সাব্বিরের অমন ফেরা: কি বার্তা পেল তরুণরা

Sabbir Rahman
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকার মধ্যেই জাতীয় দলে ফেরানো হয়েছে সাব্বির রহমানকে। তাকে দলে নিতেই হবে এই ভাবনায় এক মাস কমিয়ে দেওয়া হয় শাস্তি। দল ঘোষণার আগেই এই খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তা অবশ্য চমক হয়ে আসেনি। তবে সাব্বির এভাবে আবার দলে ফেরার উঠেছে কতগুলো প্রশ্ন।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ডাকাবুকো ধরণের ক্রিকেটার বলে পরিচিতি পেয়েছিলেন সাব্বির। হাবভাব, চলন বলনেও ফুটে বেরুত তা। ব্যাটিংয়ের এই আগ্রাসী শরীরী ভাষা খেলায় কখনো কাজে দিলেও খেলার বাইরে তা প্রায়ই হতো বিপত্তির কারণ।

যে কারণে নিষিদ্ধ ছিলেন সাব্বির

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। সর্বশেষ যে অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তা তার রুচিবোধকে প্রকট করে তুলেছিল।  গত অগাস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে বাজে বল আউট হওয়ার পর এক সমর্থক ফেসবুকে সমালোচনা করেছিলেন তাকে। সেটা দেখে ওই সমর্থককে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিয়ে বার্তা পাঠান, দেশে ফিরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এর জেরে সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় মাস নিষিদ্ধ করে বিসিবি।

তবে তার এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে কাজ করেছে এর আগের অনেকগুলো কাণ্ড। যা একসঙ্গে জড়ো হওয়ায় বিসিবি বাধ্য হয় অমন পদক্ষেপ নিতে।

গতকাল নিউজিল্যান্ড সফরের দল ঘোষণার সময় আনুষ্ঠানিকভাবে জানা গেল, এই শাস্তি এক মাস কমিয়ে আনা হয়েছে। কারণ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা খুব করে দলে চেয়েছেন তাকে।

কিন্তু সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা যে কমিয়ে নেওয়া হয়েছে তা বিসিবির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি আগে। এমনকি তা নাকি জানেন না খোদ ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান শেখ সোহেলও, ‘সাব্বিরকে নিষিদ্ধ করার সময় আমি ছিলাম। তবে অসুস্থতার কারণে গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয় ছিলাম না। এমনও হতে পারে যে সাব্বির বোর্ড সভাপতির কাছে আবেদন করে নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে নিয়েছে। বোর্ড সভাপতির সেই এখতিয়ারও আছে। তেমন কিছু হয়ে থাকলেও আমার জানা নেই।’

নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন সাব্বির। এর আগে আবার ছয় মাস নিষিদ্ধ ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটেই। ২০১৭ সালের শেষ দিকে জাতীয় লিগের ম্যাচে রাজশাহীতে এক কিশোর দর্শককে মাঠেই পেটান সাব্বির। শাসান ম্যাচ রেফারিকেও। ঘটনার জেরে ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে ছয় মাস নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময় তিনি খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, সফর করেছেন জাতীয় দলের হয়ে। তখন তার শাস্তি যথেষ্ট হয়নি বলেও প্রশ্ন উঠেছিল।

এর আগে ২০১৬ সালে বিপিএলে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা গুনেন। সেবার আম্পায়ারকে গালি দিয়েও জরিমানা গুনেছিলেন।

জরিমানা, শাস্তি অনেকটা যেন গা সওয়া সাব্বিরের। বারবার শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা ঘটানোয় বিসিবি সভাপতি গেল সেপ্টম্বরে সাব্বিরকে নিষিদ্ধ করে জানিয়েছিলেন এবার আর কোন ছাড় দেওয়া হবে না।

তবে বাস্তবতা হলো আরও একবার ছাড় পেয়েছেন সাব্বির। তাকে ছয় মাস নিষিদ্ধ করলেও কোন কারণ স্পষ্ট না করেই তা কমিয়ে আনা হয় এক মাস। বার্তা দেওয়া হয়, যত যাই করুন সাব্বির দলে অপরিহার্য। তাকে দলে ফিরতে করতে হয় না আহামরি কোন পারফরম্যান্স।

উঠতি ক্রিকেটাররা এই সিদ্ধান্তের ফলে কি বার্তা পাবে? আপনি শৃঙ্খলাভঙ্গের যত ঘটনাই ঘটান, কোনভাবে দলে আসার বিবেচনায় থাকতে পারলে সব হয়ে যাবে খাটো। অর্থাৎ আচরণ বেপরোয়া হলেও খুব বেশি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আসলে নেই।

এমনকি শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে ফেরার জন্যও তেমন কিছু করতে হয় না। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পেতে হয় না। অন্তত সাব্বিরের ফেরাটা দিচ্ছে সেই বার্তা। গেল কমাস ঘরোয়া ক্রিকেটে বলার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি তিনি। জাতীয় লিগে ৯৯ রানের একটা ইনিংস আছে। এর আগে পরে কেবল ব্যর্থতার মিছিল। এবার বিপিএলে শুরুর ছয় ম্যাচে পেরুতে পারেননি বিশের কোটা। সপ্তম ম্যাচে গিয়ে করেন ৫১ বলে ৮৫। ওই এক ইনিংসই বলার মতো।

 

আগের পারফরম্যান্স দিয়েও কি অপরিহার্য সাব্বির

শৃঙ্খলাভঙ্গের আগে খেলা সর্বশেষ ১৪ ওয়ানডেতে তার ব্যাটে কোন ফিফটি নেই। অবশ্য ৫৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারের ফিফটিই আছে মোটে পাঁচটি। সর্বশেষটি করেছিলেন সেই ২০১৭ সালে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন ৬৫ রান। এরপর ১৪.৫ গড়ে করতে পারেন মাত্র ২০১ রান।

এমন ফর্মের একজন ব্যাটসম্যানকে রীতিমতো নিষিদ্ধের সাজা কমিয়ে দলে আনতে হলো কেন? প্রধান নির্বাচক নিজের উপর কোন দায় না রেখে বল ঠেলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজার দিকে, ‘এটা সম্পূর্ণ আমাদের অধিনায়কের পছন্দের। ও খুব জোরালো ভাবে আমাদেরকে দাবি জানিয়েছে। এবং আমরা একমত হয়েছি।’

সাব্বির কেন বিবেচনায় নিচ্ছেন এমন প্রশ্নে অধিনায়ক মাশরাফি তার ফর্ম থেকে সামর্থ্যের দিকেই ইঙ্গিত করেন,  ‘শেষ ম্যাচে আমাদের (রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৮৫) সঙ্গে যে ইনিংসটা খেলেছে, ওকে যখন জাতীয় দলে নেয়া হয়েছে, ওর যে সামর্থ্য আছে এই টাইপের (আগ্রাসী) ক্রিকেট খেলতে পারার... ওর থেকে আসলে আশা অনেক।’

মাশরাফি মনে করেন ওয়ানডেতে সাত নম্বরে এই মুহূর্তে আদর্শ হচ্ছেন সাব্বির। এর আগে আরিফুল হককে দিয়ে চেষ্টা করা হলেও তিনি নিতে পারেননি জায়গা। ছন্দ হারানো মোসাদ্দেক হোসেনও এই জায়গায় নিজেকে মানাতে পারেননি। অগাৎ উপায়ান্তর না দেখেই নাকি সাব্বির শরণ।

নিউজিল্যান্ডের গতি আর বাউন্সি উইকেট। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপেও মিলবে তেমন কিছু। এসব উইকেটে গতিময় পেসারদের সামলাতে সাব্বিরের মতো ‘মারদাঙ্গা’ ব্যাটসম্যানকে দরকার দেখছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

কিন্তু যে সাত নম্বরে সাব্বিরকে নিয়ে এত আশা। বিস্ময়কর হলো সেখানে তার পরিসংখ্যান আসলে মোটেও ঝলমলে কিছু নয়। ক্যারিয়ারের ১৪ ইনিংস ব্যাট করেছেন সাত নম্বরে। তাতে মোট ২৬১ রান তার। দুবার নটআউট থাকার পরও গড়টা ২১.৭৫। এই পজিশনে কোন ফিফটি নেই। সর্বোচ্চ করেছিলেন ৪৪। গড়ের চেয়েও এই পজিশনে যে জিনিসটা সাব্বিরের হয়ে কথা বলতে পারত তা হচ্ছে স্ট্রাইক রেট।

স্লগ করতে হয় বলে এই পজিশনের স্ট্রাইকরেট থাকা চাই টি-টোয়েন্টির মতো। সেটাও তার খুব আহামরি না। ১০৩.৫৭ স্ট্রাইকরেটে রান বাড়াতে পেরেছিলেন তিনি।

অনেক প্রশ্ন নিয়ে দলে ফেরা সাব্বিরের সামনে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে তাকে খেলতে হবে সাত নম্বরে। সামলাতে হবে টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টদের। সাব্বিরকে অনেকটা ‘একগুয়েমী’ করে দলে নেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের সামনেও নিজেদের সিদ্ধান্ত সঠিক করার চ্যালেঞ্জ। সাব্বির সফল হয়ে গেলে হয়ত মুছে যাবে সব। কিন্তু ব্যর্থ হলেই বিশ্বকাপের ঠিক আগে গুরুত্বপূর্ণ এক পজিশন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হবে বাংলাদেশ দলকে।

Comments

The Daily Star  | English
The BNP has submitted 62 constitutional reform proposals to the Constitution Reform Commission.

BNP unveils vision for ‘rules-based’ society

The BNP yesterday submitted to the constitution reform commission its 62 recommendations designed to establish a rules-based structure and ensure checks and balances of power.

8h ago