আবারও সাগরে ভাসবে টাইটানিক!

টাইটানিক ২ এর অ্যানিমেটেড ছবি। ছবি: সংগৃহীত

টাইটানিক নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারও স্মৃতি, প্রশ্ন আর কৌতুহল। ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল প্রথম যাত্রায় স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বিলাসবহুল এই জাহাজের।

ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহাসাগরে হিমশৈলের ধাক্কায় ডুবে যায় জাহাজাটি। প্রাণ হারায় অন্তত ১৫০০ যাত্রী।

টাইটানিকের সেই যাত্রা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি সিনেমাও হয়েছে। জেমস ক্যামরনের অস্কারজয়ী ব্লকবাস্টার 'টাইটানিক' সিনেমা নিয়ে মানুষের উন্মাদনা এখনও কমেনি।

প্রথম টাইটানিক, ১৯১২ সাল। ছবি: সংগৃহীত

আজ থেকে এক শতাব্দী আগের ঘটনা হলেও টাইটানিক এখনো অনেকের কাছে স্বপ্নের জলযান। এ জাহাজকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য মিথ। আর সেসব মিথকে সঙ্গী করে এবার সাগরে ভাসবে টাইটানিক-২।

হুবহু টাইটানিকের আদলেই তৈরি হচ্ছে টাইটানিক-২। সিডনি অপেরা হাউসে এ সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন স্বপ্নের কথা জানান অস্ট্রেলিয়ার ধনকুবের ও ব্লু স্টার লাইনের মালিক ক্লাইভ পামার।

তবে এটাই পামারের টাইটানিক-২ তৈরির প্রথম ঘোষণা নয়। ২০১২ সালে ও ২০১৮ সালেও একই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ছয় বছর পর এটা তার তৃতীয় ঘোষণা।

কনসেপ্ট আর্ট, টাইটানিক-২। ছবি: সংগৃহীত

আবার কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পামার জানান, বাড়িতে বসে বসে টাকা গোনার চেয়ে টাইটানিকের মতো কিছু একটা তৈরি করা অনেক বেশি আনন্দের।

পামারের কাছে অর্থ উপার্জন কোনো বিষয় না। কারণ প্রতি বছর শুধু খনির রয়্যালিটি থেকে ৫ লাখ ডলার আয় করেন তিনি। তাই অর্থ কোথায় খরচ করবেন—এটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তবে ২০১২ ও ১৮ দুবারই টাইটানিক নির্মাণের ঘোষণার পর সমস্যায় পড়েছিলেন পামার। প্রথমবার চীন সরকারের সঙ্গে তার প্রতিষ্ঠানের একটা আর্থিক চুক্তি নিয়ে সমস্যায় পড়েন। পরেরবার করোনা মহামারি ও মামলা সংক্রান্ত বেশ কিছু জটিলতায় পড়লে পিছিয়ে যায় টাইটানিকের স্বপ্ন।

সবকিছু কাটিয়ে এখন আবার সেই স্বপ্নযাত্রা শুরু করতে চান পামার। তিনি জানান, অপ্রত্যাশিত দেরির পরও টাইটানিককে সাগরে নামানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছেন তিনি। দরপত্র চাওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই নিশ্চিত করবেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে এবার আর চীনা প্রতিষ্ঠান নয়, ইউরোপ থেকেই কাউকে চাচ্ছেন তিনি।

১৯১২ সালের টাইটানিকের মতো এই জাহাজেও রয়েছে রাজকীয় সিঁড়ি। ছবি: সংগৃহীত

এই ধনকুবের জানান, পরিকল্পনা আগের মতোই থাকছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাহাজটি সাগরে চলাচলে কোনো আইনি জটিলতা আছে কি না, তা ইতোমধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

জাহাজটি দেখতে কেমন হবে তার ৮ মিনিটের অ্যানিমেটেড একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে পামারের দল। সেখানে দেখা যায়, ১৯১২ সালের টাইটানিকের মতো পোশাক পরে ঘুরছেন যাত্রীরা।

এক মুখপাত্র বলেন, ভ্রমণের সময় যাত্রীদের ওই সময়কার পোশাক পরতে উৎসাহিত করছেন তারা।

টাইটানিক-২ দেখতে অবিকল প্রথম টাইটানিকের মতো হলেও নিরাপত্তা ও বিনোদনের কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু পরিবর্তন থাকবে। অসংখ্য লাইফ বোটের পাশাপাশি যুক্ত করা হচ্ছে নেভিগেশন ও র‌্যাডার।

তৃতীয় শ্রেণীর ডাইনিং হল। ছবি: সংগৃহীত

৮৩৩ ফুট লম্বা ও ১০৫ ফুট চওড়া জাহাজটিতে কেবিন থাকছে ৮৩৫টি। মোট ৯টি ডেকে যাত্রীর ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩৪৫ জন। অর্ধেকটাই সংরক্ষিত থাকবে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য। প্রথম টাইটানিকের মতো এখানেও থাকছে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য লম্বা ডাইনিং টেবিলে খাওয়ার ব্যবস্থা।

প্রথম টাইটানিকের মতো এই জাহাজও যাবে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক পর্যন্ত। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম শ্রেণীর টিকিটের দাম ৪০ লাখের মতো হতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো কিছু জানায়নি।

হেলেন বেনজিগার, টাইটানিক জাহাজের জীবিত যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

সুবিশাল এই জাহাজের পুনর্নিমাণের প্রসঙ্গে টাইটানিকের বেঁচে ফেরা যাত্রী হেলেন বেনজিগার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বেঁচে ফিরে আসা যাত্রীদের জন্য এটি খুবই সম্মানজনক। বিশেষ করে যারা এখনো ওই ভয়াবহ স্মৃতি সাথে নিয়ে জীবনযাপন করছে।

দুঃখজনক সমাপ্তি নয়, শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা নিয়েই টাইটানিকের যাত্রা শুরু করতে চান বিলিওনিয়ার পামার। তিনি বলেন, 'বিশ্বের সব দেশের মধ্যে শান্তির প্রতিষ্ঠার প্রতীক হবে টাইটানিক-২।'

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh, Pakistan, China launch trilateral cooperation mechanism

A working group will be formed to follow up on and implement the understandings reached during the meeting

1h ago