। উনার ইতিবাচক অ্যাপ্রোচটা মনে ধরে।
প্রথম শ্রেণীতে আপনার গড় প্রায় পঞ্চাশ (৪৯.৩৪), তিন হাজারের উপর রান হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আলোচনায় আছেন সীমিত পরিসরের জন্য। সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে কোন ফরম্যাটের জন্য বেশি মাননসই মনে হয়?
ইয়াসির: ওইরকম কোন কিছু চিন্তা করছি না। যখন যেমন খেলা থাকে তখন সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করার মানসিকতা রাখি। পঞ্চাশ ওভারে হলে একভাবে প্রস্তুত করা, আবার লঙ্গার ভার্সন হলে আরেকভাবে। মাইনসেটআপ চেঞ্জ করার ব্যাপারটাই আসল এসব ক্ষেত্র। আর এখনকার যুগে তো সব ফরম্যাটে সমান তালে খেলার প্রস্তুতি রাখাটা খুব জরুরী।
Comments