কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো, সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো, সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: বাসস

পদ্মা সেতুকে গর্বের প্রতীক উল্লেখ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন বাংলাদেশ শুনলেই মানুষ সমীহ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।

পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজের সমাপনী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত সুধী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি শুধু এটুকু বলতে চাই, এই একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে অন্তত সেই মর্যাদা দিয়েছে, আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করতো, আর ভাবখানা ছিল এরা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারে না, সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। মানুষ এখন গর্ব করে আন্তর্জাতিকভাবে বুক ফুলিয়ে চলত পারে। এটাই সব থেকে বড় পাওয়া।'

তিনি বলেন, 'আমাদের অনেক বাধা অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের জনগণের টাকায় সেতুটি নির্মাণ করেছি। যখন সবাই না করছে, আর আমি যখন বলেছি আমি করব, সে সময় দেশের জনগণ আমার সঙ্গে ছিল। আর আজকে সে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে পেরেছি, যা আমার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞ আমার দেশবাসীর কাছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'এই পদ্মা সেতুটা একটি জটিল স্ট্রাকচার। কারণ আমাজনের পরে সব থেকে খরস্রোতা হচ্ছে এই পদ্মা নদী। এই জটিল পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো নদীর পার ভেঙেছে, নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে, একে একে সব কিছু অতিক্রম করে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি।'

তিনি বলেন, 'পদ্মাপাড়ের মানুষ আমরা, সব সময় কষ্ট ভোগ করতাম, আসতে-যেতে। প্রথমে ১৯৫২ সালে দাদার সঙ্গে আমরা ঢাকায় যেতে নৌকায় পার হই এই পদ্মা। চার দিন চার রাত লেগেছিল। তখন আব্বা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) জেলে। এই যাতায়াতে কত মানুষের জীবন গেছে। মানুষ বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আজকে আর কেউ সেবা বঞ্চিত হয় না।'

পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, 'ক্ষমতা ছিল না, বিদেশে গেছি, তখন বাংলাদেশের নামটা শুনলে কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করতো, এটা কি ভারতের কোনো অংশ? জিজ্ঞেস করতো, এ দেশে তো শুধু ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। মিসকিন হিসেবে আমাদেরকে হিসাব করা হতো। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট-ব্যথার ছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন জাতির কোনো মর্যাদা থাকবে না! আমরা মাথা তুলে কথা বলতে পারব না! আমাদের আত্মমর্যাদা বোধ থাকবে না! এটা কি ধরনের বাংলাদেশ?

'ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রিতে বাধ সাধায় ২০০১ সালে সরকার গঠন করতে পারিনি। ওই সময় অনেক ভোট পেয়েছিলাম কিন্তু প্রয়োজনীয় সিট পাইনি। বাংলাদেশের সম্পদ না বেচায় যদি ক্ষমতায় না আসি, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। শেখ মুজিবের মেয়ে কখনো দেশের সম্পদ বেচে ক্ষমতায় আসে না,' বলেন তিনি।

ড. ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটা পদ। সেটা হলো একটা ব্যাংকের এমডির পদ। এ পদটা নিয়ে যত জটিলতা, যত সমস্যা। এখন ব্যাংকে যদি আইন থাকে, একজন ২০ বছর থাকতে পারবে। এরই মধ্যে তার বয়স ৭০ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত সময় (এমডি পদে) থেকে ফেলেছেন। তারপরও তিনি সেখানে থাকেন কী করে? একজন নামি-দামি নোবেল বিজয়ী সামান্য একটা এমডি পদের জন্য এত লালায়িত কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কখনো পেলাম না।'

তিনি বলেন, 'যে বড় দেশে তাকে (ড. ইউনূস) প্রমোট করে, সে দেশের রাষ্ট্রদূত তার অফিসে এসে অফিসারদের ধমকান আর বলেন, এই এমডির পদ না থাকলে এই টাকা (পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন) বন্ধ হয়ে যাবে। যে জন্য এক সময় তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলা বন্ধ করে দেন বলেও জানান। এই এমডি পদের জন্য আমার কাছে তদবির করতে হিলারি ক্লিনটন দুইবার ফোন করলেন। শেরি ব্লেয়ার ফোন করলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি আসলো, পৃথিবীর অনেকেই আসলো, আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে বলেন, এই এমডি পদে কী মধু আছে?

'হিলারি ক্লিনটনের নির্দেশে বিশ্ব ব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করানোর পরে অন্য দাতারাও অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। আমি বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দেখেছি, তাদের অনেকেরই ধারণা বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া মনে হয় এ ধরনের সেতু করা যাবে না। তবে, মালয়েশিয়া সরকার সাহায্য করতে চাইলেও দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। তারপর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করতে চাইলেও যখন একই ধরনের চাপ আসে তখন আমি বলেছিলাম, সব টাকা একবারে লাগবে না। আস্তে আস্তে করব, যখন পারব করব এবং নিজেদের টাকাতেই করব। এক সময় বিশ্ব ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীর্তির অভিযোগ কানাডার ফেডারেল কোর্টে মিথ্যা প্রমাণ হয়,' যোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

4h ago