‘প্রশাসন এখনো ফ্যাসিবাদীদের দখলে, জনগণ আরও কার্যকর পদক্ষেপ চায়’

‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক গণসংলাপে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। ছবি: স্টার

'বাংলাদেশের প্রশাসন এখনো পতিত ফ্যাসিবাদীদের দখলে' বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, 'দেশের আইনশৃঙ্খলা-পুলিশ কাজ করছে না, কেন কাজ করছে না, কারা এর পেছনে দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেন। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় বেতন নিয়ে কাজ করবে না, তা কোনোভাবে গ্রহণ করা যাবে না।'

শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'কেমন বাংলাদেশ চাই' শীর্ষক গণসংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও 'কার্যকরী পদক্ষেপ' গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সাকি বলেন, 'বাংলাদেশে আমরা দেখছি, সরকার যে ভূমিকা রাখছে তার মোটাদাগের গতিমুখকে আমরা সমর্থন করি। তারা আশু পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে চেষ্টা করছেন, দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার, পরিবর্তন, রূপান্তর, নতুন বন্দোবস্ত, তার জন্য সংস্কার কমিশনসহ অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু জনগণ আপনাদের কাছে আরও কার্যকর পদক্ষেপ চায়।'

পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'পোশাক শ্রমিকদের অনেক ন্যায্য দাবি রয়েছে। তাদের ন্যায্য দাবি সমর্থন করি। কিন্তু গার্মেন্টস খাত দীর্ঘদিন বন্ধ রাখলে এই খাত টিকবে না। কারখানা চালু রেখেই দাবির পক্ষে লড়াই করবেন। কারও ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে লড়াই ও সতর্কতা থাকবে আমাদের।'

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রস্তাব জানান এ রাজনীতিক।

তিনি বলেন, '(চব্বিশে) হাজারো শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা তা আমরা সবাই মিলে বাস্তবে রূপায়ণ করতে চাই। একাত্তরে লাখো শহীদের রক্তে যে রাষ্ট্রের ঘোষণা হয়েছিল, সেখানে নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। ৫৩ বছরে এটার কিছুই আমরা দেখিনি। সাম্য তো দূরের কথা, ন্যূনতম সুযোগের সমতাও নেই।'

'সংবিধান যে ক্ষমতা কাঠামো দিয়েছে, তাতে মসনদে যে বসে সেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। কারণ সমস্ত ক্ষমতা ওই একজন ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত। সংবিধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন ক্ষমতা দিয়েছে যার কোনো জবাবদিহিতা নেই, বরং তিনি সংবিধানের ঊর্ধ্বে। জনগণের প্রতিনিধি সরকার জনগণের অধীন থাকবে সেই ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে', যোগ করেন তিনি।

নতুন বন্দোবস্তের প্রস্তাব হিসেবে জোনায়েদ সাকি বলেন, 'আগামী দিনে নতুন যে রিপাবলিক হবে সেটি হতে হবে গণতান্ত্রিক রিপাবলিক, গণতান্ত্রিক একটি নাগরিকতন্ত্র, জনতন্ত্র কায়েম করতে হবে। ছাত্র, তরুণ, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ যারা রক্ত দিয়ে অভ্যুত্থান করেছেন এটা তাদের রায়। সুতরাং এর বাইরে কেউ যেতে পারবেন না। ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার রাষ্ট্রের একটামাত্র অঙ্গ। আরও অঙ্গ হচ্ছে- সংসদ, বিচারবিভাগ এবং এখন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে মিডিয়া বা গণমাধ্যম। এই সবগুলো অঙ্গের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকতে হবে। সরকার গঠন ও বাজেট ছাড়া সমস্ত ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে দুই কক্ষের সংসদ করতে হবে।'

আওয়ামী শাসনে ভিন্নমতের রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'পুলিশের লাঠিচার্জ, মামলা, গ্রেপ্তার আমাদের নেতাকর্মীরাও ভোগ করেছেন। বিএনপির লাখো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি।'

'আবু সাঈদ বুকের রক্ত দিয়ে ভয়ের রাজত্ব ভেঙে দিয়েছে' মন্তব্য করেন সাকি বলেন, 'আগামীর বাংলাদেশে ভয়ের রাজত্ব থাকতে পারবে না।'

গণমানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, 'নাগরিকের ধর্ম কী সেটা রাষ্ট্র দেখবে না। রাষ্ট্র দেখবে সে রাষ্ট্রের নাগরিক। এই দেশে মন্দিরে, মাজারে বা পাহাড়ে হামলা হলে কার লাভ? ফ্যাসিস্ট শক্তির লাভ হবে, যাদের পতন ঘটেছে। সম্প্রীতি ছাড়া বাংলাদেশকে রক্ষা করা যাবে না।'

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'এই দেশে ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গ পরিচয় দিয়ে কাউকে তার অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আপনার মত প্রচার করতে পারেন কিন্তু জবরদস্তি করতে পারেন না। এই বন্দোবস্তে পৌঁছাতে না পারলে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।'

আওয়ামী লীগের যারা মানুষের ওপর গুলি করেছে তাদের বিচার দাবি করে জোনায়েদ সাকি বলেন, 'তবে রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে কাউকে নিপীড়ন করা যাবে না। রাজনৈতিক চিন্তা, আদর্শের পার্থক্য আদর্শ দিয়ে মোকাবিলা করেন। এটার নামই গণতন্ত্র।'

গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, ইসলামী আন্দোলনের মহানগরের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, জেএসডির মোতালেব মাস্টার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহমুদ হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সংগঠক ফারহানা মানিক মুনা, গণসংহতির জেলা কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, মহানগরের সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব এবং কবি আরিফ বুলবুল প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Public admin reforms: Cluster system may be proposed for ministries

The Public Administration Reform Commission is likely to recommend reducing the number of ministries and divisions to 30 from 55 to improve coordination and slash the government’s operational cost.

6h ago