পরবর্তী আন্দোলন না, বিএনপির পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত: কাদের
নির্বাচনই রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে আন্দোলনের কথা না ভেবে পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'জনগণের সরকার ক্ষমতায় থাকলে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের ইস্যু খুঁজে পাওয়া মোটেই যে সম্ভব নয়, এটা বিএনপির হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া উচিত অভিজ্ঞতা থেকে।'
আজ শুক্রবার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, জেলা আওয়ামী লীগ এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
দেশে দেশে গণতন্ত্র চ্যালেঞ্জের মুখে মন্তব্য করে কাদের বলেন, 'গণতন্ত্রের প্রবক্তা, মানবাধিকারের প্রবক্তা বলে দাবি করেন, সেই যুক্তরাষ্ট্রও চ্যালেঞ্জের মুখে। সারা বিশ্ব আজকে প্রতিকূল স্রোতে সাঁতার কাটছে। জাপানের মতো দেশ, যুক্তরাজ্যের মতো দেশ অর্থনৈতিক মন্দার কবলে। এটা শুনতে যতই অবাক লাগুক, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
এ বছর অনেকগুলো নির্বাচন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পাকিস্তানে একটা নির্বাচন হয়ে গেছে। এখনো সরকার গঠন হয়নি, টানাপড়েনের মধ্যে সরকার গঠন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। নির্বাচন করেছেন, এত কঠিন বাধার মুখে, ষড়যন্ত্রের মুখে। সেই নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ, সরকার গঠন এবং আমাদের পার্লামেন্টের আরেকটি অপরিহার্য অংশ; সংরক্ষিত মহিলা আসন, সেখানেও যে দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে। আমরা আশা করি, যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, ১৮ তারিখ তারা মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন।
এবার যারা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চেয়েছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নির্যাতিত এবং পরীক্ষিত নেতাকর্মী। মনোনয়ন বঞ্চিতদের পরবর্তীতে মূল্যায়নের সুযোগ কাজে লাগানো হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'রাজনীতিতে হতাশা-নিরাশার কোনো স্থান নেই। রাজনীতি কমিটমেন্টের ব্যাপার। কমিটমেন্ট নিয়ে এখানে লেগে থাকতে হয়। ঘাত-প্রতিঘাত, জেল-জুলুম রাজনীতির অংশ।'
আগামী রমজানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জোর দেবে বলে এ সময় জানান তিনি।
কাদের বলেন, 'বিএনপি নেতারা কে কী বললো সেটা নিয়ে আমাদের অত মাথাব্যথা নেই। আমরা এ দেশের ইতিহাসের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। এ দেশে ঊনসত্তরের পর সত্যি কথা বলতে, ইস্যুভিত্তিক কোনো আন্দোলন-গণআন্দোলন গড়ে ওঠেনি। নব্বইয়ের আন্দোলনকে আমরা আন্দোলন বলি; এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল কিন্তু সরকার দুর্বল বলেই সেই আন্দোলনের আঘাত সইতে পারেনি। সেটা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছে সেটা বলা ঠিক হবে না।
'এখন যেসব আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে এবং তারা এখনো বলছে, বিজয় না পাওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন করবে। ফখরুল সাহেব জেল থেকে বের হয়ে আবারও দিবাস্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনের স্বপ্ন দেখছেন। একটা কথা মনে রাখবেন, জনগণের সরকার ক্ষমতায় থাকলে আন্দোলনের বস্তুগত পরিস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায় না,' যোগ করেন তিনি।
কাদের আরও বলেন, 'জনগণের সরকার ক্ষমতায় থাকলে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের ইস্যু খুঁজে পাওয়া মোটেই যে সম্ভব নয়, এটা বিএনপির হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া উচিত অভিজ্ঞতা থেকে। আমরা সবাইকে বলবো, রাজনৈতিকভাবে আমরা যে সমস্যার মুখোমুখি হই, সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু একটা নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনমতের প্রতিফল ঘটবে। জনমত যদি বিরোধী দলের পক্ষে প্রবল হয়, নির্বাচনে তার প্রতিফলন ঘটবে। এটাই আমাদের দেশের বাস্তবতা।'
বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'পরবর্তী আন্দোলনের কথা না ভেবে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে শুরু করেন। সেটাই হবে আপনাদের জন্য শুভ।'
বাংলাদেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের অনেক প্রতিকূলতা আছে সামনে। আমাদের পথ পুষ্প বিছানো—এটা আমি কখনো মনে করি না। আমাদের পথ কণ্টকাকীর্ণ। কাঁটা সরিয়ে সরিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারণ সারা বিশ্বে অনেক সংকট, আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, এটা আমাদের শত্রুতার জন্য অনেকের উর্বর ক্ষেত্র। এই উর্বর ক্ষেত্রটি কব্জা করার জন্য আমাদের বঙ্গোপসাগর, আমাদের সেন্টমার্টিন, এসবের প্রতি লোভাতুর দৃষ্টি বিশ্ব রাজনীতির অনেক বাজপাখিরই রয়েছে। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
'শেখ হাসিনা আছেন বলেই আজকে একটা ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি তিনি সাফল্যের দিকে নিয়ে গেছেন,' যোগ করেন তিনি।
একজন গণমাধ্যমকর্মী দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, বিএনপি আন্দোলন করবে এবং তাদের আন্দোলন আরও গতি পাবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'এগুলো মনের সুখ, দিবাস্বপ্ন। এগুলো বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে না।'
Comments