বিলিভ ইট অর নট

যেভাবে খরগোশের হাতে নাস্তানাবুদ হন নেপোলিয়ন

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সে রিপাবলিকান সেনাবাহিনীর প্রথম কমান্ডার নিযুক্ত হন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট। পরে ফ্রান্সের প্রথম সম্রাট হন তিনি। আজও তার বীরত্বের কথা লোকের মুখে মুখে ফেরে। তবে মহাপরাক্রমশালী শত্রুদের পরাজিত করলেও একবার খরগোশদের হাতে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল তাকে।

ঘটনার নেপথ্যে

১৮০৭ সালের কথা। টিলসিট চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে নেপোলিয়ন সমাপ্তি টানলেন ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের। এরপর সাফল্য উদযাপন করতে ঠিক করলেন খরগোশ শিকার করবেন। কমান্ডারদের চিফ অব স্টাফ আলেক্সান্দ্রে বার্থেয়ারের নেতৃত্বে স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হলো ৩ হাজার খরগোশ।

এরপর উৎসবের পালা। সবাই সমবেত হতে থাকলেন সেখানে। তবে এরপর যা ঘটতে যাচ্ছিল তা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।

বার্থেয়ারের খরগোশ নিয়ে তেমন ধারণা ছিল না। বিশাল এক মাঠের প্রান্তে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল খরগোশগুলোকে। এগুলো পোষা খরগোশ, লম্বা কান আর সুন্দর মায়াকাড়া চেহারা।

খাঁচার দরজা খোলা হলো, খরগোশগুলোকে বের করা হবে। কিন্তু খাঁচার দরজা খুলতেই বাঁধে বিপত্তি! ঘরে পোষা এসব খরগোশ মানুষকে ভয় পেত না। তারা ভেবেছিল তাদের খাবার দেওয়ার সময় হয়েছে। তাই একমুঠো খাবারের আশায় সবাই বেরিয়ে এলো দলে দলে।

ঐতিহাসিক ডেভিড চ্যান্ডলারের মতে, 'হাজারো খরগোশ দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ঘিরে ফেলেছিল নেপোলিয়ন ও তার অতিথিদের। তার সেনাবাহিনীর চেয়েও নেপোলিয়নের রণকৌশল ভালো বুঝেছিল এই খরগোশগুলো।'

খরগোশদের প্রতিশোধ

প্রথমে উপস্থিতরা ভেবেছিলেন খরগোশগুলো মজা করছে। তারা হেসেই কুটিকুটি। কিন্তু 'যত হাসি তত কান্না'র মতো পরিস্থিতি হলো দ্রুতই।

চাকে ঢিল দিলে মৌমাছি যেভাবে হানা দেয়, তেমনিভাবে এগোতে থাকলো খরগোশের দল। খাবারের জন্য অতিথিদের জুতোয় দাঁত ফুটিয়ে ও কামড়ে হুলস্থুল বাঁধিয়ে দিল তারা।

হতভম্ভ অতিথিরা নিড়ানি দিয়ে খরগোশগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে খরগোশরা পাল্টা আক্রমণ চালায়, কাঁপতে থাকা অতিথিদের 'ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি' অবস্থা তৈরি হয়। তারা নিড়ানি, লাঠি, এমনকি চাবুক ব্যবহার করেও নিস্তার পায়নি।

নেপোলিয়ন তার কাছে থাকা অস্ত্র দিয়েও খরগোশদের আঘাত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এই দঙ্গলের ভেতর তিনি ঠিকঠাক নিশানাই করতে পারছিলেন না৷ তাই তিনি পিছু হটেন, আশ্রয় নেন নিজের ঘোড়াগাড়িতে।

খরগোশেরা তাতেও থামেনি। তারা কমান্ডারকে ধাওয়া দেয়। নেপোলিয়ন স্থির বসে থাকেন তার আসনে। কিন্তু বাইরে খরগোশদের আক্রমণ চলতেই থাকে। কোনো কোনো খরগোশ তার ঘোড়ায় টানা ক্যারিজের ভেতরেও ঢোকার চেষ্টা করে।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতবুদ্ধি ও ভীষণ বিব্রত নেপোলিয়ন বেশ খানিকটা পথ যাওয়ার পর স্বাভাবিক হন। ক্যারিজে ঢোকা খরগোশগুলোকে জানালা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়।

খরগোশেরা একসময় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। তারা ভেবেছিল তাদের দেয়া হবে খাবার। কিন্তু খাবার তো আর এলো না। অত হট্টগোলের মাঝে কারো মাথায় বোধহয় এটা খেলেওনি। বার্থেয়ার বুনো খরগোশ বাছলে তবু সেগুলো ফিরে যেতো জঙ্গলে, মানুষ থেকে দূরে। কিন্তু ক্ষুধার্ত পোষা খরগোশের খাবার দেবার জন্য চাই মানুষকেই।

বার্থেয়ারের এরপর গুরুতর কিছু হয়নি। ১৮১৫ সালে ওয়াটারলুর যুদ্ধ শুরুর আগের দিন বার্থেয়ার বড় একটি জানালা দিয়ে পড়ে গিয়ে মারা যান। দুর্ঘটনা না হত্যা – সে মীমাংসা হয়নি। নেপোলিয়ন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেন্ট হেলেনায় নির্বাসিত হন, মারা যান ১৮২১ সালে।

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

তথ্যসূত্র: রিপ্লেইসডটকম

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

7h ago