ক্যারিবিয়ান ‘হোপে’ আশাহত বাংলাদেশ

Shei Hope
সেই হোপের সেঞ্চুরিতেই হার বাংলাদেশের। ছবিই বলছে ম্যাচের পরিস্থিতি। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের তিন ফিফটির পরও ইনিংস বিররিতে খচখচানি ছিল বাংলাদেশের। শেষটায় যে আসেনি মনমতো রান। ভালো বোলিং করলে তবু ম্যাচটা বের করা যেত। বোলারদের গড়পড়তা বোলিং আর ক্যাচ মিসের মহড়ায় হয়ে উঠেনি কিছুই। উলটো বাংলাদেশকে হতাশার আগুনে পুড়িয়ে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছেন শাই হোপ। টেস্ট সিরিজ থেকে ক্রমাগত হারতে থাকা ক্যারিবিয়ানরা অবশেষে হোপের হাত ধরেই পেল প্রথম জয়ের দেখা।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ২৫৫ রান ১ বল আর ৪ উইকেট হাতে রেখে টপকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হোপ ১৪৪ বলে ১৪৬ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে হাসিমুখে মাঠ ছাড়েন। এই ম্যাচ জেতায় তিন ম্যাচ সিরিজেও এখন এসেছে সমতা। ১৪ ডিসেম্বর সিলেটে শেষ ম্যাচটা পরিণত হলো অলিখিত ফাইনালে। 

জিততে হলে শেষ চার ওভার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৩৫ রান। মোস্তাফিজ তার নবম ওভারে দিলেন মাত্র ৩ রান। শেষ তিন ওভারে দরকার পড়ে ৩২ রান। রুবেলে হোসেন এসে ৪৮তম ওভারে দিয়ে দেন ১০ রান। পরের ওভারে মোস্তাফিজের কাছ থেকে আসে ১৬ রান। কেমো পলের সহজ ক্যাচ ফেলেন নাজমুল ইসলাম অপু। এর আগেও পলের আরেকটি ক্যাচ ছেড়েছিলেন তিনি।

নিজেদের ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে মাত্র ২৬ রান নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। জিততে এক পর্যায়ে শেষ ৫ ওভারে ৩৮ রানের সমীকরণে ছিল ক্যারিবিয়ানরা। মোস্তাফিজের দারুণ এক ওভার ছাড়া ওইসময় খুবই সাদামাটা ছিল বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা হোপের ম্যাচ বের করাও হয়ে যায় বেশ সহজ। 

রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংসের পুরোটা জুড়েই আস্থার ছবি হয়েছিলেন হোপ। এক প্রান্তে উইকেট পড়েছে, কেউ আবার এসে জুটি বেধেছেন, ফিরেও গেছেন। তবে হোপ অবিচল থেকে বাঁচিয়ে রাখেন দলের আশা। বাংলাদেশের কোন বোলারকেই দেননি সুযোগ।

অথচ আবারও দুই প্রান্তে স্পিন দিয়ে শুরুতে সাফল্যেই পেয়েছিল বাংলাদেশ।  কিরন পাওয়েলের জায়গায় নেমে চন্দরপল হেমরাজ বদলাতে পারেননি ছবি। মেহেদী হাসান মিরাজ তাকে ছেঁটেছেন এলবডব্লিও করে। কিন্তু এরপরের ঘন্টাখানেক ভয় ধরানো এক জুটি। চনমনে শাই হোপের সঙ্গে জমে গিয়েছিলেন ড্যারেন ব্র্যাভো। তাদের ৬৫ রানের বাধন আলগা করেন রুবেল হোসেন।

রুবেলের বল পেছন দিকে গিয়ে ভেঙে দেয় ব্র্যাভোর স্টাম্প। এরপর ঘুরে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়ানরা। একাই দায়িত্ব নেন হোপ, সঙ্গী হিসেবে পান অভিজ্ঞ মারলন স্যামুয়েলসকে। দুজন মিলিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে রান বাড়াচ্ছিলেন, জুটি ফিফটি পেরিয়ে জাগাচ্ছিল শঙ্কা। মোস্তাফিজুর রহমান এসে এনে দেন কাঙ্খিত ব্রেক থ্রো। মোস্তাফিজের কাটারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্যামুয়েলস।

পরের ওভারেই ম্যাচে স্পষ্ট প্রাধান্য নিয়ে আসতে পারত বাংলাদেশ। দারুণ বল করতে থাকা রুবেলের বলে শর্ট ফাইন লেগে এসেই ক্যাচ দিয়েছিলেন শেমরন হেটমায়ার। ব্যাটিংয়ে রান না পাওয়া ইমরুল সেই সহজ ক্যাচ ফেলে দিলে থই পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক ওভার পরই অবশ্য ওই রুবেলের বলেই ফেরেন হেটমায়ার। শূন্য রানে জীবন পাওয়ার পর দ্রুত ১৪ রান করে ফ্লিকের মতো শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তিনি।

পরের ওভারেই অধিনায়ক মাশরাফি ফিরিয়ে দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলকে। দ্রুত দুই উইকেট ফেলে জড়ো হওয়া তখন অনেকটাই কেটে যাওয়ার অবস্থা। কেবল এক প্রান্তে নিসঙ্গ শেরপা হয়েছিলেন হোপ। তাকে আর টলানোই যায়নি, টলেনি উইন্ডিজও।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওশান টমাসের গতি ঝড়ে পড়ে বাংলাদেশ। তার ইয়র্কার লেন্থের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে গোড়ালিতে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন লিটন দাস। তখন খেলার মাত্র দ্বিতীয় ওভার, দলের রান কেবল ১২। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুরন্ত ফর্ম দেখানো ইমরুল কায়েস ওয়ানডাউনে নেমে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে করেছেন হতাশ। টমাসের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

দ্রতই তা সামলে নিয়ে অবশ্য ঘুরে দাঁড়ানো শুরু বাংলাদেশের। ক্রিজে এসেই সাবলীল ব্যাট করতে থাকেন মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবালের সঙ্গে জমে যায় তার জুটি। তরতরিয়ে বাড়তে থাকে রান। মিরপুরের চেনা মন্থর পিচেও এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল দলের রান ছাড়িয়ে যাবে তিনশো। পঞ্চমবারের মতো ওয়ানডে্তে দুজনের জুটি পেরিয়ে গিয়েছিল শতরান।

ফিফটি তোলার পরই স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকা তামিম ভুল করে বসেন। দেবেন্দ্র বিশুর বলে স্লগ করতে গিয়ে পার করতে পারেননি সীমানা। তামিম ফেরার খানিক পরই মুশফিকের বিদায়। টমাসের গতিতে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। মনে হচ্ছিল কিছুটা পথ হারাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংকট কেটে যায় সাকিবের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর আরেক জুটিতে। জুটিতে অগ্রনী ছিলেন সাকিবই। ক্রিজে ছিলেন বরাবরের মতই চনমনে। উইকেটের মেজাজ মর্জি বুঝে ব্যাট চালিয়ে এগিয়েছেন।

মাঝের ছন্দপতন কাটিয়ে ফের বড় সংগ্রহের আভসই মিলছিল। কিন্তু রভম্যান পাওয়েলের বলে টপ এজ হয়ে মাহমুদউল্লাহ কাভারে ক্যাচ দেওয়ার পর ফের উল্টোযাত্রা। সাতে নামা সৌম্য ৬ রান করেই আপার কাটে ফিরে যান। চোট কাটিয়ে আবার ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসও আর পারেননি।

শেষ দিকে ৬৫ রান করা সাকিব কেমার রোচের স্লোয়ার বুঝতে না পেরে কাবু হলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পাঁচ ওভারে মাশরাফি মর্তুজা, মেহেদী হাসান মিরাজ ঝড় তুলতে পারেননি। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ করতে পারে ৬৪ রান। শেষ ৫ ওভারে আরও করুণ দশা। এসেছে কেবল ২৬ রান।  ম্যাচ শেষে তা যে বড় ক্ষতির কারণ স্বীকার করেছেন অধিনায়ক।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৫৫/৭  (তামিম ৫০, লিটন ৮,  ইমরুল ০,  মুশফিক ৬২, সাকিব ৬৫ , মাহমুদউল্লাহ ৩০, সৌম্য ৬,  মাশরাফি ৬*,  মিরাজ ১০*, ; রোচ  ১/৩৯, টমাস ৩/৫৪ , চেজ ০/২২, পল ১/৬৮, বিশু ১/২৭, পাওয়েল ১/৪১ ) 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৫৬/৬ ( হেমরাজ ৩,  হোপ ১৪৬*, ব্র্যাভো ২৭, স্যামুয়েলস ২৬, হেটমায়ার ১৪, রভম্যান ১, চেজ ৯, পল ১৮*  ; সাকিব ০/২৮ , মিরাজ ১/৩৯, মোস্তাফিজ, মাশরাফি ১/৫২, মাহমুদউল্লাহ ০/১২, রুবেল ২/৫৭)

ফলঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচঃ শাই হোপ

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Lower revenue collection narrows fiscal space

Revenue collection in the first four months of the current fiscal year declined by 1 percent year-on-year

10h ago