এই সিরিজ জিতে একটু কি বেশি তৃপ্ত মাশরাফি?
সিরিজের আগে মাশরাফি মর্তুজার ফোকাস খেলায় থাকবে কিনা তা নিয়ে হয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ সেরা হয়ে বাংলাদেশকে জেতানোর পর সেসব প্রশ্ন অর্থহীন হয়ে পড়েছিল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারার পর আবার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল অস্বস্তির প্রশ্নেরা। কোনভাবে সিরিজটা হেরে গেল অনুমিতইভাবেই ফের তেতো কথার মুখে পড়তে হতো মাশরাফিকে। ক্রিকেটীয় কারণ ছাপিয়ে বড় হয়ে যেত অন্যকিছু। কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি। বাংলাদেশ তো জিতেছেই, বল হাতে অধিনায়কও যৌথভাবে সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৯ রান তাড়ায় তামিম ইকবাল-সৌম্য সরকার মেরে-টেরে মামুলি বানিয়ে দেওয়ার পর ম্যাচ শেষের ঘণ্টা খানেক আগেই ম্যাচের দফারফা প্রায় সারা। একপেশে উত্তাপহীন ম্যাচে অনেকসময় পুরো ফাঁকা হয়ে যায় গ্যালারি। কিন্তু খেলা শেষ হয়ে বেশ অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেল। পূর্ব পাশের গ্যালারির একটা অংশে তখনো প্রচুর দর্শক। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাশরাফি মর্তুজার নাম আসতেই তাদের সবার চিৎকার ‘নৌকা’, ‘নৌকা’। খেলার মধ্যেও দর্শকদের এমন স্লোগান দিতে দেখা গেছে বারকয়েক। এই স্লোগান এবার সিরিজের শুরু থেকেই শোনা গেছে। কারণটা সবার জানাই। মাশরাফি রাজনীতিতে যাওয়ায় খেলার মাঠেও এসেছে রাজনৈতিক স্লোগান।
তবে খেলা চলার মধ্যেই তার রাজনীতিতে আসা, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বাঁকা চোখে দেখেছেন অনেকে। তাই খেলার মধ্যে তার ফোকাস কতটা আছে তা নিয়ে হয়েছে প্রশ্ন।
এমনিতে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জেতা এখন আর বড় খবর নয়। কয়েকবছর থেকে বহু সিরিজ জেতায় অভ্যস্ত বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী মাশরাফির কারণেই এই সিরিজের উত্তাপ ছিল আলাদা, বিশ্বকাপের পর অবসর নিলে ঘরের মাঠে এটাই হবে তার শেষ সিরিজ। তা নিয়েও আলাপ-আলোচনা ছিল তুঙ্গে।
তবে মাশরাফি বরাবরের মতই নির্লিপ্ত থেকেই দিলেন উত্তর, ‘দলের জন্য কিছুই নতুন (সিরিজ জেতা) ছিল না। আগের সিরিজও জিতেছে। দলের জন্য বাইরের কিছু প্রভাব পড়ার কথা না। নিজের কথা, এসবে কান দিলে তো খেলা যায় না। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, নিজের মতো চেষ্টা করেছি। কারও কথার নিয়ন্ত্রণ তো আপনার হাতে নেই।’
খেলা শুরুর আগে বারবার বলেছিলেন তার সব নজর মাঠে। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা মাঠেই রাখতে চান। পরের ভাবনা (নির্বাচন) ওই দিনের পর থেকে। বাংলাদেশকে জিতিয়ে সব কাজ ঠিকঠাক করে ফেলার পর মনে করিয়ে দিলেন পুরনো কথা, ‘আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি, মানুষের জীবনে যা ঘটে, সেটা কারও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যেটি ঘটার, সেটি ঘটবেই। জন্মের পর থেকে সবার লিখিত থাকে। যে সিদ্ধান্তই নিন, সেসব আপনার পক্ষে আসবে বা বিপক্ষে, সেটার নিয়ন্ত্রণ আপনার থাকে না। আমি কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে পরিকল্পনা ছিল, সেটিতেই ছিলাম। আজকের পর হয়তো অন্যকিছু চিন্তা (নির্বাচন নিয়ে) করতে পারি। আজকে পর্যন্ত পুরো মনোযোগ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে।’
Comments