টেস্টে এমন দিনের দেখা মেলে কদাচিৎ
খানিকের মধ্যেই উইকেটে কোন মাল-মশলা পড়ার কারণ নেই, ফাটল ধরতেও তো সময় লাগে। কিন্তু শেষ বিকেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দেখলে একই উইকেটে খেলা হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ার সুযোগ আছে। যে উইকেটে প্রায় সাড়ে পাঁচ সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ স্কোর ছাড়িয়ে গেল পাঁচশো। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামতেই যেন সেটাই মাইনফিল্ড। ৩০ রান তুলতেই ওদের ইনিংস প্রায় অর্ধেক খতম। দ্বিতীয় দিনেই তাই ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ সাকিব আল হাসানদের কব্জায়।
সারাদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল মিরপুর টেস্টে হয়ত গড়াতে পারে পাঁচদিনেও। কিন্তু এখন ম্যাচের যা পরিস্থিতি তাতে তৃতীয় দিনেই খেলা শেষ হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পুরো ম্যাচ বগলদাবাই করে রেখেছে বাংলাদেশ। শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম মাহমুদউল্লাহর বাংলাদেশ সেঞ্চুরিতে ৫০৮ রান করে অলআউট হওয়ার সময় চলছিল শেষ সেশনের খেলা। বিকেলের আলোয় ওই সময় ব্যাটিং পেয়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা উইন্ডিজের। ২৯ রানে ৫ উইকেট খোয়ানো ক্যারিবিয়ানদের বোর্ডে দিনশেষে জমা পড়েছে ৭৫ রান।
ব্যাটে-বলে ঝলমলে দিনে দল হিসেবে বাংলাদেশের খাতায় জমা হয়েছে দুই রেকর্ড। এই প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের এগারোজন ব্যাটসম্যানই যেতে পেরেছেন দুইঅঙ্কে। সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে এমন ঘটনার নজির চৌদ্দতম। বাংলাদেশের পরের রেকর্ডটির ভাগীদার কেউ নেই। টেস্ট ক্রিকেটে স্পিনারদের বলে এই প্রথম কোন দলের প্রথম পাঁচজন ব্যাটসম্যান বোল্ড হয়েছেন।
বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে বোল্ড করে শুরু অধিনায়ক সাকিবের। ষষ্ঠ ওভারে কিরন পাওয়েলের স্টাম্প যায় মেহেদী হাসান মিরাজের বলে। দু’ ওভার পর সুনিল আম্রিসকে সোজা বলে বোল্ড করেন সাকিব। এর রেশ থাকতেই পরের ওভারে রোস্টন চেজ বোল্ড হয়ে যান মিরাজের বলে। এক ওভার পরে শাই হোপকেও বোল্ড করে উৎসবের রেনু মিরপুরের গ্যালারিতে ছড়িয়ে দেন মিরাজ।
এরআগে পুরোদিনই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দেখিয়ে গেছেন নিজেদের মুন্সিয়ানা। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমদুউল্লাহ আর সাকিব নির্বিঘ্নে পার করে দেন প্রথম আধা ঘণ্টা। সেঞ্চুরির পথে থাকা সাকিব ৮০ রানে কেমার রোচের বলে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভাঙে ১১১ রানের জুটি।
কিন্তু ওতে বিশেষ ক্ষতি হয়নি বাংলাদেশের। হুট করে টেস্ট দলে ফেরা লিটন দাস দাঁড়িয়ে যান মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে। আট নম্বরে নেমে গড়ে তুলেন ৯২ রানের জুটি। লাঞ্চের পর পরই রান বাড়ানোর তাড়ায় ফেরেন ফিফটি তুলে দারুণ খেলতে থাকা লিটন।
বাকিটা পথ মিরাজ, তাইজুল, নাঈমদের নিয়ে ছোট ছোট জুটি গড়ে একাই টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রান করে।
চা-বিরতির পর ৫০৮ রানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার সময় সব আলো মাহমুদউল্লাহর দিকে। কিন্তু দিনশেষে তাকেও যেন ছাপিয়ে গেছে স্পিনারদের কারিকুরি কিংবা বলা যায় উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের দুর্বল টেকনিক, স্পিন দেখেই থরথর কাঁপুনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দ্বিতীয় দিন শেষে
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে- ৫০৮ (সাদমান ৭৬, সৌম্য ১৯, মুমিনুল ২৯, মিঠুন ২৯, সাকিব ৮০, মুশফিক ১৪, মাহমুদউল্লাহ ১৩৬, লিটন ৫৪, মিরাজ ১৮, তাইজুল ২৬, নাঈম ১২; রোচ ২/৬১, লুইস ১/৬৯, চেজ ১/১১১, ওয়ারিক্যান ২/৯১, বিশু ২/১০৯, ব্র্যাথওয়েট ০/৫৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৪ ওভারে ৭৫/৫ (ব্র্যাথওয়েট ০, পাওয়েল ৪, হোপ ১০, আম্রিস ৭, চেজ ০, হেটমায়ার ব্যাটিং ৩২*, ডওরিচ ব্যাটিং ১৭* ; সাকিব ২/১৫ ,মিরাজ ৩/৩৬, নাঈম ০/৯, তাইজুল ০/১০, মাহমুদউল্লাহ ০/০)
Comments