সর্বজনীন পেনশন স্কিম

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

চালু হলো সর্বজনীন পেনশন স্কিম।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকের দিনটি আমাদের অনন্য সাধারণ দিন। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আজ আমরা আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা, সেখানে তৃণমূলের মানুষ; অবহেলিত মানুষকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি।'

'আমাদের সরকারি অফিসাররা পেনশন পায়। তাদের অবসর জীবন-যাপনে তাদের একটা সুরক্ষা আছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ যখন কর্মক্ষমতা হারায় তখন তো তাদের আর কোনো সুযোগ থাকে না। যদিও আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা—বিভিন্ন ভাতা দেওয়া আমরা চালু করি এই কারণে যে, অন্তত একজন বয়োবৃদ্ধ যেন তার বাড়িতে স্থান পায়। তার হাতে যেন কিছু টাকা থাকে, তিনি যেটা খরচ করতে পারেন। সংসার বা পরিবারের কাছে তার একটা মূল্য থাকে,' বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আমি মনে করি, এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম যখন চালু হবে তখন আর তাদের ভাতার ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। তার নিজেরও একটা আয় হবে। সেটাই বড় কথা।'

'আমাদের অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আসতে হয়েছে। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত অনেক কাজ আমরা করেছিলাম যেগুলো ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে একে একে ধ্বংস করেছিল,' যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের জন্য অনেক আগেই পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'অনেক আগে, আমি বাংলাদেশে আসার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ আওয়ামী লীগের নেতারা সব সময় খুব নির্যাতিত হয়েছে। সব সময় তাদের ওপর কারাযন্ত্রণা, তাদের ছেলে-মেয়েরা কষ্ট ভোগ করেছে, তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, মেরে ফেলা, গুম করে ফেলা। এই অবস্থা থেকে আমাদের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে তার মাধ্যমে এ ধরনের একটি পেনশন ব্যবস্থা আমরা কিন্তু প্রবর্তন করি।'

'কিন্তু সেটা আমরা চালু রাখতে পারিনি। কারণ এর পরে মার্শাল ল' হয়। সব অ্যাকাউন্ট সিজ হয়ে যায়। আমাদের সব নেতাকর্মী জেলে যায়। নানা রকম কারণে সেটা আর আমরা বাস্তবায়ন সঠিকভাবে করতে পারিনি। এই চিন্তাটা আমাদের মাথার মধ্যে সব সময় ছিল, সেটা ছিল শুধু আমাদের পার্টির জন্য। পরবর্তীতে যখন আমরা ৯৬ সালে সরকার আসলাম তখন থেকে চিন্তা করতাম, সর্বজনীনভাবে মানুষের জন্য কী করা যেতে পারে,' বলেন শেখ হাসিনা।

ইতোমধ্যে পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মোট ৬টি স্কিমের মধ্যে আমরা আজকে ৪টি চালু করছি।'

বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'একদিকে কোভিড-১৯ এর অতিমারি, তারপর ইউক্রেনের যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন; সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, এর ওপর আবার আমাদের কিছু সেই মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে তৈরি করা দলের অগ্নি সন্ত্রাস, মানুষ খুন, রাস্তা নষ্ট করে দেওয়া, ঘর-বাড়ি পোড়ানো, ৫০০ স্কুল পোড়ানো, এই জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাস, হরতাল-অবরোধ, অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে আমাদের পার হতে হয়েছে। যেহেতু জনগণ আমাদের পাশে আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিমারি, তার ওপর আবার মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সব মোকাবিলা করেই কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।'

পেনশন স্কিম চালুর সংশ্লিষ্টদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, তিনি অর্থ সচিব থাকতেই বারবার আমি চাপ দিচ্ছিলাম যে, এটা একটু তাড়াতাড়ি করা দরকার। কারণ আমাদের তো সামনে ইলেকশন, এর পরে যদি আমরা আসি ভালো, আর না হলে এ দেশের মানুষের কথা আর কেউ এভাবে চিন্তা করবে বলে আমার মনে হয় না। সে জন্য আমরা চাচ্ছিলাম এটা দ্রুত চালু করে দিতে। যেন অন্তত মানুষের জীবনটা অর্থবহ হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

No sharp rise in crime, data shows stability: govt

The interim government today said that available data does not fully support claims of a sharp rise in crimes across Bangladesh this year

2h ago