সংস্কার প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদের সীমায় বিএনপির আপত্তি

ছবি: সংগৃহীত

কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না—এই সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে একমত নয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সরবরাহ করা স্প্রেডশিটের মন্তব্য বিভাগে দলটি লিখেছে, এ বিষয়ে তারা একমত নয়। বিষয়টি হওয়া উচিত, কোনো ব্যক্তি টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বাধিক দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। টানা বা অন্য যেকোনো উপায়ে তিনি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশিও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, যদি দুই মেয়াদের মাঝে একটি বিরতি থাকে।

বিএনপি কমিশনের এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে যে, একই ব্যক্তি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না।

দলটি বলেছে, এটি সংশ্লিষ্ট দলের সিদ্ধান্ত।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর সাংবিধানিক বিধিনিষেধ আরোপ করা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল ভাবনার বিরোধী।

ঐকমত্য কমিশন গত ৬ মার্চ বিএনপিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে ১৬৬টি মূল সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে মতামত দিতে অনুরোধ জানায়।

এই প্রস্তাবগুলো সংবিধান, নির্বাচন, প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংক্রান্ত।

কমিশন ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোর প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়।

বিএনপি গতকাল রোববার তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫টি দল তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জমা দেন।

এরপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিক্রিয়া জমা দেওয়ার পাশাপাশি সংস্কার কমিশনের পাঁচটি সুপারিশ সম্পর্কে বিস্তারিত মতামতও দিয়েছে। দলটি শিগগির বাকি সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জমা দেবে।

বিএনপি মনে করে, সশস্ত্র বাহিনী প্রধান, দুর্নীতি দমন কমিশন ও নির্বাচন কমিশন নিয়োগের জন্য জাতীয় সংবিধান পরিষদ গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই।

তবে বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও এর মেয়াদ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত।

বিএনপি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট চার বছর মেয়াদি সংসদের প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে সমর্থন করে, যেখানে ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষ (জাতীয় পরিষদ) এবং ১০৫ আসনের উচ্চকক্ষ (সিনেট) থাকবে।

কিন্তু দলটির মতে, এটি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে বিস্তারিত আলোচনায় চূড়ান্ত হওয়া উচিত।

বিএনপি সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ করার প্রস্তাবকে সমর্থন করে। তবে, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে।

দলটি সংসদের নিম্নকক্ষে ১০ শতাংশ যুব প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, প্রার্থী মনোনয়ন রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব বিষয় হওয়া উচিত বলে তারা মনে করে।

এ ছাড়া, বিএনপি সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটি সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা ২১ বছরে নামিয়ে আনার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে বিএনপি দুইজন ডেপুটি স্পিকারের সুপারিশে সমর্থন করেছে, যেখানে একজন বিরোধীদলের হবেন।

বিএনপি মনে করে, সংবিধান সংশোধনের জন্য উভয়কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং পরে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা বাস্তবসম্মত নয়। সব সাংবিধানিক সংশোধনী গণভোটের মাধ্যমে করার প্রয়োজন নেই।

দলটি 'গণপ্রজাতন্ত্রী' বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছে না।

বিএনপি সমতা, মানব মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতি হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। একাধিক ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির সহাবস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়ার প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে।

দলটি সুপারিশ করেছে, সংবিধানের যে ধারাগুলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মৌলিক নীতিগুলোকে সংজ্ঞায়িত করে, সেগুলোকে ১৫তম সংশোধনীর আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা উচিত।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, '১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে সমানভাবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না।'

তিনি বলেন, 'সংবিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভূমিকা (প্রস্তাবনা)। কমিশন এটিকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে, যা আমরা উপযুক্ত মনে করি না।'

বিএনপির মতে, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দলটি মনে করে, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা উচিত। কেননা, জাতীয় পরিচয়পত্র আলাদা স্বাধীন প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে গেলে নির্বাচন কমিশনকে বারবার ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হবে।

বিএনপি জনপ্রশাসন সংস্কারের ২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের সঙ্গে একমত, তবে বাকি প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করে।

জুডিশিয়ারি সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রায় সব প্রস্তাবেই একমত জানিয়েছে বিএনপি।

তবে, নির্বাচন কমিশনকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সুপারিশের বিরোধিতা করেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনে মনোযোগী হওয়া, গণভোটে নয়।

তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, আগে জাতীয় নির্বাচন হওয়া দরকার।'

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ে দলটি ২০টি প্রস্তাবের মধ্যে ১১টিতে সম্মতি জানিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago