৩৬৫ কোটি টাকার নতুন গাড়ি ডিসি-ইউএনওদের নির্বাচনী ঘুষ: মির্জা ফখরুল
সরকার ডিসি-ইউএনওদের নির্বাচনী ঘুষ হিসেবে ৩৬৫ কোটি টাকার নতুন গাড়ি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন 'সোনালী দল' আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, 'আজ সবাইকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। এই কথায় যদি আমরা সবাই বিশ্বাস করি তাহলে আসুন আগামী যে কয়েকটা দিন আছে, এখন কিন্তু মাসও নাই, সেই দিনগুলোকে বুকের মধ্যে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামি।'
'এই সরকারকে সরাতে না পারলে জাতির অস্তিত্ব থাকবে না, স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকবে না' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মারছে তো মারছেই। এই ১৫ বছরে আমাদের হাজার হাজার লোককে মেরে ফেলেছে, গুম করেছে, আমাদের ৫০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। গতকালও ঢাকা মহানগরীতে ৭৭ জনকে অ্যারেস্ট করেছে। কোনো কথা নাই, নামটা ঢুকিয়ে দিলে হয়ে গেল। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খাদ্যদ্রব্য বলেন, মানুষের জীবনের মূল্য বলেন, এই সরকারকে সরাতে না পারলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না।'
সরকার পতন আন্দোলনে সফল হওয়ার আশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামি। আপনাদের আশা জোগাবে, সাহস জোগাবে যে দেশের সব মানুষ এক হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়েছে। বাম-ডান সবাই একটা কথা বলছে, এই সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।'
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'শেষবারের মতো বলতে চাই দয়া করে পদত্যাগ করুন, শান্তিতে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যান। দেশের মানুষকে বাঁচতে দেন।'
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'নির্বাচন কমিশন একটা বানিয়েছে। এর কোনোকিছু ঠিক নেই। তারাও বলছে যে, যদি পরিবেশ অনুকূল হয়, তার মানে পরিবেশ অনুকূল নয়। এখনো পরিবেশ অনকূল হয়নি।'
তিনি বলেন, 'দেশের অবস্থাটা এমন হয়েছে, সাধারণ মানুষ ডিম কিনতে পারছে না, লাউ কিনতে পারছে না, শাকসবজি কিনতে পারছে না। কিন্তু নির্বাচনে ঘুষ দেওয়ার জন্য ডিসি-ইউএনওদের জন্য ৩৬৫ কোটি টাকার নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে আলাদা করে।'
'শোনা যাচ্ছে ইতোমধ্যে ডিসি-এসপিদের যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, তাদের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে। গত ১৫ বছরে ওরা যে লুট করেছে, দুর্নীতি করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। প্রতিটি পয়সা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে আমাদের পকেট থেকে নিয়েছে, ভ্যাট-ইনকাম ট্যাক্স মিলে নিয়েছে। যে ঋণ করেছে সেই ঋণের ভার আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে,' বলেন মির্জা ফখরুল।
'এর বিকল্প একটাই। এই সরকারকে সরাতে হবে। এটা আমার আপনার জন্য নয়, দেশকে বাঁচানোর জন্য,' যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'ভোট দেওয়ার অধিকার চলে গেছে। বিচার পাওয়ার অধিকারও নাই। সবাই জড়িত হয়ে গেছে এই লুটপাট-দুর্নীতির সঙ্গে। সরকার দেশে মগের মল্লুক তৈরি করেছে। সেই মগের মুল্লুক থেকে এরা বের হতে চায় না।'
তিনি বলেন, 'এখন তারা নতুন সুর শুরু করেছেন। কাল শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। বিএনপি সন্ত্রাসী দল হলে আপনারা কী? আপনারা সন্ত্রাসের বাবা। আপনারা এই রাষ্ট্রটাকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি সন্ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন।'
'আমরা পরিষ্কার করে বলেছি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে আছি। কারণ আমাদের তো উপায় নেই, আমরা খালি হাতে। আমাদের হাতে তো বন্দুক-পিস্তল নেই যে, আপনাকে ভয় দেখাব, গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসব, আপনাকে ডিবিতে নিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করব,' যোগ করেন তিনি।
'আমাদের একটাই ক্ষমতা মানুষকে সংগঠিত করার' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই অবস্থা থেকে বের হতে চাইলে, মুক্তি পেতে চাইলে অন্য কোনো উপায় নেই। রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা কী করছে, তারপরে যাবেন…সেটা হবে না। আপনাকেও রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে, সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।'
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজ খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে এটা নজিরবিহীন। পৃথিবীর সব দেশে কিছু কিছু বেড়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে বেড়েছে অবিশ্বাস্য নজিরবিহীনভাবে। এর কারণ জবাবদিহিহীন সরকার। যাকে কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। তার ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করতে পারছে। তাদের ব্যর্থ পরিচালনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, যেখানে মানুষের নাভিশ্বাসও নেই এখন। এখন মৃত্যুবরণ করার অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আমরা যখন বাজার যাই তখন টের পাই কী ভয়াবহ অবস্থা।'
সংগঠনের সভাপতি গোলাম হাফিজ কেনেডীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ।
Comments