অনেকদিন পর টেস্ট ব্যাটিংয়ে ঝলমলে রোদ্দুর
সকালে শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ। বুকে আবারও কাঁপন ধরে গিয়েছিল বাংলাদেশের। মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিমের দুই সেঞ্চুরিতে সেই কাঁপন সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই উধাও। টানা আট ইনিংস পর দু'শো পেরিয়ে, তিনশোও পেরিয়ে গেল বাংলাদেশ। পাওয়া যাচ্ছে আরও বড় কিছুর ইঙিত। টেস্টে অনেকদিন পর তাই ঝলমলে ব্যাটিংয়ে দেখা মিলেছে দারুণ এক দিনের।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। মুশফিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ২৬৬ রানের জুটির পর শেষ বিকেলে ফিরেছেন ১৬১ রান করা মুমিনুল। নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলামও বেশিক্ষণ টেকেননি। তাতে একটু খচখচানি থেকেছে তবে দিনটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের। ১১১ রানে খেলতে থাকা মুশফিকের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনে নামবেন রানের অপেক্ষায় থাকা মাহমুদউল্লাহ।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বড় ফ্যাসাদেই যেন পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং ভুগছে আট ইনিংস থেকে, টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে। নানামুখী সমালোচনায় তীরবিদ্ধ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুঁজছিলেন একটা বড় ইনিংস। অথচ শুরুতেই টপাটপ তিন উইকেট নেই। কাইল জার্ভিস, টেন্ডাই চেতাররা যেন আবির্ভূত হলেন রুন্দ্রমূর্তিতে। ২৬ রানে তিন টপ অর্ডার খুইয়ে উইকেটে কাঁপাকাঁপি চলা অবস্থাতেই জুটি বাধেন মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম।
শুরুতে দুজনেই ছিলেন অস্বস্তিতে। ৯ রানে ক্যাচ দিয়েও বাঁচেন মুমিনুল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই সেট হয়েছেন দুজনেই। তাদের সবালীল ব্যাটে মিরপুরের অননুমেয় উইকেটও যেন হয়ে গেল বেশ স্বস্তির।
ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান পেয়েছিলেন মুমিনুল। এরপর থেকেই ব্যাটে খরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে সময়টা ভালো যায়নি, সিলেট টেস্টেও তাই। একসময়ের আকাশচুম্বী ব্যাটিং গড় নামছিল ক্রমশ। দলের ও নিজের ভীষণ দরকারি সময়েই অবশেষে মুমিনুল ফিরলেন রানে। ফিফটি পেরুনোর পর উল্লাস করেননি, বোঝা যাচ্ছিল ক্ষিধেটা আরও বড় কিছুর দিকে। ১৫০ বলে ছুঁলেন তিন অঙ্ক। পেরিয়ে গেলেন দেড়শোও। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসও হাতছানি দিচ্ছিল। কিন্তু ২৪৮ বলে ১৯ চারে ১৬১ করে ক্যাচ দিয়ে দেন চাতারার বলে। মিরপুরের মাঠে টেস্টে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ ইনিংস। এরআগে ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৫১ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল।
মুশফিক আর আউট হননি। মুমিনুলের মতো আগ্রাসী ছিল না তার ব্যাট। উইকেটে সময় কাটিয়েছেন, থিতু হয়েছেন। খারাপ বল দেখে তবেই বের করেছেন রান। ১১১ রান করতে লাগিয়েছেন ২৩১ বলে। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির পর বুনো উল্লাস করেছেন বটে। তবে উইকেটে ছিলেন ধীর-স্থির, আস্থায় অবিচল।
মুমিনুল-মুশফিকের বীরত্বের আগে ছিল সিলেটের বিপর্যয়েরই ধারাবাহিকতা। এদিন ওপেন করতে নেমে আবারও ব্যর্থ ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। ১৬ বল খেলে কোন রান না করেই জার্ভিসকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ইমরুল। লিটন আউট হয়েছে ফাঁদে পড়ে। মিড উইকেটে ফিল্ডার রেখে ফ্লিক করতে প্রলুব্ধ করছিলেন জার্ভিস, সেখানেই ক্যাচ দেন তিনি।
অভিষিক্ত মোহাম্মদ মিঠুন ফেরেন সবচেয়ে দৃষ্টিকটুভাবে। ডোনাল্ড ত্রিরিপানোর অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট পেতে দিলেন। তখন স্লিপে তিনজন আর গালিতে দাঁড়িয়ে আরেক ফিল্ডার। শূন্য রান করা মিঠুনের ক্যাচ গেছে দ্বিতীয় স্লিপে।
এরপরই উইকেটে আস্তানা গেড়ে মুমিনুল-মুশফিক বিপর্যয় তো কাটিয়েছেনই, দলকে পাইয়ে দিয়েছেন বেশ শক্ত ভিত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রথম দিন শেষে
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩০৩/৫ (৯০) (লিটন ৯, ইমরুল ০, মুমিনুল ১৬১ , মিঠুন ০ , মুশফিক ব্যাটিং ১১১*, তাইজুল ৪, মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিং ০* ; জার্ভিস ৩/৪৮, চাতারা ১/২৮, ত্রিরিপানো ১/৩৩, রাজা ০/৬৩ , উইলিয়ামস ০/৩১, মাভুটা ০/৭৯, মাসাকাদজা ০/৭)
Comments