জামায়াত-শিবিরসহ অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ

জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্তসহ কয়েকটি মামলার রায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

যেহেতু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশনে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত/প্রাপ্ত নিবন্ধ বাতিল করে দিয়েছে এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়কে বহাল রেখেছেন। যেহেতু সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ-সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংগঠিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উস্কানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। যেহেতু সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ-সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। 

সেহেতু সরকার, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮ (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ-সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। এই আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করল।

এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এলেই ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।'

গত সোমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। 

২০১৩ সালে আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। সেসময় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াত। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দেন। এতে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। 

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে।

একনজরে জামায়াত-শিবির

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের উদ্দেশে গত শতকের ত্রিশের দশকে মওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ উদ্দেশে একটি সম্মেলনের ঘোষণা হয় এবং একই বছরের ২৫ আগস্ট লাহোরে জামায়াতে ইসলামীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। মওলানা মওদুদী এর আমীর নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে জামায়াতে ইসলামী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ দিল্লিতে এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান লাহোরে দলের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে। 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলায় এবং বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী সাম্প্রদায়িকতা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ হলে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। 

পরে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এরপর জামায়াতের নেতারা প্রথমে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ হিসেবে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে এবং ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজ নামে রাজনীতি পরিচালনা করে।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago