ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলা

রুশ বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন জুড়ে ৭৬টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, রাজধানী কিয়েভ এবং উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হেনেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন
রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের ডনেটস্কে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের সময় ক্ষতিগ্রস্ত আবাসিক ভবনে একজন দমকলকর্মী কাজ করছেন। ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২। ছবি: রয়টার্স

রুশ বাহিনী শুক্রবার ইউক্রেন জুড়ে ৭৬টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, রাজধানী কিয়েভ এবং উত্তর, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং কেন্দ্রীয় শহরগুলোতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আঘাত হেনেছে।

আজ শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়েভের একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ২ জন এবং খেরসনে ১ জনসহ মোট ৩ জন নিহত হয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে রাশিয়ার হামলা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। রুশ হামলায় উত্তরে খারকিভ এবং আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রীর অনুমান, ৯টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্টের একজন কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে জরুরি বিভ্রাটের কবলে পড়ে।

পাওয়ার গ্রিড অপারেটর উকেনারগো জানান, শুক্রবারের হামলার পর জ্বালানি সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামোতে আঘাত করে 'শীতকে অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ইউরি সাক বিবিসিকে বলেন, জরুরি সেবা সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি 'এখনো কঠিন'।

ইউক্রেনের কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি বলেছেন, রাশিয়ার নিক্ষেপ করা ৭৬টি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৬০টি বাধা দিয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী। সেগুলোর বেশিরভাগ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।

কিয়েভ শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুধু রাজধানীতেই প্রায় ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে, যা রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর বড় হামলার একটি। তারা আরও জানান, ৩৭টি ক্ষেপণাস্ত্র বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ভূপাতিত করেছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় শহর কিয়েভের আবাসিক ভবনে একটি রকেট আঘাত হানে, এতে কমপক্ষে ২ জন নিহত ও ৮ জন আহত হন। দক্ষিণের শহর খেরসন কর্তৃপক্ষ আরও ১ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ এবং উত্তর সীমান্তের কাছাকাছি সুমি অঞ্চল, পোলতাভা ও ক্রেমেনচুকের কেন্দ্রীয় শহরে রাশিয়ার আক্রমণে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। খারকিভের মেয়র ইগর তেরেখভ 'অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির' কথা বলেছেন।

দক্ষিণের জাপোরিজহজিয়ায় ১৫টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিতশকো বলেছেন, শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। তিনি বলেন, রাজধানীর পানি সরবরাহকে ব্যাহত হচ্ছে এবং শহরের মেট্রো লাইনগুলো বন্ধ আছে।

আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেকসি কুলেবা বলেন, রাশিয়া 'ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে'।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক বৃহস্পতিবার রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আরও হামলা হলে 'মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে পারে এবং বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা আরও বাড়বে'।

প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ড্যানিস শিমহাল চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় 'তাপ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র' ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে ব্যাপকভাবে ব্ল্যাকআউট ও পানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।

Comments