একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি, অনেক ভালো আছে: কাদের
দেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের মানুষ খেতে পাচ্ছে। একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি, অনেক ভালো আছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি বারবার জানাতো মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কী কথা হয়েছে। এবার সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে তা জানানো হয়নি। এটি নতুন ষড়যন্ত্র কি না—একজন গণমাধ্যমকর্মী জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'তারা (বিএনপি) আসলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা চায়, ওয়াশিংটনের কাছে যা চায়, সেই চাওয়াটা পাওয়া হয়নি। তারা শুনতে চেয়েছিল যে, সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসবে অথবা ভিসা নীতি প্রয়োগ; এমন একটা স্বপ্ন নিয়েই তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করতে গেছে।
'তারা তাদের (বিএনপি) কথা শুনেছেন কিন্তু যেটা তারা বলে গেছেন সেটা হচ্ছে, এর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠির বক্তব্য যুক্ত করতে চাই। এই দুটি মেলালে যেটা আসে, সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের অঙ্গীকার তারা ব্যক্ত করেছেন এবং শেষ কথা তারা যা বলে গেলেন, তাতে তো বিএনপির আশাবাদী হওয়ার কিছু নেই। সরকারের পতন, সরকারের ব্যর্থতা, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা—এসব বিষয়ে তারা কিছু খুঁজে পায়নি মার্কিন প্রতিনিধি দলের বক্তব্য থেকে। সে কারণে চুপ করে থাকার কৌশলটা বেছে নিয়েছে,' বলেন তিনি।
দেশের ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে; গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগুণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। চলতি অর্থবছরে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এটা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বা চাপে আছে কি না জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের কাদের বলেন, 'ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এটা বিশ্ব সংকটের প্রতিক্রিয়া। সারা দুনিয়াতেই এখন অর্থ সংকট প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময় ঋণ আগের তুলনায় বাড়তে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের এ যাবত ঋণ খেলাপি হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। আমরা সে ব্যবস্থা করছি, আমরা ঋণ খেলাপি থাকব না। অন্তত এটুকু বলতে পারি।'
বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'রোজার মাসটা আসতে দেন!'
তিনি বলেন, 'এখন টেলিভিশন সবাই দেখে, সারা বিশ্বের সব খবর নিয়ে গ্রামের চায়ের দোকানে রীতিমত গবেষণা হয়। মানুষ বোঝে, এখানে সরকারের দোষ নেই। অর্থের যে সংকট। বিশ্বে যে সংকট দ্রব্যমূল্য নিয়ে, সেটা তো বাংলাদেশের একার না। সারা দুনিয়াতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
'তবে আমাদের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা এখনো আছে। আমরা আশা করি, সামনের রমজানেও জিনিসপত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে এবং মানুষ পাবে,' যোগ করেন তিনি।
গরুর মাংসের কেজি বেড়ে ৮০০ টাকা হয়ে গেছে। গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, পথেঘাটে চাঁদাবাজির কারণে তারা বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। ভোক্তা অধিকার বলছে, আমরা এই বিষয়টা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ অসহায়। বিশ্ব সংকটের পাশাপাশি চাঁদাবাজির কারণেও বাড়ছে—এ ব্যাপারে কাদের বলেন, 'চাঁদাবাজি একটা বিষয় অবশ্যই। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠিন বক্তব্য রেখেছেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'একটা বিষয় শুরু হলে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে এমন তো ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলার পর সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। এখানে যার যে দায়িত্ব আছে পালন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই কিন্তু তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে।
'দ্রব্যমূল্য একটা বিষয়। অর্থনীতিতে যখন সংকট তখন বাজার ওঠানামা করে। ওঠানামা করে এটাই স্বাভাবিক, এটা বাজারের ধর্ম। অপেক্ষা করেন, আপনাদের তো না খেয়ে (খাইয়ে) রাখিনি! দেশের মানুষ খেতে পাচ্ছে। একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি, অনেক ভালো আছে,' যোগ করেন তিনি।
Comments