বিচিত্র

আর্জেন্টিনার রহস্যময় ঘূর্ণায়মান দ্বীপ

আর্জেন্টিনার রহস্যময় ঘূর্ণায়মান দ্বীপ
আর্জেন্টিনার রহস্যময় ঘূর্ণায়মান দ্বীপ। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী পারানা বয়ে বলেছে ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনার ওপর দিয়ে। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার। আর এতটা দীর্ঘ নদীর ভেতর লুকিয়ে থাকা সম্ভব অজানা অনেক কিছুই, যা হয়তো রয়ে গেছে আমাদের দৃষ্টিসীমার আড়ালে। 

এমনই চমকপ্রদ একটি বিষয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে পারানা নদীর মোহনায়। আর সেটি হলো ১২০ মিটার ব্যাসের একটি দ্বীপ। এর প্রায় পুরোটাই গোল, নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে সেটি মুক্তভাবে ভাসতে সক্ষম! 

এমন ভাসমান দ্বীপ আরও অনেক আছে। ফিনল্যান্ড, তুরস্ক, ইতালি, সার্বিয়ায় কিংবা রোমানিয়া ও ইউক্রেনজুড়ে থাকা দানিয়ুব নদীর মোহনায় এমন ধরনের দ্বীপের সন্ধান পাওয়া যায়। 

আর্জেন্টিনার রহস্যময় ঘূর্ণায়মান দ্বীপ

বলিভিয়া ও পেরুর সীমান্তের মধ্যবর্তী টিটিকাকা হ্রদ, ভারতের লোকটাক হ্রদ ও অন্যান্য আরও কিছু জায়গায় দেখা যায় এমন বৈশিষ্ট্য। তবে আর্জেন্টিনার এই ভাসমান দ্বীপটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা। 

কেন এটি আলাদা? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা হলো, দ্বীপটির নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে তীর্যক ঘূর্ণির পেছনে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হওয়া বৃহদাকৃতির কিছু কূপ। এরা জলের এমন প্রবাহ তৈরি করে যা দ্বীপটিকে ঘোরায়। ঘুরতে থাকা দ্বীপটির সঙ্গে আশপাশের মাটির সংঘর্ষ ঘটার ফলে এটি প্রয়োজনীয় শক্তি পায়, যার ফলে কাদামাটির এলাকাগুলো আলাদা হয়ে পড়ে ও ক্ষয় হতে থাকে। 

তবে কেউ কেউ মনে করেন চোখের আকৃতির এই দ্বীপটির সঙ্গে সংযোগ আছে এ জগতের বাইরের অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপার-স্যাপারের। 

আর্জেন্টিনার চিত্রপরিচালক সার্জিও নিউসপিলার  অতিপ্রাকৃত বিষয়ের ওপর একটি সিনেমা বানানোর সময় লোকেশন খুঁজতে গিয়ে এই চোখের মতো আকৃতির জায়গাটি সর্বপ্রথম খুঁজে পান। প্রথম দেখায়  এটিকে তার কাছে একদম স্থায়ী মনে হয়েছিলো, কিন্তু পরে আবার খতিয়ে দেখতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন দ্বীপটি কিছুটা সরে গেছে। তার আগ্রহ জাগে। ব্যাপারটি ভালোভাবে জানার জন্য তিনি আরও গভীরে যান এবং সিনেমাটির থিম পরিবর্তন করে একটি বিজ্ঞানবিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর পরিকল্পনা করেন। 

বিভিন্ন সময়ে গৃহীত এর অবস্থানগত ভিন্নতার ছবিগুলো  গুগল আর্থ স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফেও দেখা যায়। এর অবস্থান নির্ণিত হয় দক্ষিণে ৩৪ ডিগ্রি ১৫ মিনিট ০৭ দশমিক ৮ সেকেন্ড ও পশ্চিমে ৫৮ ডিগ্রি ৪৯ মিনিট ৪৭ দশমিক ৪ সেকেন্ড। 

পরবর্তীতে জানা যায়, এই দ্বীপটি ২০০৩ সাল থেকে পারানা নদীর মোহনায় একটি অংশ হিসেবে রয়েছে। ২০১৫ সালে নিউসপিলার এই ঘূর্ণায়মান দ্বীপের রহস্য উদঘাটনের জন্য নিউইয়র্কের একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অর্থ উত্তোলন করতে শুরু করেন। তারা আশা করেছিলেন, ৫০ হাজার ডলার উঠে এলেই তারা সম্পূর্ণ রহস্য উদঘাটন করতে পারবেন। তবে তারা তুলতে পেরেছিলেন কাঙিক্ষত টাকার মাত্র এ পঞ্চমাংশ। তাই গবেষণার মাধ্যমে দ্বীপটিকে ঘিরে প্রচলিত অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলোর নেপথ্য কারণ জানা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। 

 

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস, মাই বেস্ট প্লেস, এক্সপ্লোরসওয়েব

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়
 

Comments

The Daily Star  | English

Govt forms 11-member media reform commission

Senior journalist Kamal Ahmed to lead the commission

27m ago