গাজায় সর্বাত্মক হামলার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট অভিযানের সুপারিশ যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলি সেনারা গাজায় অভিযান চালাচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স
ইসরায়েলি সেনারা গাজায় অভিযান চালাচ্ছেন। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল সফররত যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধিদল গাজায় হামলার কৌশল পরিবর্তন বিষয়ে আলোচনা করেছে। দলটি ইসরায়েলকে গাজায় সর্বাত্মক হামলা না চালিয়ে শুধু হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান চালানোর সুপারিশ করেছে।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

গাজার বাসিন্দা, কতৃপক্ষ ও গণমাধ্যম জানিয়েছে, আজ শুক্রবার উত্তর গাজা, দক্ষিণ গাজার খান কর্তৃপক্ষ ও মিসরের সীমান্তে রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েল ট্যাংক ও বিমানহামলার তীব্রতা বেড়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আজ সকালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের এক বাড়িতে ইসরায়েলি বিমানহামলায় দুই শিশুসহ মোট চার জন নিহত হয়েছেন।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে হামাস। তাদের হাতে জিম্মি হন ২৪০ ব্যক্তি। এর পর থেকেই প্রায় ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) দীর্ঘ গাজা উপত্যকায় প্রতিশোধমূলক, নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। যার ফলে এই উপত্যকার বেসামরিক বাসিন্দারা বেঁচে থাকার মৌলিক উপকরণগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ১৯ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরও হাজারো মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মরদেহ এখনো উদ্ধার হয়নি। 

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের হামলা কৌশল পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার সময় হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সুপারিশ করেন, দেশটির উচিত গাজায় নির্বিচার হামলার পরিবর্তে হামাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলোর বিরুদ্ধে 'নিম্ন-মাত্রার' অভিযান পরিচালনা করা।

হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান। ফাইল ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান। ফাইল ছবি: এএফপি

ইসরায়েল সফররত সুলিভান আরও উল্লেখ করেন, এ ধরনের পরিবর্তন বাস্তবায়নের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' কাজ হবে।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

নাম না প্রকাশের শর্তে কর্মকর্তা আরও বলেন, 'সাম্প্রতিক বৈঠক, আগের বৈঠক এবং (যুক্তরাষ্ট্রের) প্রেসিডেন্ট ও (ইসরায়েলের) প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ফোন কলগুলোতে এ মুহূর্তে চলমান সর্বাত্মক হামলার কৌশল থেকে সরে এসে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে, নিম্ন-মাত্রার ও গোয়েন্দা তথ্য নির্ভর অভিযানের দিকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'

কর্মকর্তা আরও জানান, সুলিভান ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে অবশিষ্ট জিম্মিদের গাজা থেকে বের করে আনা এবং ভবিষ্যতে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়গুলো।

কর্মকর্তা জানান, 'এটা কখনোই প্রত্যাশিত নয় যে এ ধরনের সর্বাত্মক হামলা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে'।

কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে সুলিভান বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী সুলিভানকে জানায়, তারা 'বেসামরিক জনগোষ্ঠী থেকে হামাসকে আলাদা রাখতে অসামান্য উদ্যোগ নিচ্ছে'।

ইসরায়েলের দাবি, হামাসের যোদ্ধারা বেসামরিক জনগোষ্ঠী ও আবাসিক ভবনগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। তবে হামাস এই দাবী অস্বীকার করে।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন গাজার ২৩ লাখ বেসামরিক ব্যক্তিদের জীবন সুরক্ষিত রাখার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। 

উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমানহামলা পরবর্তী দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স
উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বিমানহামলা পরবর্তী দৃশ্য। ছবি: রয়টার্স

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এ বছরের শেষ নাগাদ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার মাত্রা কমিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে তিনি কি ভাবছেন।

জবাবে বাইডেন বলেন, 'আমি চাই না তারা হামাসের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করুক। কিন্তু সঙ্গে এটাও চাই যেন তারা বেসামরিক ব্যক্তিদের জীবন কীভাবে বাঁচানো যায়, সে বিষয়টির দিকে বিশেষ নজর দিক এবং সতর্ক থাকেন।

ইসরায়েলের টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুলিভান জানান, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকাকে একটি 'পুনর্গঠিত ও পুনরুজ্জীবিত' ফিলিস্তিনি সরকারে আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

সুলিভানের অন্যান্য আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে আছে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত 'উগ্র' ইহুদী বসতি স্থাপনকারীদের বিচারের আওতায় আনা।

আজ শুক্রবার তিনি রামাল্লাহ অঞ্চলে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

15h ago