আকস্মিক ধর্মঘটে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২০ রুটে যাত্রী দুর্ভোগ

চট্টগ্রামের অস্থায়ী বাস টার্মিনালে কোনো বিশ্রামাগার ও শৌচাগার না থাকায় ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

অফিসের কাজে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায় যাওয়ার জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি জালাল উদ্দিন কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় যান। তখন সকাল ৯টা। সেখানে গিয়ে চরম বিস্মিত হন তিনি। কারণ, চট্টগ্রামের অস্থায়ী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটের পাশাপাশি কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার উদ্দেশে কোনো বাস ছাড়ছে না।

কৌতূহলী জালাল রাস্তার পাশের এক পান বিক্রেতার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের ২০টি রুটে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো আজ সোমবার ধর্মঘট পালন করছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে জালাল বলেন, 'এটা কী ধরনের ধর্মঘট? এই ধর্মঘট সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। অফিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে চন্দনাইশ যেতেই হবে, অথচ দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে আছি।'

সড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, মহাসড়কে থ্রি হুইলার ও হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ সকালে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের আকস্মিক ধর্মঘটের কারণে জালালের মতো দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন গন্তব্যের শত শত যাত্রী কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় আটকা পড়েন।

আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা দক্ষিণ চট্টগ্রামের রুটগুলোতে ধর্মঘটের ডাক দিলেও তারও আগ থেকে কোনো বাস গন্তব্যে ছেড়ে যায়নি বলে দাবি যাত্রীদের।

যাত্রীরা এই ধর্মঘটের কথা না জানায় অস্থায়ী বাস টার্মিনালে প্রচণ্ড রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষাসহ নানা দুর্ভোগে পড়েছেন।

২০১১ সালের ২৩ আগস্ট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এবং বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালটি অস্থায়ীভাবে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় স্থানান্তরিত হয়।

সিডিএর তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সিএমপির তৎকালীন কমিশনার আবুল কাশেম ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ চুক্তিতে সই করেন।

সিএমপি ও সিডিএ সূত্র জানায়, সেই সময় বহদ্দারহাট এলাকায় একটি ফ্লাইওভার নির্মাণাধীন থাকায়, বন্দরনগরীর রুটে যানজট নিরসনের জন্য টার্মিনালটি সাময়িকভাবে শহরের উপকণ্ঠে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। বাস টার্মিনালটি ২০১৪ সালে বহদ্দারহাট এলাকায় পুনরায় স্থানান্তর করার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি।

অস্থায়ী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য কোনো বিশ্রামাগার ও শৌচাগার নেই।

শিপ্রা পাল তার তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে বাঁশখালী উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য এই বাস টার্মিনালে আসেন সকালে। ধর্মঘটের কথা জানা ছিল না তার। ফলে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদের মধ্যে রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।

শিপ্রা বলেন, 'এখানে অপেক্ষা করার কোনো জায়গা নেই। আমার ছোট্ট ছেলেটা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ বোধ করছে।'

পরিবহন নেতাদের দাবি, তাদের এই ধর্মঘট পূর্ব ঘোষিত এবং এর জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন।

আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুসা বলেন, 'আমরা সাংবাদিকদের ধর্মঘটের বিষয়ে অবহিত করেছি এবং সংবাদ প্রকাশের জন্য সব মিডিয়া হাউসে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছি। এটি একটি প্রতীকী ধর্মঘট ছিল এবং দুপুর ১২টায় ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে গেছে।'

তিনি জানান, এই টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের সাতটি উপজেলা এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলাসহ ২০টি রুটে বাস চলাচল করে।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টার্মিনাল এলাকায় মানববন্ধন করে পরিবহন সংগঠনগুলো। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের (পূর্বাঞ্চল) সভাপতি মৃণাল চৌধুরী।

মৃণাল তার বক্তৃতায় বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে অবৈধ যানবাহন চলাচলের কারণে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া, মহাসড়কে অবৈধভাবে থ্রি হুইলার অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি বলেন, 'আমরা বিষয়টি পুলিশ ও বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি, কিন্তু তারা এখনো এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। তাই পরিবহন সংগঠনগুলো আজকের কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছে।'

পরিবহন নেতাদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) আমীর খসরু ভূঁইয়া বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।'

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago