মেলায় জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার নীরব প্রতিযোগিতা

জামাই মেলা
গাজীপুরের কালীগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে আড়াইশ বছরের পুরোনো জামাই মেলা। ছবি: স্টার

গাজীপুরের কালীগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে আড়াইশ বছরের পুরোনো জামাই মেলা। প্রতি বছর অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা ঘিরে দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল এলাকায়।

গতকাল সোমবার দিন শেষে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা ছিল।

মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি কিশোর আকন্দ বলেন, 'মেলাটি এখন এই অঞ্চলের উৎসবে পরিণত হয়েছে। মেলাটি আড়াইশ বছরের পুরোনো। বিভিন্ন প্রকার বড় বড় মাছ কিনতে হাজারো মানুষের সমাগম হয়। মেলাটি মাছের জন্যেই বেশি পরিচিত।'

প্রথমে এই মেলা খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠিত হতো। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫৫ বছর ধরে এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলাটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

জামাই মেলা
মেলা ঘিরে দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল এলাকায়। ছবি: স্টার

জানা যায়, মেলাটি এই অঞ্চলের মানুষের কাছে শীতকালীন সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে সমাদৃত। কথিত আছে, আশপাশের এলাকার জামাইরা এ মেলা থেকে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যায়। মূলত এটা মাছের মেলা হলেও সবাই এটাকে 'জামাই মেলা' বলে থাকে। কারণ স্থানীয় জামাই এবং শ্বশুরদের মধ্যে চলে বড় মাছ কেনার নীরব প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর সারাদেশ থেকে বিক্রেতারা এখানে মাছ নিয়ে আসেন। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসেন মাছ কিনতে।

সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিনিরাইল এলাকাজুড়ে মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন মাছ বিক্রেতারা। শতাধিক দোকান বসিয়ে মাছ বিক্রেতারা এখানে মাছ বিক্রি করছেন। তারা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে সুর ধরে হাঁক-ডাক করে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ উপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে কত বেশি ওজনের বা বড় মাছ মেলায় আনতে পারেন। প্রতি বছর এ মেলাকে ঘিরেছে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে এই এলাকায়।

মাছ বিক্রেতা করিম মিয়া বলেন, 'মেলায় আমি দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইর, চিতল, কালাবাউশ ও শাপলা মাছ নিয়ে এসেছি। আমার এখানে এক কেজি থেকে শুরু করে ৮০ কেজি পর্যন্ত ওজনের মাছ রয়েছে। এসব মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা দামে একটি কাতল মাছ বিক্রি করেছি।'

কুষ্টিয়া থেকে মেলায় শ্বশুর বাড়ির জন্য মাছ কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'আমি এই এলাকার জমাই। আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে শুনেছি এখানে প্রতিবছরই মাছের মেলা হয়। এই মেলাকে মানুষ জামাই মেলা হিসেবে চিনে। সে কারণে আমি আমার শ্বশুর বাড়ির জন্য বড় একটি মাছ কিনতে এসেছি।'

জানা গেছে, এবারের জামাই মেলায় পাখি মাছের কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়ভাবে এটা পাখি মাছ নামে পরিচিত হলেও এটির সাইন্টিফিক নাম সেইল ফিশ। দ্রুতগামী এ মাছ খেতে খুব সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ মাছ গভীর সমুদ্রে বেশি দেখা যায়।

জামাই মেলা
মেলা ঘিরে দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল এলাকায়। ছবি: স্টার

এদিকে, হাজারো মানুষের ভিড়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন আকরাম হোসেন হিরনসহ মেলা দেখতে আসা কয়েকজন। তাদের অভিযোগ, আশপাশে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় আনন্দের চেয়ে জনদুর্ভোগ বেশি হচ্ছে।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহতাব উদ্দিন বলেন, 'মেলা ঘিরে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমাদের পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Barishal University protest

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

9h ago