ক্ষমতার পালাবদলে চাঁদাবাজদের দ্বিমুখী চাপে ঢাকার ‘ময়লাওয়ালারা’

প্রতীকী ছবি

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাঁদা দিয়ে মিরপুর-১ নম্বরে ডিএসসিসির পুরো ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করতেন বেলাল হোসেন।

তবে, চলতি মাসের শুরুতে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে এই ঠিকাদার তার কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না।

সরকার পরিবর্তন হলেও চাঁদার দাবি ছাড়ছে না আওয়ামী লীগ নেতারা। পলাতক থাকা অবস্থায় ফোনে হুমকি দিয়ে তারা চাঁদা চেয়ে যাচ্ছেন বেলালের কাছে।

এদিকে, নতুন কয়েকটি গ্রুপ আবার নিজেদের বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করছেন তার কাছে।

চাঁদা দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকায় ময়লা সংগ্রহের কাজ। গত বুধবার বেলালের ৫৪ কর্মী কর্মবিরতিতে চলে যান। বসে থাকে তাদের ৪০টি ময়লার ভ্যান।

স্থানীয়রা বলছেন, দোরগোড়া থেকে ময়লা সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা খুবই ঝামেলায় পড়েছেন। বাসার ভেতরে ময়লা জমিয়ে রাখছেন।

কেউ আবার কয়েকদিনের ময়লা জমিয়ে বাসার নিচে রাস্তার পাশে রেখে দিচ্ছেন। সেখানে ময়লার স্তূপ তৈরি হচ্ছে।

গত শনিবার ও রোববার শাহ আলী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার অনেকগুলো রাস্তার পাশে ময়লা জমে আছে। দোকানের সামনেও ময়লা জমা। পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেছে।

বাসা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ বন্ধ থাকায় রাস্তায় জমা হচ্ছে ময়লার স্তূপ। ছবিটি মঙ্গলবার রাজধানীর শাহ আলী এলাকা থেকে তোলা হয়। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, বাড়ির ভেতরে ময়লা জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। মাছের ময়লা দুর্গন্ধ তৈরি করছে। বাসা থেকে অনেক দূরের ডাস্টবিনে গিয়ে ময়লা ফেলতে যেতে হচ্ছে।

বড় রাস্তার পাশে থাকা ডাস্টবিনগুলো থেকে ময়লা অবশ্য সিটি করপোরেশন গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ডাস্টবিনের বাইরের কোনো ময়লা তারা নেয় না বলে অভিযোগ তাদের।

জানতে চাইলে ঠিকাদার বেলাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক বছর আগে আমি ময়লা নেওয়ার কাজ নেই। তখন থেকেই স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে চাঁদা দিয়ে এই কাজ করে যাচ্ছিলাম।'

তিনি জানান, প্রতি ফ্ল্যাট বা ঘর থেকে মাসে ১০০ এবং দোকান থেকে ২০০ টাকা করে তিনি নিতেন। এই টাকার বেশিরভাগ অংশই চাঁদাবাজদের পকেটে যেত।

বাকি টাকার একটি অংশ ৫৪ কর্মীর বেতন এবং অবশিষ্ট টাকা দিয়ে তিনি আনুষঙ্গিক খরচ চালাতেন।

বেলাল বলেন, 'এ মাসের শুরুতে সরকার চলে গেলেও আওয়ামী লীগের লোকজন চাঁদা নেওয়া ছাড়েনি। আমি চাঁদা না দেওয়ায় তারা ফোন দিয়ে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।'

'এর মধ্যে বিএনপি, যুবদলের একাধিক গ্রুপ আমার কাছে চাঁদা চেয়ে যাচ্ছে কয়েকদিন ধরে। তারা আমাকে ডেকে হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে', বলেন তিনি।      

'এ অবস্থায় আমি কাজ বন্ধ রেখে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছি। শিক্ষার্থী এবং দুয়েকজন বিএনপি নেতার সঙ্গেও কথা বলেছি,' বলেন ঠিকাদার বেলাল। 

তাদের আশ্বাস পেয়ে গতকাল সোমবার ময়লা সংগ্রহের কাজ শুরু করেন বেলাল। কিন্তু আজ মঙ্গলবার আবার একাধিক গ্রুপ তার কাছে চাঁদা চেয়ে যাচ্ছে ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে শাহ আলী থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম কায়সার ওরফে পাপ্পু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ময়লা সংগ্রহের ঠিকাদার বেলাল আমার কাছে এসেছিলেন। চাঁদা চাওয়ার ঘটনা শুনে আমি তাকে বলেছি যে চাঁদা দেওয়ার দরকার নাই। কেউ চাঁদা চাইতে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে বা আমাদের কাছ ধরিয়ে দেন। আপনি আপনার কাজ করে যান।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU second campus: Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

5h ago