বিএনপি করলে ছেলেমেয়েদের চাকরি হচ্ছে না, এটা বর্ণবাদ: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি যারা করে তাদের ছেলেমেয়েদের চাকরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, দুঃসম্পর্কের আত্মীয়দের বিএনপি হিসেবে চিহ্নিত করে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এগুলো বর্ণবাদ ছাড়া কিছু নয়।

আজ বুধবার দুপুরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির  'স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটি' আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'বর্তমান বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে, বিশ্ব-প্রেক্ষিতকে সামনে নিয়ে, সামগ্রিক অবস্থাকে সামনে নিয়ে আমাদের রাজনীতি, আমাদের কৌশল আবারও সেভাবে এগিয়ে নিতে হবে, যেভাবে গত দিনগুলোতে এগিয়েছি।'

তিনি বলেন, 'সবাইকে মনে রাখতে হবে, সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা, ভোটের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য আমাদের শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলে সেই সংগ্রামকে আরও বেশি জোরদার করতে হবে।'

দেশের অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশ শুধু ফ্যাসিস্টদের কবলে পড়েনি, বাংলাদেশ বর্ণবাদীদের কবলে পড়েছে। আমাদের বিএনপি যারা করে তাদের ঘর-বাড়ি পর্যন্ত দখল করে নেওয়া হচ্ছে, তাদের জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েদের চাকরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি দুঃসম্পর্কের আত্মীয়দের বিএনপি হিসেবে চিহ্নিত করে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এগুলো বর্ণবাদ ছাড়া কিছু নয়।'

'দেশটাকে তারা ‍দুইভাগ করে ফেলেছে। এক ভাগ আওয়ামী লীগ, আরেকটা ভাগ হচ্ছে বিরোধী দল। এই অবস্থা তৈরি করে তারা দেশকে নিজেরাই সাম্প্রদায়িক একটা অবস্থা তৈরি করেছে। তারা আবার দাবি করে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের এই জেহাদ সবসময় অব্যাহত থাকবে,' বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, 'যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা নিজেরা গোষ্ঠী তৈরি করেছে, বর্ণবাদ সৃষ্টি করছে তাদের মুখে এ কথা শোভা পায় না। শুধু কথা বলে মানুষের সম্পদ লুট করে, মানুষকে সর্বস্বান্ত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না।'

তিনি বলেন, 'প্রত্যেকদিন দেখছেন কী হারে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, কীভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে যেখানে স্বেচ্ছাচারিতা, সেখানে বিভিন্ন রকমের অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়া সেখানে আর কিছু হচ্ছে না। যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।'

'যাদের যোগ্যতা নেই তাদের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমনকি প্রাইমারি স্কুলগুলোতেও সেই দলীয়করণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এক কথায় পুরো দেশকে-রাষ্ট্রকে তারা গিলে ফেলেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি,' বলেন তিনি।

'যা কিছু বাংলাদেশে শুভ কাজ হয়েছে, তা বিএনপি নেতারাই করেছেন' মন্তব্য করে তরুণ সমাজকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'চলমান আন্দোলনে এত ত্যাগের পরেও আমার কাছে মনে হয়েছে তরুণদের আরও শক্ত করে জেগে উঠতে হবে, যুবকদের জেগে উঠতে হবে। ২৮ তারিখের ঘটনার পর আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমরা তরুণদের বোধহয় সেভাবে নামাতে পারিনি।'

তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষকে জাগিয়ে তোলা এটা এখন আমাদের প্রধান কাজ। মানুষকে আবারও সংগঠিত করতে হবে, জনগণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজের অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকের বাংলাদেশ ভিন্ন বাংলাদেশ, আজকের বিশ্ব ভিন্ন বিশ্ব, আজ যে ভূ-রাজনীতি আছে এই ভূ-রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পরিচালিত। স্বার্থ স্বার্থ স্বার্থ-নিজ নিজ দেশ তাদের স্বার্থ ছাড়া কোনো কিছু ভাবে না। সেখানে মানবাধিকার, অন্য দেশের প্রতি, সার্বভৌমত্বের প্রতি যে শ্রদ্ধা-সম্মান সব কিছু ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।'

'গাজায় প্যালেস্টাইনে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে নির্বিচারে একটা গণহত্যা চলছে, অথচ তারই প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলো এখন পর্যন্ত সেভাবে কথা বলছে না, গোটা বিশ্ব সেভাবে কথা বলছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটা রেজুলেশন পাস হয়েছে গতকাল। তারপরেও গাজায় বোমা মেরেছে, প্রায় ১৫ জন হত্যা করেছে। আজ ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করেছে, সেখানে যুদ্ধ করছে প্রায় দুই বছর ধরে, সেখানে অসংখ্য লোক মারা যাচ্ছে। সারা বিশ্বের যারা বৃহৎ-ধনী দেশ তাদের একটাই লক্ষ্য, সেটা হচ্ছে তাদের স্বার্থ আদায় করা,' যোগ করেন তিনি।

সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ''আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অধিকারও বিশ্বাস করে না। ৭২-৭৫ এ তারা একবার একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল জাতীয় সংসদের ভেতরে দাঁড়িয়ে মাত্র ১১ মিনিটে এবং এবার এরা সারাদেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে।'

তিনি বলেন, 'সারা বিশ্ব বলেছে যে, এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদের ওপরে জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন করছে। বাংলাদেশের বিরোধী দলের বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে, ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।'

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Comments

The Daily Star  | English

What if the US election ends in a Trump-Harris tie?

While not highly likely, such an outcome remains possible, tormenting Americans already perched painfully on the edge of their seats ahead of the November 5 election

2h ago