দ্য ডেইলি স্টারকে একান্ত সাক্ষাৎকার

আমরা শুধু ফ্যাসিলিটেটর, কোনো শাসক না: ড. ইউনূস

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

দেশের মানুষের নানা প্রত্যাশার মধ্যে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের হাল ধরেছে, সম্প্রতি সেই সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই কয়েক মাস ছিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ।

শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অধ্যাপকের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম। সেখানে উঠে এসেছে সংস্কার ও নির্বাচন থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও পররাষ্ট্রনীতিসহ নানা বিষয়।

বুধবার সাক্ষাৎকারটির সংক্ষিপ্ত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। আজ প্রকাশিত হলো সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনামকে বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি ডেইলি স্টারকে প্রথম সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ১৯৯২ সালে। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের প্রথম সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, এর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনি সারা জীবন দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এসব নিয়েই কাটিয়েছেন। হঠাৎ এই রাজনীতির জীবনে এসে কেমন লাগছে?

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস: খেই ধরার চেষ্টা করছি। এটা আমার অপরিচিত জগত। সারা জীবন ধরে যে কাজ করেছি এর মধ্যে সেটার প্রতিফলন কীভাবে হবে, হতে পারে, কোন দিক থেকে হতে পারে—সেগুলো দেখার চেষ্টা করছি।

এটা এমন জগত, এটার ভেতরে ঢোকাও খুব কষ্টের জিনিস। কিন্তু, মাঝে মাঝে সুযোগ হয়। যেমন: কপ-২৯। সেখানে সুযোগ হলো, কথা বললাম, সেটাই যেটা সারা জীবন ধরে বলে এসেছি। অনেকে মনে করছে যে, এটা সরকারের কথা হলো না। আমি পরিষ্কার বলেছি যে এটা আমার কথা। আমার কথা আমি বলি। কাজেই আমি বলেছি। কে পছন্দ করবে, অপছন্দ করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি এখানে থাকলেও এই কথাগুলো বলব, বাইরে থাকলেও বলব। কাজেই সুযোগ পেলে সেগুলো নিয়ে আসি।

ডেইলি স্টার: ওটা আপনার জগত। কিন্তু রাজনীতি তো আপনার জগত না। রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতি, নতুন দিগন্ত উন্মোচনের রাজনীতি—এখানে কেমন অনুভব করছেন?

ড. ইউনূস: এটা খুব কঠিন জিনিস। কিন্তু চালু রাখতে হবে। এর নিজস্ব গতি আছে, সেভাবে চলে। সেখানে আমার কাজকর্ম ঢোকানো কষ্টকর। সব ঠিক ফিট করে না। যেখানে ফিট করার সুযোগ আছে, সেখানে চেষ্টা করে যাই। যেমন: সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস। এখানে সুযোগ আছে। আমি বলি, থ্রি জিরো ক্লাবের কথা। এটাই তো সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলসের কথা বলে। যেসব কথা আমি বলেছি, সেটা এখানে আনার জন্যই বলেছি, বাইরে রেখে আসার জন্য বলিনি।

কাজেই যেখানে যেখানে সম্ভব বলা, লোকের পছন্দ হলে কন্টিনিউ করবে, পছন্দ না হলে চলে যাবে। অন্তত কথাগুলো বলতে হবে। আমরা নতুন সভ্যতা গড়ার কথা বলি। আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি, আমরা যে সভ্যতা সৃষ্টি করেছি এটা আত্মবিধ্বংসী। এই আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং নতুন একটি সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে।

এই পরিবর্তনটা কোথায় কোথায় হবে? আমাদের এই সভ্যতায় কোথায় পরিবর্তন করা যাবে? যেখানে সুযোগ হয় সেটা বলার চেষ্টা করি। আমরা দিয়ে গেলাম, পরবর্তীতে যারা আসবে তারা বুঝবে না বা অবজ্ঞা করবে—সেটাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করে যাব। এমন না যে জোর করে করছি।

ডেইলি স্টার: বিশ্ব নেতৃত্বের মাঝে এটার কোনো প্রতিফলন দেখেন?

ড. ইউনূস: দেখি। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। তরুণরা বিশ্বব্যাপী নতুন সম্ভাবনা। সেখানেও বাংলাদেশের একটা বড় প্রভাব আছে। বাংলাদেশ তরুণদের দেশ। এখানে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স ৫০ বছরের নিচে। এত তরতাজা মানুষ আর কোথাও পাবেন না, বিশেষ করে জাপানের মতো যেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে। জাপান বার্ধক্যের দেশ। সেখানে কেউ কাউকে চেনে না। কে কীভাবে মরে যাচ্ছে কেউ জানে না। এত সম্পদ গড়েছে, কিন্তু মৃত্যুর সময় আশেপাশে কেউ নেই—কোনো সন্তান নেই, কেউ নেই। একজন বয়স্ক ব্যক্তি আরেক বয়স্ক ব্যক্তিকে বলেন, এখানে বাতি জ্বালিয়ে রাখব; যতদিন বাতি জ্বলবে, মনে করবেন বেঁচে আছি। এত সম্পদের মালিক হলেও সে দেশে মৃত্যুটা এত করুণ, অসহায়ের। গন্ধ বের হলে বোঝা যায় এখানে মরদেহ পরে আছে।

আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমাদের সুযোগ আছে তারুণ্যের শক্তিকে ব্যবহার করার। তারুণ্য মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন চিন্তা, সৃজনশীলতা। সেটাকেই উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি। স্বপ্নগুলো দেখা, সেগুলো বাস্তবায়নের পেছনে ছোটা। বারবার বলি, যদি স্বপ্ন দেখো, তাহলে সেটা বাস্তবায়নের সুযোগ হয়। স্বপ্ন না দেখলে বাস্তবায়ন হবে কীভাবে? স্বপ্নই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। স্বপ্নকে ভয় পাওয়া যাবে না। এটাকে খারাপ জিনিস মনে করা যাবে না। আমরা মনে করি যে স্বপ্ন দেখা মানেই সে বাস্তবতা বিমুখ, সে কবি হয়ে গেছে। অথচ, কবিই ভবিষ্যৎ দেখছে। এ জন্যই আমরা কবিদের সম্মান করি। আমরা যা দেখছি না, সেটা সে দেখছে। কাজেই স্বপ্ন দেখে বলেই সেটা পূরণ হয়। স্বপ্ন না দেখলে পূরণ হবে কীভাবে?

ডেইলি স্টার: এত সুন্দর জগত থেকে একটু বাস্তবমুখি হই। আপনার সরকার ১০০ দিনের মাইলফলক অতিক্রম করল। এই সময়ে সাফল্যগুলো কী, আর কোন জায়গায় সফল হতে পারেননি?

ড. ইউনূস: কিছু সাফল্য আছে, কিছু জায়গায় সাফল্য নেই—সবমিলিয়ে হয়েছে। কারণ, এই ১০০ দিন খুব কঠিন সময় আমাদের জন্য। টালমাটাল একটা পরিস্থিতিতে এই সরকারের জন্ম হয়েছে। তার আগের মুহূর্তে কোনো সরকারই ছিল না। এক সরকার আরেক সরকারকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। আমাদের সেই সুযোগও হয়নি। একটা বিপ্লবের মধ্য থেকে আমাদের জন্ম হয়েছে।

ডেইলি স্টার: অলিম্পিক থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বুঝে নিয়ে চলে আসতে হয়েছে।

ড. ইউনূস: হ্যাঁ। কাজেই কী করতে হবে সেটা বুঝে নেওয়া, এই যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে সময় লেগেছে। একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। সেখানে শৃঙ্খলা আনা, শান্তি ফেরানো, আইনশৃঙ্খলা ফেরানো, ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করা, ব্যাংকিং সিস্টেম চালু করা—যেখানেই যাচ্ছি সব লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে আছে। কোনো ইনস্টিটিউশন ফাংশন করছে না। আমাদের সম্পদ ফরেন এক্সচেঞ্জ, সেটাও তলানিতে পড়ে গেছে। বিদেশে আমাদের ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্যও নেই। এমন অবস্থার মধ্যে আমরা এসেছি। এক দিকে অর্থনীতি টালমাটাল, অন্য দিকে সামাজিক অস্থিরতা যে কী হবে! সেখান থেকে আস্তে আস্তে সুস্থির হতে সময় লেগেছে।

ডেইলি স্টার: ১০০ দিনে কত দূর এগোতে পারলেন?

ড. ইউনূস: ১০০ দিনে আমরা অনেক দূর এসেছি—এই লণ্ডভণ্ড অর্থনীতি একটি নিয়মনীতির মধ্যে এনেছি; ধসে পড়া ব্যাংকিংখাত একটি লাইনে এনেছি এবং কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। এই ১০০ দিনের মধ্যেও কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি, ভবিষ্যতেও আশা করি হবে না।

ডেইলি স্টার: কোনো অসম্পূর্ণতা আছে?

ড. ইউনূস: অসম্পূর্ণতা হচ্ছে শান্তি-শৃঙ্খলা। সারা দেশে আন্দোলন চলছে। মানুষ অফুরন্ত কামনা-বাসনা নিয়ে এখানে (যমুনার সামনে) আসে। তাদের ভাষ্য, গত ১৫-১৬ বছর ধরে আমরা কিছু পাইনি, আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, এটা পাইনি, ওটা পাইনি; এগুলো আজকে দিতে হবে। যেটা ১৫-১৬ বছরে দেয়নি সেটা একদিনে আমরা কোথা থেকে দেবো? সেটা তাদের বোঝাতে কষ্ট হচ্ছে।

আপনারা বলেন, বলা বন্ধ করতে বলছি না। কিন্তু এভাবে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে এটা করবেন না। কারণ, মানুষের যন্ত্রণা হচ্ছে। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে যে আন্দোলন সেটাতে ট্রেন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। কাজেই তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছি।

আমরা কঠিনও হতে পারছি না। কারণ, আমরা একটা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এসেছি। আমরা আগের জগতে ফিরে যাব না। পুলিশ-আর্মিকে সেভাবে ব্যবহার করব না, যেভাবে আগে ব্যবহার করা হয়েছে। তাহলে আমাদের শক্তিটা কোথা থেকে আসবে—পুলিশও নেই, কেউ নেই। এ কারণে সময় লেগেছে। এর মধ্যে আনসাররা আন্দোলন শুরু করলো, চাকরির বয়স বাড়াতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয় চায়—তাদেরকে বোঝাতে হয়েছে। সবকিছু একসঙ্গে এসেছে। সবাইকে বোঝানো যে এগুলো হবে; কোনোটা করে ফেলা হচ্ছে, কোনো ক্ষেত্রে আশ্বাস দিয়ে রেখে দিতে হচ্ছে। তারা আবার কদিন পরেই বলছে যে, কই হচ্ছে না তো। তাদেরকে আবার বোঝাতে হচ্ছে। হয়তো আমরা বোঝানোর ক্ষেত্রে ভালো না বলে তারা আবার ফিরে আসছে নিজেদের দাবি নিয়ে।

কথায় কথায় বলে যে আহতদের শুশ্রূষা হচ্ছে না। চিকিৎসা হবে না কেন? আমরা প্রতিজনের পেছনে সময় ব্যয় করছি, অর্থ ব্যয় করছি। তবুও পত্রিকায় লিখে দিলো যে, তাদের দেখাশোনা হচ্ছে না। আন্দোলনে আহতদের প্রতি এই সরকারের সর্বোচ্চ মনোযোগ আছে।

আমি এটাকে (সরকারের মেয়াদ) অস্পষ্ট রাখার চেষ্টা করছি কারণ, মেয়াদ বলে দিলে তখন বলবে যে তাড়াতাড়ি এটা শেষ করেন। আমরা চাচ্ছি সংস্কারটা যেন হয়। এটার জন্যই আমাদের সব চেষ্টা।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেইলি স্টার: কমিটমেন্টের অভাব নেই।

ড. ইউনূস: কাজেরও অভাব নেই, সেবারও অভাব নেই। কিন্তু একজন সাংবাদিকের কাছে বলছেন, আমার অসুখ নিরাময় হচ্ছে না। যে রোগ নিরাময় হতে যে সময় লাগবে, সেটা তো আর ম্যাজিক দিয়ে হবে না। তাকেও আমি দোষ দিচ্ছি না। কারণ, সে ভাবছে আমি আর কতদিন এভাবে পরে থাকব। অনেককে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এক দেশে পাঠানোর পরে বলেছে, আরও অন্য দেশে যেতে হবে, সেখানে আরও ভালো চিকিৎসা আছে।

ডেইলি স্টার: এখানে সম্ভবত কমিউনিকেশনের গ্যাপ আছে।

ড. ইউনূস: কমিউনিকেশনের গ্যাপ আছে এবং সেটা আমরা পূরণের চেষ্টা করি। পুরোপুরি সার্থক হয়েছি বলব না। আমরা চেষ্টা করি আমাদের কমিউনিকেশনের মাধ্যমে এটা প্রচার করার জন্য। আমাদের ওয়েবসাইট আছে। অনেকে ওয়েবসাইটে যাওয়ারও চেষ্টা করে না। ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করলাম; তারা জানালেন যে, সবসময় দেখছেন। সারা দিনে একবার দেখলে তারা হয়তো মনে করছে দুইবার দেখা দরকার। মানসিকভাবে সবাই একটু অস্থির।

একটি ফাউন্ডেশন করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, লোকবল নিয়োজিত করা হয়েছে। সারা দেশের মনোযোগ তাদের প্রতি। কাজেই আমাদের মনোযোগ না দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই সরকার গঠন হয়েছে তাদের মাধ্যমেই। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের নিয়েই থাকি।

তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। সবাই এখনো পায়নি। টাকা দেওয়া যখন শুরু হয়েছে, সবাই পাবে। তাদের একদিনের দায়িত্ব নেওয়া হয়নি। আমরা বলেছি, তাদের সারা জীবনের দায়িত্ব নিয়েছি—এক বছর বা দুই বছরের না। সরকার পরিবর্তন হতে পারে, তাদের মনোভাব পরিবর্তন হতে পারে। সেজন্য আলাদা ফাউন্ডেশন করে দিয়েছি, টাকা দিয়ে দিয়েছি, যাতে কোনো সমস্যা না হয়। এমনকি ভবিষ্যতে টাকার যোগানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি, যাতে টাকার অভাব না হয়। তবুও তারা সান্ত্বনা পাচ্ছে না।

ডেইলি স্টার: আলজাজিরাকে দেওয়া আপনার সাক্ষাৎকারের পরে একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে যে, আপনার সরকারের মেয়াদ চার বছর। আবার আপনার প্রেস সচিব বলেছেন, না, এটা আপনি বলেননি। এটা কি আরেকটু স্পষ্ট করা যায়?

ড. ইউনূস: ওই সাক্ষাৎকারেও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। সেখানে বলেছি সংসদের মেয়াদ নিয়ে। সেখানে বলেছি, সংসদের মেয়াদ চার বছর হতে পারে। তখন প্রশ্ন করলো যে আপনাদের মেয়াদও কি চার বছর হবে? আমি বলেছি, এর কম হবে। এটুকুই বলেছি।

ডেইলি স্টার: তাহলে তিন বছরের বেশি, চার বছরের কম?

ড. ইউনূস: আমি তিন বছর তো বলিনি। আমি এটাকে অস্পষ্ট রাখার চেষ্টা করছি কারণ, মেয়াদ বলে দিলে তখন বলবে যে তাড়াতাড়ি এটা শেষ করেন। আমরা চাচ্ছি সংস্কারটা যেন হয়। এটার জন্যই আমাদের সব চেষ্টা।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়ায় আপনারা বলছেন, আগে সংস্কার হোক। তাহলে সংস্কারের রোডম্যাপ কী দেওয়া সম্ভব?

ড. ইউনূস: আমরা সমান্তরালভাবে দুটো রাস্তায় চলছি। সমান দৃষ্টিভঙ্গি, সমান প্রচেষ্টা দুটোর পেছনেই থাকবে। একটি সংস্কারের রাস্তা। আরেকটি হলো নির্বাচনের রাস্তা, যার সঙ্গে সংস্কারের কোনো সম্পর্ক নেই। দু-একদিনের মধ্যেই সম্ভবত নির্বাচন কমিশন ঘোষণা হয়ে যাবে। কমিশন তার মতো চলবে। সেটা তো আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে যা যা দরকার সেটা হবে।

কিন্তু কমিশনকে চলার সময় একটা বিষয় দেখতে হবে যে, এই নির্বাচন কিসের ওপর ভিত্তি করে হবে। নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটি প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত তারা সেই উত্তর পাবে না। আবার প্রতিবেদন পেলেই সেটা তারা ব্যবহার করতে পারবে না, (রাজনৈতিক) সমঝোতা হতে হবে।

ডেইলি স্টার: সংস্কার কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে ৯০ দিন। সম্প্রতি আরও পাঁচটি সংস্কার কমিটি হয়েছে।

ড. ইউনূস: প্রথম ছয়টি আসল। সেগুলো হলেই হয়ে যাবে। বাকিগুলো পরে হলেও অসুবিধা নেই।

ডেইলি স্টার: তাহলে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ প্রতিবেদন চলে আসবে। তারপরের উদ্যোগগুলো কী?

ড. ইউনূস: সমঝোতা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক হবে। সমঝোতার চেষ্টা চলতে থাকবে, কোনটা তারা চান, কোনটা চান না। আমরা কিছুই চাপিয়ে দেবো না। আমরা কাগজটা তৈরি করে দিয়েছি, আপনারা বলেন। গণমাধ্যমে সম্পাদকীয় লেখা হবে, তাদের মতামত আসবে। সুশীল সমাজের মতামত নেবো।

রাজনৈতিক দলগুলো যদি আমাদের বলে, দরকার নেই, যেভাবে আছে সেভাবেই (নির্বাচন) করে দেন, আমরা করে দেবো। এটা প্রস্তুত থাকবে। (সংস্কার) প্রস্তুতি নিতে কতদিন লাগবে সেটা সবার বিবেচনার বিষয়।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেইলি স্টার: এই প্রক্রিয়ার জন্য কতদিন সময় দিবেন?

ড. ইউনূস: যত দ্রুত সমঝোতা হবে, তত দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। সমঝোতা না হলে কী হবে? না হলে নির্বাচনের ট্রেন তো এসে যাবে। পত্রপত্রিকায় যেসব বিষয় লেখালেখি হচ্ছে—সংরক্ষিত নারী আসন কতগুলো থাকবে, কীভাবে সেটার নির্বাচন হবে—সেগুলোর সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি আমাদের বলে, দরকার নেই, যেভাবে আছে সেভাবেই (নির্বাচন) করে দেন, আমরা করে দেবো। এটা প্রস্তুত থাকবে। (সংস্কার) প্রস্তুতি নিতে কতদিন লাগবে সেটা সবার বিবেচনার বিষয়। নির্বাচনের জন্য হয়তো প্রস্তুত কেউ হলোই না। সংস্কারের আগেই সবাই যদি বলে নির্বাচন দিয়ে দেন, দিয়ে দিবো। আমরা কে এটাকে বাধা দেওয়ার! সবাই সংস্কার চেয়েছে, সেটা করতে হলে সময় দিতে হবে। সময় দিলে হবে, না দিলে নির্বাচন করে দিবো।

একটা নির্বাচন করতে কতদিন সময় লাগে? ৯০ দিন।

ডেইলি স্টার: হ্যাঁ, সংবিধানে সেটা বলা আছে।

ড. ইউনূস: সেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হয়ে যাবে।

ডেইলি স্টার: মেয়াদ নিয়ে অস্পষ্টতার জন্যই বিতর্কের শুরু। আমরা যদি সংস্কারের ধারাবাহিকতা দেখি, ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে সব প্রতিবেদন পেলেন, বা ফেব্রুয়ারিতে গেল। ফেব্রুয়ারির পরে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। এর জন্য তিন মাস বা চার মাস লাগতে পারে। তাহলে জুলাইয়ের মধ্যে ধারণা পেয়ে যাচ্ছেন যে কী পরিস্থিতি। তারপরও ২০২৫ সালের মধ্যে আরও প্রায় মাস ছয়েক সময় থাকবে। ওখানেই জনমনে একটা অস্পষ্টতা…

ড. ইউনূস: কোনো অস্পষ্টতা নেই। যে পর্যন্ত বলেছেন, ওখানেই যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে এবার নির্বাচন দিয়ে দেন, দিয়ে দেবো। আমরা নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না।

ডেইলি স্টার: সংস্কারের দায়িত্ব আপনার কাছে।

ড. ইউনূস: আমি সংস্কারের জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করছি। বলছি, একটা সুযোগ আছে, এটা আপনারা ব্যবহার করেন। আজ যদি সব রাজনৈতিক দল বলে যে সংস্কার দরকার নেই, নির্বাচন দিয়ে দেন; তাহলে আমি কে তাদের এই সংস্কার করার?

ডেইলি স্টার: বাস্তবতা হলো, বড় দল বলতে আছে বিএনপি, তারপরে জামায়েত আছে, আরও ছোট ছোট কয়েকটি দল আছে। এই দলগুলো যদি আপনাকে বলে যে সংস্কার দরকার নেই, নির্বাচন দিয়ে দেন?

ড. ইউনূস: দিয়ে দেবো।

ডেইলি স্টার: এই দলগুলোর বাইরেও অনেক জনগণ আছে। তাদের মতটা আপনি কীভাবে নেবেন?

ড. ইউনূস: এই নতুন আরেকটি প্রশ্ন এলো, আরেকটি প্যাচের মধ্যে ফেললেন আমাদের। এটারই সামাল দিতে পারছি না, আবার নতুন হিসাব। এটার জন্য আবার গণভোট লাগবে তাহলে।

ডেইলি স্টার: আপনি বলেছেন, জনগণের যে রায় সেটা অনুযায়ী কাজ করবেন।

ড. ইউনূস: জনগণ নয়, শুধু রাজনৈতিক দল। আমরা জনগণ পর্যন্ত যেতে পারব বলে মনে হয় না। আবার গণভোটে যেতে হবে। সেটা জটিল। শুধু রাজনৈতিক দলের মতামত নিচ্ছি। এটা পরিষ্কার।

ডেইলি স্টার: আলোচনায় আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে আপনার কোনো চিন্তা আছে?

ড. ইউনূস: আমরা নিজেরা এটা চাপাবো না। বিএনপি বলেছে, অবশ্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমরা ধরে নিলাম এটাই তাদের মত।

ডেইলি স্টার: অন্য রাজনৈতিক দল যদি বলে যে, না তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। তখন?

ড. ইউনূস: কোন দলটি বড়, কোনটি ছোট সেটা বিবেচনায় আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি মতামত দেয় যে আওয়ামী লীগ আলোচনায় অংশ নেবে, তাহলে সেটাই হবে। আমাদের বিশেষ কোনো মতবাদ নেই। আমরা কিছুই চাপাচ্ছি না। শুধু আয়োজনটা করে দিচ্ছি।

ডেইলি স্টার: দেশের অর্থনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন যে 'দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ'। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আপনি বলেছেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে একটা মজবুত অর্থনীতি রেখে যেতে পারবেন? কীভাবে তা সম্ভব করবেন, উদ্যোগগুলো কী কী?

ড. ইউনূস: ব্যাংকিং সিস্টেম ঠিক করছি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক করছি, ব্যবসা-বাণিজ্য-রপ্তানি ঠিক করছি—এর মাধ্যমেই সেটা হবে।

ডেইলি স্টার: দেশের অর্থনীতির জন্য বিদেশি বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি মুডি আবার আমাদের রেটিং কমিয়ে দিয়েছে। এটা বড় প্রভাব ফেলবে। তাহলে অর্থনীতিক ম্যাসেজ আরও জোরেশোরে আসা উচিত। সেখানে আপনার সরকার কী ভূমিকা রাখছে?

ড. ইউনূস: চেষ্টা করছি। আমার বক্তৃতাতেও বলেছি। সবাই আমাদের সাপোর্ট করছে। কেউ বলেনি যে এই সরকারকে মেনে নিতে পারছি না, কাজেই নির্বাচনের অপেক্ষা করব। সবাই আমাদের সমর্থন করছে এবং উৎসাহ সহকারে আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে। তারা উৎসাহ দেখাচ্ছে, টাকাও বরাদ্দ দিচ্ছে, কিন্তু এর জন্য সময় লাগবে। তাদের বলেছি, টাকা বরাদ্দ শুধু করো না, দ্রুত সেটা দাও। তাতেও তারা রাজি। কাজেই সেদিক থেকেও আশ্বাস পাচ্ছি। যাওয়ার সময় যাদের কাছে দায়িত্ব দিয়ে যাব, তাদের এটুকু দিয়ে যেতে পারব যে চুক্তি সই হয়েছে, টাকা আসছে। এটুকু অন্তত দিয়ে যেতে পারব, লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পাবে না।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনের প্রশ্নে আবার যদি ফিরে যাই, সংস্কার যত তাড়াতাড়ি হবে নির্বাচন তত তাড়াতাড়ি হবে।

ড. ইউনূস: আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে সংস্কার লাগবে না, তাহলেও তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে। আর সংস্কার লাগবে কী না, সেটাও রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে হবে। তাদেরকে বারবার বলছি, এটা তোমাদের জিনিস। আমরা শুধু ফ্যাসিলিটেটর, আমরা কোনো শাসক না। এই সময়টা কাটাচ্ছি, যাতে শান্তিতে লোকজন থাকে, জিনিসটা গুছিয়ে আনি। নির্বাচন কীভাবে হবে, কার জন্য হবে, কীভাবে হবে, সেটা ঠিক করে দেবো।

ডেইলি স্টার: পুলিশ বিগত সরকারের সময়ে আন্দোলন দমনে কঠোর ছিল। এখন তারা অনেকটা ইতস্ততর মধ্যে আছে যে কারা চাকরিতে ফিরতে পারবে, কারা পারবে না।

ড. ইউনূস: এই অংশ নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। দোষীদের হিসাব হয়ে গেছে। যারা আসার তারা কাজে নেমে গেছে, যারা না আসার তারা রয়ে গেছে, যাদের শাস্তি হওয়ার তারা সেই প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেছে। যারা আছে তারা এই নিশ্চয়তা পাচ্ছে যে তাদের আর সমস্যা হবে না। কিন্তু রাস্তায় তারা এখনো নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। এই ভয় আছে যে তাদের ওপর হামলা হতে পারে।

জনগণ এখন কতদিনে পুলিশের ওপর আস্থা আনতে পারে সেটা দেখার বিষয়। আস্তে আস্তে হয়তো ভুলে যাবে। মাঝে পুলিশের পোশাক বদলে দেওয়ার দাবি ছিল। সেটা আর বদলানো হয়নি।

ডেইলি স্টার: পুলিশের অস্বস্তি কাটাতে আরও কোনো সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া যায়?

ড. ইউনূস: আমরা চেষ্টা করছি। রদবদল করছি, উৎসাহ দিচ্ছি, প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। নতুন পুলিশ তো চট করে আনতে পারছি না। সেটার জন্য সময় লাগবে। নতুন পুলিশ নিয়োগ দেওয়া শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

ডেইলি স্টার: আপনার সরকারের একটি সমালোচনা আছে যে একটি গোষ্ঠীর চাপে আপনারা অনেক ক্ষেত্রে রাজি হয়ে যান—শিক্ষার্থীরা এলো, স্টাডি ছাড়াই চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হলো। এটাও তো সরকারের এক ধরনের অস্থিরতার পরিচয়।

ড. ইউনূস: এটা সরকারের অস্থিরতা বলব না, এটা সময়ের অস্থিরতা। সবাই এখনই পেতে চায়। বয়স ৩৫ আন্দোলনের তাদের একটা যুক্তি ছিল। সেটার জন্য একটা কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি ৩৫ করার সুপারিশ করলো। কিন্তু আমরা দেখলাম এটা ঠিক হবে না। নিজেদের মধ্যে অনেক বিতর্ক করে শেষ পর্যন্ত ৩২ দিলাম। সেটা নিয়ে আবার হৈচৈ হলো, তাদের বোঝানো হলো।

যেহেতু একসঙ্গে সব আবেদন-নিবেদন এসেছে, আমাদের কিছু মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এটা ছেড়ে চলে যেতে পারছি না। অনেক সময় একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। পরে দেখা যাচ্ছে সেটায় সমাধান হচ্ছে না। তাই সেটা আবার পুনর্বিবেচনা করতে হচ্ছে। যাতে সবাইকে শান্তভাবে সমাধান দিতে পারি।

মোদির সঙ্গে যখন কথা হয়েছে, তখন তিনি বলেছেন যে এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তাকে বলেছি এটা (সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ) সবটাই মিথ্যা কথা, প্রোপাগান্ডা। তিনি বললেন, কেন? আমি বলেছি, এটা দেখতে হলে ভারতীয় সাংবাদিকদের এখানে পাঠান।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেইলি স্টার: উপদেষ্টাদের নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব আছে বলে আলোচনা আছে। সর্বশেষ যাদের নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের কীভাবে, কোন ক্রাইটেরিয়ায় নিলেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

ড. ইউনূস: এটা প্রয়োজন অনুসারে নেওয়া হয়েছে। এর কোনো নীতিমালা নেই। এটি একটি তাৎক্ষণিক বিষয়। কোথাও হয়তো দুর্বল মনে হচ্ছে, সেখানে সবল কাউকে দেওয়া।

ডেইলি স্টার: দুর্বল যাকে মনে হলো, তাকে নিলেন কেন?

ড. ইউনূস: মনে হয়েছে পারবে। আর অল্প কয়েকদিনের ব্যাপার এটা। দীর্ঘমেয়াদে কেউ থাকছে না। তেমনটা হলে আমরা অনেক বেশি চিন্তা করতাম।

ডেইলি স্টার: কিন্তু সরকার যদি ওই আলোচনার মতো চার বছরের কম কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় থাকে?

ড. ইউনূস: এই সংকেতটা দেখতে হবে। তার মানে আমরা ওই দিকে যাচ্ছি না। এটা খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের একটা সরকার।

ডেইলি স্টার: শেখ হাসিনাকে নিয়ে এই সরকার কী ভাবছে। আপনি বলেছেন, বিচারের পরে তাকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ড. ইউনূস: বিচার হবে। বিচারের পরে তাকে ফেরত আনার যে আইনগত পদ্ধতি আছে, সেই অনুযায়ী চলা হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা সেটা করতে পারছি না।

ডেইলি স্টার: শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ায় তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবে?

ড. ইউনূস: এই সরকারের প্রধান বিষয় হচ্ছে ন্যায়বিচার। বিচার যদি তার ক্ষেত্রে ভিন্ন করে ফেলি তাহলে তো আর হলো না। পুরো আন্দোলন, অভ্যুত্থানটাই হয়েছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা যদি সেই ভুল পথেই যাই, তাহলে তো আন্দোলন সফল হলো না।

ডেইলি স্টার: একটা আলোচনা আছে যে ডেমোক্রেটদের সঙ্গে আপনার নৈকট্য বেশি, কিন্তু রিপাবলিকানদের সঙ্গে এটা নেই। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

ড. ইউনূস: আমি যতদিন আমেরিকায় ছিলাম, ততদিন ডেমোক্রেটরাই ক্ষমতায় ছিল। তাই তাদের সঙ্গে নৈকট্য বেশি। তখনকার রিপাবলিকানদের সঙ্গেও আমার কোনো অসুবিধা হয়নি। তাদের সঙ্গে সখ্যতা হয়েছে, তারা আমার সঙ্গে কাজ করেছে। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, হিলারি ক্লিনটন মাইক্রো ক্রেডিট করতে চেয়েছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। কাজেই তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মাধ্যমে আরও বহু মানুষের সঙ্গে এবং কংগ্রেস ও সিনেট সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে। বর্তমান সময়ের রিপাবলিকানদের সঙ্গে আমার ওই সম্পর্ক হয়নি কখনো। তার মানে এই নয় যে রিপাবলিকানরা আমার বিরোধী।

আমাকে মার্কিন কংগ্রেসের গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়েছে। এটা কংগ্রেসের ইনোনিমাস ডিসিশন। সেখানে সবাই ভোট দিয়েছে। আমাকে যদি কেউ অপছন্দ করতো, তাহলে তখনই বলে দিতো। একজনও সেটা বলেনি।

ডেইলি স্টার: ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?

ড. ইউনূস: তিনি দায়িত্ব নিক। আর আমাদের আ্যাম্বাসি আছে, তারা হয়তো সেটা করছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা আছেন, তারাও হয়তো করছেন। আমরা এখান থেকে এখনো কিছু করতে শুরু করিনি।

ডেইলি স্টার: ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা ট্রাম্পকে দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্যাশংন দেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ড. ইউনূস: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানরাও সেখানে আছেন। তাদের আমরা উৎসাহিত করছি বাংলাদেশ সরকারের কথা বলতে।

ডেইলি স্টার: ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা সেখানে অনেক বেশি অর্গানাইজড।

ড. ইউনূস: এখানে কিছু করার নেই। তারা অনেক আগে থেকে সেদেশে আছে। আমরা তো সেদিন গেলাম মাত্র। তাদের সঙ্গে আমাদের তুলনা হয় না। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিসহ সব দিকেই আছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সেখানে ছিলাম, বাংলাদেশিদের খুঁজে পেতে কষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের নিউজলেটার পৌঁছানোর জন্য ঠিকানা পাচ্ছিলাম না। আমার মনে আছে, পুরো নর্থ আমেরিকা জুড়ে মাত্র ৩৪২টি ঠিকানা পেয়েছিলাম। হয়তো আরও সাড়ে ৩০০ ঠিকানা খুঁজে পাইনি। কিন্তু মোট বাংলাদেশির সংখ্যা এমনই ছিল।

ডেইলি স্টার: ৭১' এর আরও কিছু অভিজ্ঞতা জানাবেন?

ড. ইউনূস: সেই সময়ে আমরা আমেরিকায় সিটিজেনস কমিটি করলাম, বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ করলাম। অ্যাম্বাসিগুলোতে গিয়ে আমাদের নতুন দেশকে স্বীকৃতি দিতে বললাম। তখন তারা বলল, নতুন দেশ হলে তোমাদের সরকার কোথায়? এটা স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই। তখনো সরকার হয়নি। সরকার গঠন না হলে আমরা সেখানে কাজ করতে পারছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে কলকাতায় কাউকে পাঠাবো এ বিষয়ে কাজ করার জন্য। যাকে পাঠালাম তিনি কয়েকদিন পরেই জানালো যে সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে। আমরা আশ্বস্ত হলাম যে শিগগির সরকার পাব এবং অ্যাম্বাসিগুলোতে গিয়ে কথা বলতে পারব।

ডেইলি স্টার: তখন তাজউদ্দীন সাহেবদের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ ছিল?

ড. ইউনূস: হ্যাঁ, যিনি কলকাতা এসেছিল তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তার মাধ্যমে আমরা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করলাম, পলিসি ঠিক করলাম, লোকজন দেশে আসতে চাইলে কি করবে সেটা ঠিক করলাম। কারণ আমরা পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। আমরা আর পাকিস্তানি নাগরিক না। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে একটি কাগজ দেওয়া হলো। সেটা নিয়েই আসতে হতো। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর দেখিয়ে ওই কাগজ দিয়ে দেশে আসতে হতো। আমি নিজেই এমন একটি কাগজ নিয়ে দেশে এসেছি। প্যারিস বিমানবন্দরে আমাকে আটকেও দিয়েছিল। প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পর আবারও তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝাতে সক্ষম হই এবং শেষ পর্যন্ত ওই ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে আমাকে আসতে ফিরতে দেয়। এমন বহু মানুষকে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

ডেইলি স্টার: আমাদের তরুণ প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। তারা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ওত বেশি অবগত নয় বলে আপনার আমার মতো তাদের অনুভূতিটা না—এটা নিয়ে কি উদ্বেগের কারণ আছে?

ড. ইউনূস: আমরা হয়তো তাদের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারিনি। অথবা আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা এতটা জগাখিচুরি করে ফেলেছি যে কেউ আর সেটা বিশ্বাস করে না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে সঠিক তথ্য আমরা মানুষকে জানাতে পারিনি।

ডেইলি স্টার: ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখছে, অর্থাৎ এই সরকারকে স্বীকৃতি তারা দিয়েছে।

ড. ইউনূস: তাদের হাইকমিশনার আমাদের সঙ্গে দেখা করে গেছেন, মোদির সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে—সবমিলিয়ে তারা স্বীকৃতি তো দিয়েছেই।

ডেইলি স্টার: ভারতীয় গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে তারা বিকৃত করে প্রচার করছে। এমনকি সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাতসহ অনেক তথ্যই বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে কোনো উদ্বেগ কি প্রকাশ করেছেন?

ড. ইউনূস: আমরা সবসময় বলে আসছি যে এগুলো প্রোপাগান্ডা, মিথ্যা। মোদির সঙ্গে যখন কথা হয়েছে, তখন তিনি বলেছেন যে এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি তাকে বলেছি এটা (সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ) সবটাই মিথ্যা কথা, প্রোপাগান্ডা। তিনি বললেন, কেন? আমি বলেছি, এটা দেখতে হলে ভারতীয় সাংবাদিকদের এখানে পাঠান। এটা তো উন্মুক্ত জায়গা, সাংবাদিকরা এসে দেখুক, কোথায় যেতে চায় যাক। বাধা দেবে না কেউ। তারপর ভারতীয় সাংবাদিকরা আসতে শুরু করলো, কিন্তু ন্যারেটিভ পরিবর্তন হলো না। এটাই আমাদের দুঃখ।

অতীতের সবকিছু থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা একটি বড় সুযোগ পেয়েছি। এবার যেন ভুল না করি।

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ডেইলি স্টার: ভারতীয় কিছু মিডিয়ায় তো হিন্দুদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ বহু বিকৃত বিশেষণ লাগিয়েছে।

ড. ইউনূস: এমনকি ট্রাম্পকে দিয়ে পর্যন্ত বলিয়েছে। এটা আমাদের অত্যন্ত দুঃখিত করেছে। আমরা বারবার বলেছি, বাংলাদেশ এবং ভারতে সম্পর্কটা গভীর বন্ধুত্বের। এসব করে এই সম্পর্ক বেশিদিন টেকানো যাবে না। আমাদের পরস্পরের ইতিহাস ও অবস্থান এমন যে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। স্বল্প সময়ের হয়তো কিছু কটুবাক্য বিনিময় করতে পারো, কিন্তু সেটা আমাদের সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করবে না। কাজেই এটা থেকে যত তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে পারি, তত ভালো।

আমাদের একটা বড় কাজের কথা শুরু থেকেই বলছিলাম, সার্ক নতুন করে উজ্জীবিত করা। সবাই খুব উৎসাহ নিয়ে সার্কে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু এখন এটা মৃতপ্রায় একটি প্রতিষ্ঠান। এটার কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে বললো, এর কারণ পাকিস্তান। আমি তাদের বললাম, তাকে পছন্দ না হলে তাকে সাসপেন্ড করে রাখো। বাকি দেশগুলো এটাতে রাজি হলে এগিয়ে যাই।

জাতিসংঘে যখন সবাই যাচ্ছি, সেখানে সার্ক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা একসঙ্গে হাতমিলিয়ে একটা ছবি তুলি। সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা লাগবে।

ভারত বলছে, আমরা বিমসটেক করছি। আমি বলেছি, বিমসটেক করছি, সার্কও তো আছে। আমরা আসিয়ানে যোগ দিতে চাই। এগুলোর সঙ্গে কোনো কনফ্লিক্ট তো নেই। আমরা অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব না এটা কেউ বলছে না। যার যার মতো করে যত সংগঠন আছে, সব জায়গায় যাবে। সার্কও এমনই একটি প্রতিষ্ঠান, এর সচিবালয় আছে নেপালে। সেখানে বসে আছে, কোনো কাজ নেই। এটাই দুঃখ লাগছে। আমরা তরুণদের বঞ্চিত করছি। সার্কের স্বপ্ন ছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো করা—পরস্পরের দেশে যাওয়া-আসা করব, ব্যবসা করব, লেখাপড়া করব। শুরুতে হয়তো সব হয়নি, কিন্তু ধাপে ধাপে হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে বরং নিচের দিকে নেমে গেছে। এটাকে উঠালে আমাদের সবার লাভ হবে।

ডেইলি স্টার: ট্রাম্পের নীতি, আমেরিকা ও চীনের বৈরী ভাব। ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশকে নিয়ে টানাটানি হতে পারে। সেটা নিয়ে আপনাদের চিন্তা কী?

ড. ইউনূস: আমি টানাটানি দেখি না। আমরা এখানে ইনফ্লুয়েন্সার হতে পারি। দুই প্রতিবেশির মধ্যে কোনো গোলমাল চলছে, আমরা থামাতে পারি। আমরা দুজনেরই বন্ধু। তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হলে থামানোর চেষ্টা করতে পারি। তাদের জন্য আমরা ছোট দেশ হতে পারি। কিন্তু এখানে বড় ভূমিকা পালনের সুযোগ আছে। আমরা কোনো অপরাধ করতে চাচ্ছি না, শান্তি চাচ্ছি। শুধু তাই না, আমরা এটা করলে তারা ভয়ও পাবে না। মনে করবে, এত ছোট একটা দেশ, মাঝে মাঝে হয়তো হাসবে। তারা তাদের কাজ করুক, কিন্তু আমরা শান্তির কথাটা বলে যাব।

ডেইলি স্টার: যেহেতু চীন ও আমেরিকার সম্পর্ক খারাপের দিকে যাওয়া ঠিক না…

ড. ইউনূস: কোনো দেশেরই অন্য কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাওয়া ঠিক না। অনেক বছর আগে আমি ডেইলি স্টারেই লিখেছিলাম, গ্রোয়িং আপ উইথ টু জায়ান্টস।

ডেইলি স্টার: ডেইলি স্টারের ১৫তম বার্ষিকীতে লিখেছিলেন।

ড. ইউনূস: আমরা তাদের অস্বীকার করছি না। এটা আমাদের একটা সুযোগ। এটা এখনো তাই। এখনো আমাদের সুযোগ আছে।

আমরা কেন দুশমন সৃষ্টি করতে যাব। আমরা কারো অনিষ্ট চাচ্ছি না।

ডেইলি স্টার: চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের মতো আছে?

ড. ইউনূস: তারা খুব উৎসাহসহ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। জাতিসংঘে গেলাম, সেখানে চীনের হেড অব দ্য স্টেট আসেনি। প্রোটকল অনুযায়ী আমি হেড অব দ্য স্টেট ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করতে পারব না। সেখানে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছে, তার সঙ্গে প্রোটকল অনুযায়ী দেখা করতে পারি না। কিন্তু তিনি দেখা করতে চান। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের দেখা হয়নি। আমরা এক জায়গায় বসেছিলাম।

সেখানে দুই রাত আলোচনা হয়েছে তার সব কর্মীসহ। পয়েন্ট বাই পয়েন্ট সব বললেন যে আমাদের সঙ্গে তাদের কী কী সম্পর্ক। দীর্ঘ বিবৃতি দিলেন, আমিও দীর্ঘ বিবৃতি দিলাম। ব্যক্তি আমার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক—আমার নামে চীনের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার আছে, কত জায়গায় গ্রামীণ মাইক্রো ক্রেডিট চালু হয়েছে, কবে আমি চীনে গিয়েছি, কার কার সঙ্গে দেখা করেছি—সব তালিকা তাদের কাছে আছে।

তাদের সবচেয়ে বড় ব্যাংক—কনস্ট্রাকশন ব্যাংক অব চায়না—মাইক্রো ক্রেডিট সম্পর্কে জানতে আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে গিয়েছিল। চীনে তারাই এখন মাইক্রো ক্রেডিট চালায়। আমার কারণে তারা গরীব মানুষের জন্য নতুন ব্যাংকিং আইন করলো। কাজেই তাদের সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক। একটা ব্যাংকের আইন তৈরি করা সহজ কথা না। আমাদের দেশে পারিনি। শুধুমাত্র গ্রামীণ ব্যাংকের আইন করতে পেরেছিলাম। কিন্তু চীনের আইন ছিল সব ব্যাংকের জন্য।

ডেইলি স্টার: চীন ও ভারতের মধ্যকার দূরত্ব আমাদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কি?

ড. ইউনূস: আমরা সবার বন্ধু। আমরা ভারতকেও চাই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে, চীনকেও চাই। কাউকেই বাদ দিচ্ছি না।

ডেইলি স্টার: সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রমাণ ও সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে ১৫০ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডেশন কার্ড বাতিল করা হলো। মুক্ত সাংবাদিকতায় এগুলো বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।

ড. ইউনূস: তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে যা হয়। এটা আমরা থামিয়েছি।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি রিভিউ করে দেখবে যে এসব মামলার কোনো ভিত্তি আছে কি না। তাদের সুপারিশের পরে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডেইলি স্টার: এর জন্য কোনো সময়সীমা দেওয়া হয়েছে?

ড. ইউনূস: না সেটা হয়নি।

ডেইলি স্টার: অ্যাক্রেডিশন কার্ড?

ড. ইউনূস: আমাকে বলা হয়েছে, অ্যাক্রেডিশন কার্ড সচিবালয়ে ঢোকার জন্য, সাংবাদিকতার জন্য না। শুধুমাত্র সচিবালয়ে অবাধ যাতায়াতের সুবিধা ছাড়া আর কিছু রদ হচ্ছে না। সে তার সাংবাদিকতা করুক। আইনগতভাবে সরকারের এই অধিকার আছে।

ডেইলি স্টার: সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা দিতে চান কি?

ড. ইউনূস: অতীতের সবকিছু থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা একটি বড় সুযোগ পেয়েছি। এবার যেন ভুল না করি। অতীতের ভুল থেকে বের হয়ে এসে সত্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা আবার নতুন করে শুরু করি। এটাই কাম্য। সেটা করতে গিয়ে যদি কোনো ভুল-ত্রুটি হয়, সেটা আমাদের ধরিয়ে দেবেন। এর জন্যই স্বাধীন সাংবাদিকতার কথা বলেছি। আপনারা ধরিয়ে দিলেই সেটা আমাদের নজরে পরবে। সব জিনিস সবসময় নজরে আসে না।

ডেইলি স্টার: আমরাও উৎসাহিত, নতুন সুযোগ দেখছি, সম্ভাবনা দেখছি।

ড. ইউনূস: সারা দেশের সব মানুষের এটাই কামনা। এটাকে স্থায়ী করার জন্য, একটা কাঠামোর মধ্যে ঢোকানোর জন্য এই সংস্কারের কথা বলছি। তা না হলে একটা নির্বাচন দিয়ে চলে গেলাম, দেখা যাবে আবার সেই পুরোনো অবস্থায় ফিরে গেল। এর থেকে যেন আমরা মুক্তি পাই।

ডেইলি স্টার: আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।

ড. ইউনূস: আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

Comments

The Daily Star  | English

Battery-run rickshaw drivers block roads, rail lines at various points in Dhaka

Dhaka's rail communication with the most part of the country remains suspended from 9:45am today

3h ago