ইসরায়েলের বিপক্ষে কতটা শক্তিশালী হতে পারে এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স?

ফাইল ফটো | ছবি: রয়টার্স

গাজার পর এখন লেবানন দখলের মিশন শুরু করেছে ইসরায়েল।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইসরায়েলের এই সামরিক আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল জোটের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের যে কয়টি সামরিক শক্তি অবস্থান নিচ্ছে, তাদের সবাই ইরান সমর্থিত একটি বলয়ের অংশ। এই বলয়কে ইরানের 'এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স' বা 'প্রতিরোধের অক্ষ' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।

এই প্রতিরোধের অক্ষে কারা অন্তর্ভুক্ত? তাদের সামরিক-রাজনৈতিক শক্তিই বা কতটা?

ইরান: প্রতিরোধের কেন্দ্রস্থল
মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র শিয়া ও ফার্সিভাষী রাষ্ট্র ইরান। প্রতিবেশী সুন্নি রাষ্ট্রগুলোর চাপ ও ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র জোটের সামরিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মধ্যে ইরানের অস্তিস্ত্বই হুমকির মুখে ছিল। মূলত সেই হুমকি সামলাতে গত কয়েক দশকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে দেশটি। ইরানের রক্ষীবাহিনীর একটি বিশেষ শাখাই রয়েছে এই সামরিক সম্প্রসারণের দায়িত্বে, যার নাম 'কুদস ফোর্স'।

গত কয়েক দশকে ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনের মতো দেশগুলোতে ইরানপন্থী মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরি করেছে কুদস ফোর্স। এসব গোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে ইরান। প্রতিটি গোষ্ঠীই ইরানের মতো ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র বিদ্বেষ পোষণ করে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ রকম প্রক্সি বা মদদপুষ্ট সামরিক গোষ্ঠী তৈরি করার পেছনে মূল কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ এড়ানো। এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমেই পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়েছে ইরান। কেউ ইরান আক্রমণের চেষ্টা করলেও দেশটির প্রথম প্রতিরক্ষা বলয় হবে এই প্রক্সি শক্তিগুলো।

হিজবুল্লাহ, লেবানন
হিজবুল্লাহ একটি শিয়া সামরিক গোষ্ঠী। ১৯৮০-এর দশকে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইরানের সরাসরি সমর্থনে গঠিত হয় এই গোষ্ঠী। ২০০৬ সালে সম্মুখ যুদ্ধে ইসরায়েলকে কার্যত অচল করে দেওয়ার পর আরব বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান পায় হিজবুল্লাহ।

হিজবুল্লাহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অ-রাষ্ট্রীয় সামরিক শক্তি। লেবাননের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তিও তারা। সিরিয়ায় নিজেদের শাখা গড়ে তোলা; ইরাক, ইয়েমেনের মতো অন্যান্য দেশে ইরানপন্থী মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ অনেক কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করে তারা।

গত অক্টোবরে হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক দফায় মিসাইল যুদ্ধ চালায় হিজবুল্লাহ। তবে ২০০৬ সালের পর সব সময় সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ। সম্প্রতি সেই অলিখিত মধ্যস্থতাও ভেঙে ফেলে ইসরায়েল।

জুলাইয়ে বৈরুতে ইসরায়েলের উড়োজাহাজ বিমান হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহর সিনিয়র কমান্ডার ফুয়াদ শুকর। সেপ্টেম্বরে হিজবুল্লাহ সদস্যদের লক্ষ্য করে প্রথমে ডিভাইস হামলা ও পরে উড়োজাহাজ হামলা চালায় ইসরায়েল, যাতে নিহত হন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ। ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন সেনাদের সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ লেবানন দখলে নেওয়া শুরু করে ইসরায়েল।

হামাস, ফিলিস্তিন
ইরান-সমর্থিত সর্ববৃহৎ সুন্নি সামরিক গোষ্ঠী। ১৯৮৭ সালে পশ্চিম তীর এবং গাজায় ইসরায়েলি সামরিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রথম ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের সময় প্রতিষ্ঠিত হয় হামাস।

ইসরায়েলে আত্মঘাতি হামলা, দখলদার সেনাদের আটক ও হত্যার মতো অনেক কর্মকাণ্ডের পেছনে জড়িত হামাস। ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকার রাজনৈতিক ক্ষমতাও হামাসের হাতেই।

গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে একটি বড় হামলা চালায় হামাস, যাতে এক হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং আটক হন প্রায় ২৫০ জন। এই আক্রমণের পরই গাজা দখল করে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি জনতার ওপর সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশিই নারী ও শিশু।

হুতি সম্প্রদায়, ইয়েমেন
'হুতি' ইয়েমেনের একটি বড় সম্প্রদায়ের নাম। দুই দশক ধরে ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বর্তমানে ইয়েমেনে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হুতিদের হাতে।

২০১৪ সালে হুতিরা রাজধানী সানার দখল নেয়। এরপর সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক জোট ইয়েমেনে তাদের পুতুল সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনার চেষ্টা করলে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইয়েমেন। এখনো সেই যুদ্ধ চলছে।

গাজায় গণহত্যা শুরুর পর লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে হুতিরা। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই নৌপথ অস্থিতিশীল করে তুলে। এই হামলার পর ইয়েমেনের বিভিন্ন জায়গায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

সিরিয়া সরকার
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ, তেল ও সামরিক সহায়তা দিয়ে ক্ষমতায় রেখেছে ইরান। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালে সরকারি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ করেছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারাও।

ইসরায়েলের দাবি, সিরিয়ায় ইরানের অস্ত্র তৈরি ও মজুত করার কারখানাও আছে। যেখান থেকে বিভিন্ন ইরানপন্থী মিলিশিয়াকে অস্ত্র বিতরণ করা হয়।

এখানে কুদস ফোর্সের ঘাঁটিও রয়েছে। সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি দুটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীকেও সহায়তা দিয়ে থাকে ইরান।

ইরাকি মিলিশিয়া
সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে ইরাকে নির্যাতিত শিয়া জনতার মধ্য থেকে কিছু মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরি হয়। ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনে সাদ্দামের পতনের পর তারা ইরাকে ফিরে আসে। ইরানের সহায়তায় রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ইরাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে তারা। ইরাকি পার্লামেন্টেও তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতি আছে।

২০১৭ সালে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের কাছ থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল পুনরুদ্ধার করে এই মিলিশিয়ারা। বিচ্ছিন্নভাবে ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন মার্কিন স্থাপনায় আক্রমণের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। সম্প্রতি নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু আক্রমণ চালায় তারা।

Comments

The Daily Star  | English

How a 'Dervish Baba' conjured crores from a retired nurse

Want to earn easy money? Just find someone who thinks their partner is cheating on them, then claim to be a “Genie King” or “Dervish Baba,” and offer solutions to “relationship problems” for a fee

4h ago