‘হাস্যকর’
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গতকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। সেই কমিটিতে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করা হয়েছে। কিন্তু, সড়কে বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা, নৈরাজ্য, পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ধর্মঘট সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার মুল হোতা হিসেবে তাকেই অভিযুক্ত করা হয়। তিনি আবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। সম্প্রতি, তার একটি উক্তিকে কেন্দ্র করেই সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছিলো।
নবগঠিত এই কমিটি নিয়ে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, “যারা এই সেক্টরে সমস্যার সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকেই আবার সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি হাস্যকর।”
তিনি এ ধরনের কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
অপরদিকে, এই কমিটি নিয়ে আজ (১৮ ফেব্রুয়ারি) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে নিজের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন একজন সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, “এ ধরনের একটি কমিটি গঠন করার আগে তো নিজেদের মধ্যে একটু আলাপ-আলোচনা করার দরকার ছিলো। গতকাল তো আমরা সবাই সেখানে ছিলাম। কিন্তু, বৈঠকে বসার সঙ্গে সঙ্গেই শাহজাহান খানকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে দেওয়া হলো। তিনি তো এ বিষয়টিতে একেবারেই বিতর্কিত এবং আমাদের ভাবাদর্শের বিপরীত। কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই পরিবহন সেক্টরের লোকজন।”
দীর্ঘদিন ধরেই আপনি সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। পরিবহন সেক্টরের নেতাদের আধিপত্য ও দৌরাত্ম্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলেছেন। তো এবার দেখা যাচ্ছে যে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে সেই সেক্টরের নেতা শাজাহান খান, মশিউর রহমান রাঙ্গা, খন্দকার এনায়েত উল্লাহ এবং ওসমান আলীরাই রয়েছেন। এদের সঙ্গে একই কমিটিতে থেকে কাজ করতে পারবেন কী না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে কমিটির আরেক সদস্য লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “এদের বিরুদ্ধে আমি আগেও কথা বলেছি, এখনও তাই বলবো। অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধেই আসুক না কেনো, অবশ্যই আমি সেসব তুলে ধরবো। এরা যেহেতু পরিবহন সেক্টরের লোক এবং এ খাতের স্বার্থ রক্ষা করে চলেন। আর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমি নাগরিকদের হয়েই সুপারিশ করবো। কমিটির সঙ্গে আমার একমত হতে হবে তা আমি মনে করি না।”
“তবে সমস্যা হলো, কমিটিতে এদের সংখ্যাই বেশি। এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আমার বিবেক যা বলবে আমি তাই বলবো, তারা তা শুনুক আর না শুনুক,” মন্তব্য করেন তিনি।
আবুল মকসুদ আরও বলেন, “আমি যেহেতু এই কমিটির সদস্য। সুতরাং পরিবহন সেক্টরের বিতর্কিত মানুষগুলোকে কমিটিতে রাখা যৌক্তিক হয়েছে কী না, তা বলার আগে আমি মনে করি এই কমিটির মুল কাজ হবে- সড়কের বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা, অনাচার ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মে যারা দায়ী তাদেরকে সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণের সুপারিশ করা। সরকার যদি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তা না হলে বর্তমানে যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।”
তিনি বলেন, “আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি কমিটির বৈঠক রয়েছে বলে জেনেছি আমি। গতকালের বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসার সময় শাজাহান খান আমাকে বলেন, ‘ওইদিন কমিটির বৈঠক আছে।’ কিন্তু, আর কেউ হয়তো বিষয়টি সেভাবে জানেনও না। কারণ- সে সময় সেখানে আর কেউ ছিলেন না।”
Comments