এই সরকার ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল

সরকার প্রধানের প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ফটো

শেখ হাসিনার সরকার 'ভারতের সেবাদাস' হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের প্রশ্ন খুব পরিষ্কার, আমরা সবার আগে তিস্তার পানির ন্যায্য বণ্টন চাই এবং অভিন্ন যেসব নদী আছে প্রত্যেকটি নদীর আমরা ন্যায্য হিস্যা আমরা চাই। এটা আমাদের অধিকার, আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার। এই কথাগুলো সরকার বলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে।'

'আজ ভারতের কাছে তারা (সরকার) সেবাদাসে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু ভারত নয়, আশেপাশের সব প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে তারা আজ পুরোপুরি মাথা নিচু করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে জবাবটাও পর্যন্ত তারা দিতে পারে না। এই একটা নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদের ওপরে চেপে বসে আছে,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে 'কোনো সফলতা দেখছেন না' বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, 'আজ তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী যিনি নির্বাচিত নন তিনি ভারতে গিয়ে চুক্তি করেছেন, ১০টি চুক্তি করেছেন। চুক্তিগুলো আমরা দেখলাম যে চুক্তিগুলো বেশিরভাগ বলা হচ্ছে মোমোরেন্ডাম সই করেছেন, অনেকগুলো তারা চুক্তি করবেন, কারিগরি দল পাঠাবেন সেগুলো।

'কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো, আমরা যে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা পাচ্ছি না, সে ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্তু কী হয়েছে? তিস্তা প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করার জন্য, তাতে বিনিয়োগ করার জন্য ভারত প্রস্তাব করেছে,' বলেন মির্জা ফখরুল।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলের এই অনুষ্ঠানের হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বারবার বলছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এখানে (বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন।'

'বারবার এ কথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে এমনকি বিদেশি মিশনগুলো বারবার বলেছে। বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলেছে,' যোগ করেন তিনি।

'কিন্তু শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না,' বলেন মির্জা ফখরুল।

'পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বিস্ময়'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনারা দেখেছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধানের (আজিজ আহমেদ) দুর্নীতির কাহিনী বেরিয়েছে। আবারও কয়েকজন পুলিশের দুর্নীতি কাহিনী বেরিয়ে আসছে।'

'আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে, গত পরশু পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন থেকে একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে হুমকি দিয়ে বলেছে যে, এই সত্য (পুলিশের দুর্নীতির খবর) প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আজ সারাদেশের মানুষ জানে, সারা পৃথিবী জানে যে, পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য কীভাবে এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিত্ত-বৈভবের একটা দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়ও তাদেরকে নিতে হবে যারা এসবের সঙ্গে জড়িত।'

'আওয়ামী লীগে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে না'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই যে আওয়ামী লীগ সরকার দাবি করে নির্বাচিত সরকার, তারা কোনোমতেই নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে না। সম্পূর্ণভাবে একটা প্রহসনের নির্বাচনের তামাশা করে জোর করে শুধু রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।'

তিনি বলেন, 'তারা বাংলাদেশের মানুষের একে একে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে, মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং মানুষের যে বেঁচে থাকবার ন্যূনতম যে অধিকারগুলো সেই অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার একটা অবৈধ সরকার, তারা সমস্ত দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে।'

এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments